নির্বাচন ইস্যুতে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্য জরুরী

- আপডেট সময় : ০২:১৮:১৮ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৭ এপ্রিল ২০২৫ ২৫ বার পড়া হয়েছে
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে দৃশ্যমান ঐক্যের প্রক্রিয়া শুরু করেছে রাজনৈতিক দলগুলো। তা মুখে মুখে। সম্ভাব্য এই প্রক্রিয়া নির্বাচন পর্যন্ত থাকবে কিনা, এ নিয়ে সংশয় রয়েছে। পরিস্থিতি কোন পর্যায়ে যায়। তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিকদলগুলোতে
জাতীয় নির্বাচন নিয়ে কোনও রোডম্যাপ প্রকাশ করা হয়নি। এরইমধ্যে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে দৃশ্যমান ঐক্যের প্রক্রিয়া শুরু করেছে রাজনৈতিক দলগুলো। তা মুখে মুখে। সম্ভাব্য এই প্রক্রিয়া নির্বাচন পর্যন্ত থাকবে কিনা, এ নিয়ে সংশয় রয়েছে। পরিস্থিতি কোন পর্যায়ে যায়। তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিকদলগুলোতে।
বিএনপিসহ আন্যান্য দলের সঙ্গে যুগপত আন্দোলনে যুক্ত ছিল। এমন রাজনৈতিক দলগুলোর একাধিক নেতার সঙ্গে আলাপকালে জানা গেছে, রাজনীতিতে বর্তমানে যে বাস্তবতা চলছে, তা একইরকম থাকলে নির্বাচন পর্যন্ত চলমান পরিস্থিতি বহাল থাকতে পারে। এক্ষেত্রে জামায়াত ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন ও বাম-ধারার কিছু দল জোটগত নির্বাচনের বিষয়ে আলোচনা শুরু করলেও আসন বণ্টনকে কেন্দ্র করে ‘আসল নির্বাচনি মেরুকরণ’ সৃষ্টি হবে। যে কারণে বিএনপি সমমনা দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করলেও শেষ পর্যন্ত তা জোট থাকবে কিনা এ নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।
নির্বাচনকে টার্গেট করে জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান দেশের কিছু আলেম ও ইসলামি দলগুলোর নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। তার দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বৈঠকে তিনি ‘অতীতের কোনও আচরণের জন্য সামান্য কষ্ট পেলে ক্ষমা’ প্রার্থনা করেন। ডা. শফিকুর রহমানের এই আহ্বানের আগে ও পরে বেশ কিছু দিন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠক করেছে জামায়াত। এসব বৈঠকে ইসলামি রাজনীতির অনুসারী দলের মধ্যে ছিল খেলাফত মজলিস ও ফরায়েজি আন্দোলন, মাজারভিত্তিক সংগঠন জাকের পার্টি, ১২ দলীয় জোটের জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম একাংশ। এছাড়াও অংশগ্রহণ করেন ইসলামী ঐক্যজোটের (একাংশ) চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আব্দুর রকিব, ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব আব্দুল করিম।
বিএনপির উচ্চপর্যায়ের দায়িত্বশীলরা বলছেন, বিএনপি সচেতনভাবে নির্বাচনি ঐক্য নিয়ে সতর্ক রয়েছে। বিশেষ করে ‘বন্ধুবেশে’ কোনে কোনো দল রয়েছে। তাদের ক্ষেত্রে কী করণীয় তা সময়েই বলে দিবে। পাশাপাশি যুগপত সঙ্গীদের নির্বাচনি সমঝোতার মধ্যে রাখার চেষ্টা করছে বিএনপি। এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, এখনও নির্বাচনের দিনক্ষণ নির্ধারণ হয়নি। দেশে-বিদেশে সবার কাছে প্রশ্ন, নির্বাচনের বিষয়টা নিয়ে এত ডিলে (বিলম্ব) হচ্ছে কেন। নির্বাচনের সময় ঘোষণায় তাদের মধ্যে এত সিদ্ধান্তহীনতা কেন। এ কারণে অনেকের মধ্যে সন্দেহ সৃষ্টি হচ্ছে। শেষ পর্যন্ত ঐক্য থাকবে কিনা।
আমির খসরু আরো বলেন, ‘যেহেতু আমরা যুগপতে যুক্ত দলগুলোর সঙ্গে আন্দোলন-সংগ্রাম করেছি, আমরা সবাই ৩১ দফা দিয়েছি, সংস্কার প্রস্তাব করেছি। এটা বাস্তবায়নের জন্য জাতীয় সরকারে কথা বলেছি। অবশ্যই এখানে জয়েন্ট অ্যাফোর্ট তো আছে।
এদিকে আওয়ামী লীগের ভেরিফায়েড পেজে প্রচারিত একটি স্ট্যাটাসে দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ আলী আরাফাত উল্লেখ করেছেন, একটি নতুন (তত্ত্বাবধায়ক) সরকারের অধীনে হতে হবে পরবর্তী নির্বাচন। নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী সব দল এবং ব্যক্তির জন্য যেন সমান সুযোগ থাকে সেই পরিবেশ তৈরি করতে হবে। আওয়ামী লীগনেতা আলী আরাফাত আরও বলেন, একইসঙ্গে জুলাইয়ের ১৬ তারিখ থেকে আগস্টের ৫ তারিখ পর্যন্ত এবং পরবর্তী সময়ে পুলিশসহ যত হতাহত হয়েছে সব ঘটনার (সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে) বিচার চলমান রাখতে হবে। তদন্ত ও বিচার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে যেই দোষী প্রমাণিত হবে, তার শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
এ বিষয়ে জানতে চেয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের গঠিত একাধিক কমিশনের প্রধান স্বপরিচয়ে উদ্ধৃত হতে রাজি হননি। তবে, কোনও-কোনও কমিশন সদস্য মনে করেন, আওয়ামী লীগকে নির্বাচনের বাইরে রাখলে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্য বিগত ১৬ বছর ধরে যে রাজনৈতিক বিরোধিতা-আন্দোলন চলেছে, তার ফলাফল তাহলে কী? এক্ষেত্রে ফ্যাসিস্ট সরকারকে সরাতে জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে ছাত্র-জনতা ও রাজনৈতিক কর্মীদের মৃত্যুর পরও সহিংসতার আশঙ্কা জাগিয়ে রাখবে।
অপরদিকে বরিশালে দলীয় কর্মসূচিতে চরমোনাই পীরের দরবারে ইসলামী আন্দোলনের আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীমের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন জামায়াতের আমির শফিকুর রহমান। ঐক্যের খ্যাতিরে পরে তিনি চরমোনাই পীরের দেওয়া মধ্যাহ্নভোজেও অংশ নেন।
চরমোনাই পীর ও জামায়াত আমিরের সাক্ষাতের পর রাজনৈতিক মহলে আগ্রহ তৈরি হয়। পরে দুদিন ব্যাপী বিভিন্ন ইসলামি দলের নেতাদের সঙ্গে এ বিষয়ে আলাপ হয়। বিএনপির কোনও-কোনও নেতা মনে করেন, দুই দলের আমিরের মধ্যে সৌহার্দ্য বিনিময় হলেও রাজনৈতিক বা নির্বাচনি কোনও জোটের বিষয় নেই।এ বিষয়ে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের দিক থেকে নির্বাচনি রোডম্যাপ প্রকাশ্যে আসলে ঐক্য সম্পর্কে বলা যাবে।
দেশের সংসদীয় রাজনীতিতে ইসলামি দলগুলোর তেমন কোনও শক্ত অবস্থান নেই। এরমধ্যে একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী জামায়াতে ইসলামী ২০১৪ ও ২০২৪ ছাড়া বাকি সবগুলোতে অংশগ্রহণ করে। ১৯৯১ ও ২০০১ সাল ছাড়া অন্য কোনও নির্বাচনে প্রত্যাশিত সাফল্য পায়নি দলটি। শুধু তাই নয়, ১৯৯১ সালের নির্বাচনে দলটির ১৮ জন, ১৯৯৬ সালে তিন জন, ২০০৮ সালে দুজন এবং ২০০১ সালে বিএনপির সঙ্গে জোটবদ্ধভাবে নির্বাচন করে ১৭ জন এমপি নির্বাচিত হন। ২০১৮ সালে নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে অংশ নিলেও কোনও আসনে জামায়াতের প্রার্থী জেতেনি। ওই নির্বাচনটি ‘রাতের ভোটের নির্বাচন’ হিসেবে দাবি করে বিরোধীদলগুলো।
জামায়াতের বাইরে অন্য ইসলামি দলগুলোর মধ্যে ভোটের রাজনীতিতে এগিয়ে রয়েছে ইসলামী আন্দোলন। দলটি বিগত বেশ কয়েকটি স্থানীয় সরকারের নির্বাচনে অংশ নিয়েছে এবং কিছু প্রার্থী বিজয়ী হন। এর বাইরে খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামসহ আরও কয়েকটি দল রয়েছে, যাদের এককভাবে ভোটে পাস করে আসার সম্ভাবনা প্রায় ক্ষীণ।
খেলাফত মজলিসের যুগ্ম মহাসচিব মুহাম্মদ মুনতাসির আলী বলেন, ‘খেলাফত মজলিস সব সময় বৃহত্তর ইসলামী ঐক্যের কথা বলছে। আমরা দুটো বিষয় প্যারালাল চিন্তা করি। খেলাফত মজলিস মনে করে সমমনা যেসব দলগুলো রয়েছে, তাদের সঙ্গে ঐক্য করা এবং যেকোনও পক্ষের সঙ্গেই ইসলামের প্রয়োজনে যেকোনও আলোচনায় যেতে প্রস্তুত আমরা।
একাধিক দলীয়সূত্র জানান, কয়েকটি বিভক্ত ইসলামি দলকে ঐক্যবদ্ধভাবে সামনে আগানোর পরামর্শ রয়েছে বিএনপির। এক্ষেত্রে নির্বাচনকালীন বা তারপর বিভিন্ন প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির প্রতিশ্রুতি থাকতে পারে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান বলেন, চরমোনাই, হেফাজত, খেলাফত মজলিসের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। সম্ভাবনা রয়েছে আরও হওয়ার, তবে আমি এখনও দলের কোনও সিদ্ধান্ত পাইনি।