ঢাকা ০৫:৩৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪
সংবাদ শিরোনাম ::

নারী মাদকসেবীদের চিকিৎসায় আহ্ছানিয়া মিশনের ১০ বছর

গণমুক্তি রিপোর্ট
  • আপডেট সময় : ০৫:৫৫:৪০ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪ ১৫৩ বার পড়া হয়েছে
দৈনিক গনমুক্তি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

 

নারী মাদকাক্তির সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বাড়লেও চিকিৎসা অপ্রতুল। বরং সামাজিকভাবে কোন মাদকাসিক্তদের নারীদের ঘৃণার চোখে দেখা হতো। এক্ষেত্রে দু’বাহু বাড়িয়ে দেয় আহ্ছানিয়া মিশন। মানবসেবার অঙ্গিকার নিয়ে পথচলার শুরু থেকেই এই প্রতিষ্ঠান সমাজের পিছিয়ে পড়া মানুষদের জন্য কাজ করে আসছে। সরকারের বাইরে প্রথম ক্যান্সার হাসপাতাল প্রতিষ্ঠারও নজির গড়ে আহ্ছানিয়া মিশন।

এরই মধ্যে নারী মাদকাসক্তির চিকিৎসা ও পুনর্বাসন কেন্দ্রের ১০ বছর পেরুলো। ২০১৪ সালের এপ্রিল মাসে নারী মাদকাক্তিদের চিকিৎসায় একমাত্র পূর্নাঙ্গ চিকিৎসা কেন্দ্র চালু করে আহ্ছানিয়া মিশন। শুরু থেকে এই চিকিৎসা কেন্দ্র নারীদের মাদকনির্ভরশীলতা, মানসিক ও আচরনগত সমস্যার চিকিৎসা প্রদান করে আসছে। বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে প্রতিষ্ঠানটি মাদকনির্ভরশীলতা ও মানসিক সমস্যাগ্রস্থ নারীদের জন্য ১০ বছর যাবৎ সাফল্যের সাথে বিজ্ঞান ও প্রমাণভিত্তিক চিকিৎসা প্রদান করে চলেছে।

আহ্ছানিয়া মিশন নারী মাদকাসক্তি চিকিৎসা ও পুনর্বাসন কেন্দ্রের সাফল্যের ১০ বছর পূর্তি উপলক্ষে সোমবার (২৯ এপ্রিল) বেলা ১১ টায় ঢাকার শ্যামলীতে সংস্থার স্বাস্থ্য সেক্টর কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন সবিস্তারে কেন্দ্রের নানা কর্মকান্ড তুলে ধরা হয়। এ সময় ইকবাল মাসুদ বলেন, নারী মাদকনির্ভরশীলদের চিকিৎসা প্রক্রিয়াটি পুরুষের তুলনায় বেশ জটিল ও সময় সাপেক্ষ। নারী মাদকনির্ভরশীলদের চিকিৎসা ও প্রতিরোধের দিকে বিশেষ নজর দেয়া উচিত।

এক্ষেত্রে অবিভাবক ও নীতিনির্ধারকদের বিশেষ ভূমিকা পালন করতে হবে। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের একমাত্র সম্পূর্ণ নারী কর্মীদ্বারা পরচিালিত চিকিৎসা কেন্দ্র যা রোগীদের নিরাপত্তাসহ চিকিৎসা নিশ্চিতে নিরলস চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এখানে মাদকাসক্তি নারীর দক্ষতা বৃদ্ধি ও পুনর্বাসনের জন্য ভোকেশনাল কোর্স ও উদ্যেক্তা কোর্স প্রদান করা হয়।

ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন স্বাস্থ্য ও ওয়াশ সেক্টরের পরিচালক ইকবাল মাসুদের সভাপতিত্বে উক্ত সংবাদ সম্মেলনে চিকিৎসা কেন্দ্রটির মূল প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন কাউন্সিলর জান্নাতুল ফেরদৌস মজুমদার। প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৪ সাল থেকে এখনও পর্যন্ত মোট ৭৬২ জন নারী চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করেছে। চিকিৎসা সেবা গ্রহণকারী নারীদের মধ্যে একই সাথে একাধিক মাদক গ্রহণকারীসহ ৩৯%, ইয়াবা গ্রহণকারী, ৩৯% গাঁজার পাশাপাশি ঘুমের ওষুধ, মদ, শিরায় মাদক গ্রহণকারী ও অন্যন্য মাদক গ্রহনকারী রয়েছে।

আহ্ছানিয়া মিশন নারী মাদকাসক্তি চিকিৎসা ও পুনর্বাসন কেন্দ্রের গত বছরের (৩৩% ইয়াবা গ্রহণকারী, ২৮% গাঁজা, ১৬% ঘুমের ওষুধ) তথ্যের তুলনায় যেটা বৃদ্ধি পেয়েছে। মানসিক রোগের মধ্যে সিজোফ্রিনিয়া ৩৫%, মুড ডিজ্অর্ডার ২৬%, বাইপোলার ১২%, ডিপ্রেশন ১০%, ওসিডি ৬% বাকিরা অন্যান্য মানসিক রোগে আক্রান্ত ছিল।

৭৬২ জন নারীর মধ্যে মাদকনির্ভরশীলতা জনিত সমস্যার জন্য ৪৬৩ জনের ও মানসিক সমস্যার জন্য ২৯৯ জনের চিকিৎসা প্রদান করা হয়েছে। বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত যাচাই করে দেখা গেছে, ৭৬২ জন রোগীর মধ্যে ৭০% চিকিৎসার মেয়াদ পূর্ন করেছে। মেয়াদ পূর্ণ না করে চলে গেছে ২২% এবং বিভিন্ন কারনে ৪% রোগীকে রেফার করা হয়েছে। বর্তমানে চিকিৎসা কেন্দ্রটিতে ৪% রোগী চিকিৎসাসেবা গ্রহণ করছে।

২০১৪ সালের ১২ এপ্রিল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী (তৎকালীন প্রতিমন্ত্রী) আসাদুজ্জামান খান এমপি আহ্ছানিয়া মিশন নারী মাদকাসক্তি চিকিৎসা ও পুনর্বাসন কেন্দ্রের শুভ উদ্বোধন করেন। বাংলাদেশের একমাত্র লাইসেন্সপ্রাপ্ত নারী মাদকাসক্তি চিকিৎসা ও পুনর্বাসন কেন্দ্রটি সর্ম্পূণ নারী কর্মী দিয়ে পরিচালিত। চিকিৎসা কেন্দ্রটি সকল আধুনিক সুযোগসুবিধার পাশাপাশি শীতাতাপ নিয়ন্ত্রিত। এটি মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর থেকে ২০২৩ সালে দেশ সেরা চিকিৎসা কেন্দ্র হিসেবে পুরষ্কার অর্জন করে। সংবাদ সম্মেলনে প্রতিষ্ঠানটির সিনিয়র সাইক্লোজিস্ট রাখী গাঙ্গুলীর সঞ্চালনায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন কেন্দ্র ব্যবস্থাপক ফারজানা ফেরদৌস।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

নারী মাদকসেবীদের চিকিৎসায় আহ্ছানিয়া মিশনের ১০ বছর

আপডেট সময় : ০৫:৫৫:৪০ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪

 

নারী মাদকাক্তির সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বাড়লেও চিকিৎসা অপ্রতুল। বরং সামাজিকভাবে কোন মাদকাসিক্তদের নারীদের ঘৃণার চোখে দেখা হতো। এক্ষেত্রে দু’বাহু বাড়িয়ে দেয় আহ্ছানিয়া মিশন। মানবসেবার অঙ্গিকার নিয়ে পথচলার শুরু থেকেই এই প্রতিষ্ঠান সমাজের পিছিয়ে পড়া মানুষদের জন্য কাজ করে আসছে। সরকারের বাইরে প্রথম ক্যান্সার হাসপাতাল প্রতিষ্ঠারও নজির গড়ে আহ্ছানিয়া মিশন।

এরই মধ্যে নারী মাদকাসক্তির চিকিৎসা ও পুনর্বাসন কেন্দ্রের ১০ বছর পেরুলো। ২০১৪ সালের এপ্রিল মাসে নারী মাদকাক্তিদের চিকিৎসায় একমাত্র পূর্নাঙ্গ চিকিৎসা কেন্দ্র চালু করে আহ্ছানিয়া মিশন। শুরু থেকে এই চিকিৎসা কেন্দ্র নারীদের মাদকনির্ভরশীলতা, মানসিক ও আচরনগত সমস্যার চিকিৎসা প্রদান করে আসছে। বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে প্রতিষ্ঠানটি মাদকনির্ভরশীলতা ও মানসিক সমস্যাগ্রস্থ নারীদের জন্য ১০ বছর যাবৎ সাফল্যের সাথে বিজ্ঞান ও প্রমাণভিত্তিক চিকিৎসা প্রদান করে চলেছে।

আহ্ছানিয়া মিশন নারী মাদকাসক্তি চিকিৎসা ও পুনর্বাসন কেন্দ্রের সাফল্যের ১০ বছর পূর্তি উপলক্ষে সোমবার (২৯ এপ্রিল) বেলা ১১ টায় ঢাকার শ্যামলীতে সংস্থার স্বাস্থ্য সেক্টর কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন সবিস্তারে কেন্দ্রের নানা কর্মকান্ড তুলে ধরা হয়। এ সময় ইকবাল মাসুদ বলেন, নারী মাদকনির্ভরশীলদের চিকিৎসা প্রক্রিয়াটি পুরুষের তুলনায় বেশ জটিল ও সময় সাপেক্ষ। নারী মাদকনির্ভরশীলদের চিকিৎসা ও প্রতিরোধের দিকে বিশেষ নজর দেয়া উচিত।

এক্ষেত্রে অবিভাবক ও নীতিনির্ধারকদের বিশেষ ভূমিকা পালন করতে হবে। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের একমাত্র সম্পূর্ণ নারী কর্মীদ্বারা পরচিালিত চিকিৎসা কেন্দ্র যা রোগীদের নিরাপত্তাসহ চিকিৎসা নিশ্চিতে নিরলস চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এখানে মাদকাসক্তি নারীর দক্ষতা বৃদ্ধি ও পুনর্বাসনের জন্য ভোকেশনাল কোর্স ও উদ্যেক্তা কোর্স প্রদান করা হয়।

ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন স্বাস্থ্য ও ওয়াশ সেক্টরের পরিচালক ইকবাল মাসুদের সভাপতিত্বে উক্ত সংবাদ সম্মেলনে চিকিৎসা কেন্দ্রটির মূল প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন কাউন্সিলর জান্নাতুল ফেরদৌস মজুমদার। প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৪ সাল থেকে এখনও পর্যন্ত মোট ৭৬২ জন নারী চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করেছে। চিকিৎসা সেবা গ্রহণকারী নারীদের মধ্যে একই সাথে একাধিক মাদক গ্রহণকারীসহ ৩৯%, ইয়াবা গ্রহণকারী, ৩৯% গাঁজার পাশাপাশি ঘুমের ওষুধ, মদ, শিরায় মাদক গ্রহণকারী ও অন্যন্য মাদক গ্রহনকারী রয়েছে।

আহ্ছানিয়া মিশন নারী মাদকাসক্তি চিকিৎসা ও পুনর্বাসন কেন্দ্রের গত বছরের (৩৩% ইয়াবা গ্রহণকারী, ২৮% গাঁজা, ১৬% ঘুমের ওষুধ) তথ্যের তুলনায় যেটা বৃদ্ধি পেয়েছে। মানসিক রোগের মধ্যে সিজোফ্রিনিয়া ৩৫%, মুড ডিজ্অর্ডার ২৬%, বাইপোলার ১২%, ডিপ্রেশন ১০%, ওসিডি ৬% বাকিরা অন্যান্য মানসিক রোগে আক্রান্ত ছিল।

৭৬২ জন নারীর মধ্যে মাদকনির্ভরশীলতা জনিত সমস্যার জন্য ৪৬৩ জনের ও মানসিক সমস্যার জন্য ২৯৯ জনের চিকিৎসা প্রদান করা হয়েছে। বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত যাচাই করে দেখা গেছে, ৭৬২ জন রোগীর মধ্যে ৭০% চিকিৎসার মেয়াদ পূর্ন করেছে। মেয়াদ পূর্ণ না করে চলে গেছে ২২% এবং বিভিন্ন কারনে ৪% রোগীকে রেফার করা হয়েছে। বর্তমানে চিকিৎসা কেন্দ্রটিতে ৪% রোগী চিকিৎসাসেবা গ্রহণ করছে।

২০১৪ সালের ১২ এপ্রিল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী (তৎকালীন প্রতিমন্ত্রী) আসাদুজ্জামান খান এমপি আহ্ছানিয়া মিশন নারী মাদকাসক্তি চিকিৎসা ও পুনর্বাসন কেন্দ্রের শুভ উদ্বোধন করেন। বাংলাদেশের একমাত্র লাইসেন্সপ্রাপ্ত নারী মাদকাসক্তি চিকিৎসা ও পুনর্বাসন কেন্দ্রটি সর্ম্পূণ নারী কর্মী দিয়ে পরিচালিত। চিকিৎসা কেন্দ্রটি সকল আধুনিক সুযোগসুবিধার পাশাপাশি শীতাতাপ নিয়ন্ত্রিত। এটি মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর থেকে ২০২৩ সালে দেশ সেরা চিকিৎসা কেন্দ্র হিসেবে পুরষ্কার অর্জন করে। সংবাদ সম্মেলনে প্রতিষ্ঠানটির সিনিয়র সাইক্লোজিস্ট রাখী গাঙ্গুলীর সঞ্চালনায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন কেন্দ্র ব্যবস্থাপক ফারজানা ফেরদৌস।