বানের পানিয়ে তলিয়ে ৩১৩ কোটি টাকার আমন ধান
- আপডেট সময় : ১১:৫৩:২৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১০ অক্টোবর ২০২৪ ৮৬ বার পড়া হয়েছে
গত দুদিন ধরে ভারত থেকে নেমে আসা পানির ঢল এবং বৃষ্টিপাত বন্ধ থাকায় নেত্রকোনায় বন্যার পানি কমতে শুরু করেছে। তবে পানি নেমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ফুটে উঠছে ক্ষয়ক্ষতির চিত্র। বন্যার পানিতে তলিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে জেলার ২৪ হাজার ৬৬৭ হেক্টর জমির আমন ধান।
সরকারি হিসাবে যার আনুমানিক মূল্য ৩১৩ কোটি টাকা। বৃহস্পতিবার (১০ অক্টোবর) দুপুরে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক মোহাম্মদ নূরুজ্জামান এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি জানান, নেত্রকোনার ১০টি উপজেলায় এ বছর ১ লাখ ৩৫ হাজার ৯০০ হেক্টর জমিতে আমন ধানের আবাদ করা হয়। এরমধ্যে বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে ২৪ হাজার ৬৬৭ হেক্টর আমন ক্ষেত ও ১৭৭ হেক্টর জমির শাকসবজি।
বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে জেলার কলমাকান্দায়। উপজেলাটিতে ৮ হাজার ৩৪৫ হেক্টর আমন ও ৪৫ হেক্টর শাকসবজি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানান মোহাম্মদ নূরুজ্জামান। এছাড়া দুর্গাপুর উপজেলায় ৭ হাজার হেক্টর আমন ও ৫২ হেক্টর শাকসবজি, বারহাট্টা উপজেলায় ৫ হাজার ১১৭ হেক্টর আমন ও ১০ হেক্টর শাকসবজি, পূর্বধলা উপজেলায় ২ হাজার ১০০ হেক্টর আমন ও ৪০ হেক্টর শাকসবজি এবং সদর উপজেলায় ১ হাজার ১৮০ হেক্টর আমন ও ৩০ হেক্টর শাকসবজির ক্ষেত।
আর জেলার মোহনগঞ্জ উপজেলায় ১৪০ হেক্টর আমন, আটপাড়া উপজেলায় ৭৫০ হেক্টর আমন, মদন উপজেলায় ২৫ হেক্টর আমন ও খালিয়াজুরী উপজেলায় ১০ হেক্টর আমন ক্ষেতের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
ক্ষতিগ্রস্তদের কোনও সহায়তা প্রদান করা হবে কিনা জানতে চাইলে মোহাম্মদ নূরুজ্জামান বলেন, আমরা প্রতিবেদন পাঠিয়েছি। সরকারি বরাদ্দ প্রাপ্তি সাপেক্ষে সহায়তা প্রদান করা হবে। বরাদ্দ প্রাপ্তির সম্ভাবনা আছে।
বন্যার পানি কমতে শুরু করায় যারা বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্র বা আত্মীয়-স্বজনের বাড়ি থেকে নিজ বাড়িতে ফিরছেন, তাদের অনেকেরই ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত। ঘরের ধান-চাল পানিতে নষ্ট হয়ে যাওয়ায় খাবারের জন্যও নিম্নআয়ের এসব মানুষকে কষ্টের মধ্যে পড়তে হচ্ছে। দেখা দিয়েছে খাদ্য ও সুপেয় পানির তীব্র সংকট। জেলার বেশিরভাগ গ্রামীণ রাস্তাঘাট এখনও পানির নিচে থাকায় কাজের সন্ধানে সহজে বের হতে পারছেন না লোকজন।
জেলার দুর্গাপুর উপজেলার কাকৈরগড়া ইউনিয়নের রামবাড়ি গ্রামের জবর আলী বলেন, বন্যায় আমার সব শেষ হয়ে গেছে। ঋণ করে আমন চাষ করছিলাম। সব ধান পানির নিচে। এখন কী করে সেই ঋণ পরিশোধ করবো, বুঝতাছি না। বাড়িঘরেও পানি। ঘরে থাকার মতো ব্যবস্থা না থাকায় কয়েক দিন ধরে আত্মীয়ের বাড়ি আছি। পানি কমতে শুরু করলেও ঘরবাড়ি আবার নতুন করে মেরামত করতে হবে।
জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সারওয়ার জাহান জানান, বৃহস্পতিবার (১০ অক্টোবর) বিকাল ৩টা পর্যন্ত জেলার প্রধান নদ-নদী সোমেশ্বরী, কংস, উব্দাখালী ও ধনুর পানি কমছিল এবং তা বিপদসীমার অনেক নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। তবে এরমধ্যে উব্দাখালী নদীর পানি কমলেও বিপদসীমার ২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে বইছিল।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক বনানী বিশ্বাস বলেন, বন্যাকবলিত লোকজন যতদিন না স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসছেন, ততদিন পর্যন্ত তাদের সব রকম সরকারি সহায়তা প্রদান করা হবে। আমরা সব সময় তাদের খোঁজ-খবর রাখছি। এ পর্যন্ত ৪ লাখ টাকা, ৩ হাজার প্যাকেট শুকনা খাবার ও ৮০ মেট্রিক টন চাল বিতরণ করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।