নিমতলীতে অগ্নিকান্ডের ১৫ বছর ঈদেও খোঁজ নেই তিন কন্যার

- আপডেট সময় : ১১:০৫:৫৪ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৭ জুন ২০২৫ ১২০ বার পড়া হয়েছে
পুরনো ঢাকার নিমতলীতে ভয়াবহ অগ্নিকা-ে হতাহতের ঘটনায় ১৫ বছর অতিবাহিত হতে চললো। শেখ হাসিনা সরকারের আমলে নিমতলী অগ্নিকা-ে নিহতের পরিবারের খোঁজ খবর নেয়া হতো। শুধু তাই নয়, ওই ঘটনায় পরিবারের সকলে মারা যায়। মে তিন পরিবারের তিন মেয়েকে কন্যা হিসেবে তৎকালিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বীকৃতি দেন। পাশাপাশি একই দিনের একই সময়ে একই মঞ্চে তাদের বিয়ে দিয়েছিলেন। পাশাপাশি তিন কন্যার জামাইদেও চাকুরিও দিয়েছিলেন। সব সময় খোঁজ খবর নিতে না পারলেও দুই ঈদ সবেবরাত ও ঈদ ই মিলাদুন্নবী দিনে প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা তার এই তিন মেয়ের খবর নিতো। সাহায্য সহযোগিতা করতেন।পাশাপাশি গন ভবনে তাদের দাওয়াত করে খাওয়াতেন। তাদের সকল খবরাখবর জানতেন। কিন্তু গত বছরের ৫ আগষ্ট আওয়মীলীগ সরকার তথা শেখ হাসিনা সরকার ক্ষমতাচ্যূত হয়ে দেশ ছাড়েন। এরপর থেকে এই তিন কন্যা ও তাদের পরিবারের খোঁজ কেউ রাখে না।
জানা গেছে, রাজধানীর নিমতলীতে ভয়াবহ অগ্নিকা-ে আপনজনদের হারিয়েছিলেন রুনা, রতœা ও আসমা। মা-বাবাসহ স্বজন হারানো এই মেয়েদের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাঁর উদ্যোগেই গণভবনে এঁদের বিয়ে দেওয়া হয়। তাঁরা দীর্ঘ ১৫ বছর শেখ হাসিনার মেয়ে বলেই পরিচিত সবার কাছে।
জানা গেছে, ২০১০ সালের ৩ জুন রাতের সেই ভয়াবহ ঘটনার দুঃসহ স্মৃতি তাঁরা বয়ে বেড়াচ্ছেন ১৫ বছর ধরে। ওই রাতে রুনার বিয়ের পানচিনি অনুষ্ঠান হচ্ছিল। রুনা ও রতœা বিউটি পারলারে গিয়েছিলেন। তাই আগুন তাঁদের স্পর্শ করতে পারেনি।
এরপর ৯ জুন বিয়ে হয়, নতুন ঠিকানা পুরান ঢাকার হোসনী দালান রোড। বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল, তিন বছরের ছেলে আজানকে নিয়ে ব্যস্ত রুনা। স্বভাবসুলভ হাসিমাখা মুখে বললেন, ‘ও খুব দুষ্টু হয়েছে। সেই আজান এখন অনেক বড় হয়েছে। লেখাপড়া করছে। মাঝে মাঝে বলে, হাসু নানু কই। রুনা ছেলেকে শান্তনার স্বরে বলেন, হাসু নানু বিদেশে গেছেন। রুনার স্বামী জামিল। তিনি বাংলাদেশ নৌবাহিনীর প্রিন্টিং প্রেসে কাজ করছেন। বলেন, ‘রুনা ও ছেলেকে নিয়ে খুব ভালো আছি। আমার শাশুড়ি (শেখ হাসিনা) এই চাকরিটা দিয়েছেন। তাই আর বিদেশ যাইনি। তিনি তো খবর নিতেন। সরকারের পট পরিবর্তনের কারণে এখন আর কেউ আমাদের খবর নেয় না।
এদিকে বাবার কাছে এসে চলো চলো করছিল আজান। ওকে জিজ্ঞাসা করলাম, নানির কাছে যাবে। রুনা বললেন, ‘ওর নাম তো প্রধানমন্ত্রীই রেখেছেন। আজানের জন্মের পর ওকে নিয়ে গিয়েছিলাম আম্মুর কাছে। গত সবেবরাত এবং রোজার সময় আমাদের দাওয়াত দিয়েছিলেন। দেখা করেছি। সবাইকে উপহার দিয়েছেন। আমাদের নতুন মা নিজের মায়ের কষ্ট ভুলিয়ে দিয়েছেন। অনেক ভালোবাসেন আমাদের। এখন তো আর কেউ খবর নেয় না। নিজের ছেলেকে দেখলে ছোট ভাইয়ের ছেলের কথা মনে পড়ে জামিলের। ‘আমার ছোট ভাই ও ওর তিন বছর বয়সী ছেলেটা সেদিন আগুনে পুড়ে মারা গেছে। আজানকে দেখলেই ওর জন্য মনটা হু হু করে ওঠে।
শ্রদ্ধা ভালোবাসায় ভরা সংসার ভালোই চলছে। রুনার বড় বোন রতœার বাড়ি হোসেনী দালানের পেছনে নওয়াব বাগিচায়। এই বাড়ির নতুন সংযোজন শ্রদ্ধা, রতœার দেড় বছর বয়সী মেয়ে। রতœা বলেন, ‘মেয়ে হওয়ার পর থেকে আর কিছু ভাবার সময় নেই। ওকে ঘিরে পুরোটা সময় কাটে। সকালে ওর বাবা অফিসে যায়। তার পর থেকে আমি আর মেয়ে। এই তো বেশ ভালো আছি।
রতœার স্বামী সুমন কাজ করেন বেসিক ব্যাংকের কেরানীগঞ্জ শাখায়। সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে তিনি ফিরলেন ক্লান্ত হয়ে। কিন্তু মেয়ের মুখের হাসি দেখে উধাও হয়ে গেল সব ক্লান্তি। সুমন বলেন, এখন তো শ্রদ্ধাই সব। বউ-মেয়েকে নিয়ে সংসার গুছিয়ে নিয়েছি। সামনের মাসে নিজেদের বাড়িতে উঠব। এরআগে মায়ের সঙ্গে দেখা করবো। কিন্তু এর আগেই সরকার পতনে মা দেশের বাইরে চলে যান। তারপর থেকে কেউ আমাদের খোঁজ খবর নেয় না। রতœা বলেন, ‘যেকোনো সমস্যা হলেই আম্মুকে (শেখ হাসিনা) জানাই ওনার এপিএস সাইদুজ্জামান শেখরের মাধ্যমে। তিনি আমাদের খুব সহযোগিতা করেন। পয়লা বৈশাখে শুভেচ্ছা কার্ড এবং উপহার সামগ্রী পাঠিয়েছিলেন। এখন আর আমাদের কেউ রইলো না।
আসমা-আলমগীর দম্পতির জানান, পরিবারের ৩৭ জন সদস্যকে হারিয়ে নিজের বেঁচে থাকা এখনো অবিশ্বাস্য লাগে আসমার কাছে। তবুও দুই সন্তান ও স্বামীর জন্য নিজেকে সামলে নেন তিনি। আসমা-আলমগীর দম্পতিরও চার বছর আগে ৯ জুন প্রধানমন্ত্রীর তত্ত্বাবধানে গণভবনে বিয়ে হয়। আসমার স্বামী আলমগীর বর্তমানে মিলিটারি ইঞ্জিনিয়ারিং সার্ভিসেসে কাজ করছেন। জানালেন, স্ত্রী-সন্তান নিয়ে তিনি সুখী। তবে চাকরিটা স্থায়ী হওয়ায় ভালো লাগছে।
আসমার দুই ছেলে আদর ও রামাদান। একজনের বয়স প্রায় তিন বছর, আরেকজনের ছয় মাস। রামাদান নাম রেখেছেন নানি শেখ হাসিনা। আসমা বলেন, আম্মু নিয়মিত খোঁজ নেন। দুজনই বড় হয়ে গেছে। তারা তার নানুকে খোঁঝ করেন। আসমা বলেন, সরকার পতনের পর আজ কোরবানির ঈদ। আম্মা থাকলে (শেখ হাসিনা) আমাদেও গনভবনে দাওয়া দিত। শুধু তাই নয়, আমাদের সকলের জন্য নতুন কাপড়, খাবার এবং নগদ অর্থও বখশিশ হিসেবে দিত। আজ কোরবানির ঈদ। কেউ আমাদের খোঁজ খবর নেয়নি। তারপরও শুকরিয়া। আল্লাহ আমাদের ভালো রেখেছে।