স্বরূপে ফিরছে ঢাকা

- আপডেট সময় : ১০:২১:৫৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৫ জুন ২০২৫ ৮৩ বার পড়া হয়েছে
মেঘের মহানজন বিদায়ের সপ্তাহ কেটে গেছে। জৈষ্ঠের শেষ দিনগুলো অসহনীয় গরমের মধ্যে আষাঢ়ের অভিষেক। ঈদের টানা দশদিনের ছুটি শেষে গতকাল রোববার রাজধানী ঢাকা ফিরেছে পুরানো চেহারায়। দিন-রাতে সমানতালে গরমের মধ্যে কাকঘুমে রাত কাটে। ভোর থেকেই নগরবাসীন্দাদের দৌড়ঝাপ শুরু হয়। স্কুল পড়ুয়ারা ঘুমচোখে মা-বাবার হাত ধরে স্কুলের পথে। যানজটকে পাশ কাটিয়ে নিরাপদে কর্মস্থলে পৌছাতে সকাল সকাল ঘর ছেড়েছেন। কিন্তু তারপরও অনেকেই যানজটে আটকা পড়েছেন। প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র সচিবালয়, বিচারালয়, ব্যাংক-বীমা থেকে শুরু করে বিভিন্ন কর্মস্থলগুলোতে দশটির পর বাগি জ¦লে। সেই সঙ্গে শীততাপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র, পাখাসহ সব রকমের যন্ত্রগুলো ১০দিন সচল হয়। এদিন ব্যাংকে লেনদেন বৃদ্ধি পায়।
টানা তাপপ্রবাহের মধ্যে গতকালও দেশের বিভিন্ন অঞ্চল বিশেষ করে উত্তরাঞ্চল থেকে ঢাকার পথে আসতে রওনা দিয়ে দীর্ঘ যানজটে পড়তে হয়েছে। যমুনা সেতুর পশ্চিম প্রান্ত থেকে পূর্বপ্রান্ত হয়ে ঢাকা-টাঙ্গাইল রুটে যানজটের পুরাতন রূপ। কোথায় ধীর গতিতে যানবাহন চলছে, আবার কোথায় আটকা পড়তে হয়েছে। সেই সঙ্গে প্রথম আষাঢ়ের দিনে ভ্যাপসা গরমে নারী-শিশুদের পরিস্থিতি বর্ণনা করা যায় না। ভ্যাপসা গরমে অতিষ্ঠ জনজীবন। এদিন সকালে আকাশজুড়ে দেখা যায় মেঘের ছুটাছুটি। কিন্তু বৃষ্টি হয়নি। এমন অবস্থায় আষাঢ়ের প্রথম দিনেই সুখবর দিলো আবহাওয়া অফিস। তারা বলছে, দেশের বেশিরভাগ এলাকায় বৃষ্টিপাত শুরু হতে পারে। দেশের নদীবন্দরগুলোর জন্য একনম্বর সতর্ক বার্তা জারি করে হাওয়া অফিস।
প্রচন্ড গরমে বিদ্যুতের চাহিদা পূরণে তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র চালানো হবে। এ বিষয়ে সরকারের প্রস্তুতি রয়েছে। গতকাল টানা ১০ দিনের ছুটি শেষে প্রথম কর্মদিবসে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান। এবারের ঈদে গ্রামে প্রচুর লোডশেডিং হয়েছে, এমন অভিযোগের বিষয়ে উপদেষ্টা বলেন, এখন গ্রামের ঘরে ঘরে ফ্রিজ। গ্রামে বিদ্যুতের চাহিদা বাড়ছে। ফলে প্যাটার্ন বদলেছে। এ কারণে কিছু কিছু জায়গায় সমস্যা হয়েছে। ঈদের ছুটিতে প্রায় ১২ থেকে ১৩ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুতের চহিদা ছিল। গ্রামে বিদুৎ পায়নি, এটা ভুল কথা। ঈদ ছুটির দশদিন পরও নৌপথে দক্ষিণাঞ্চল থেকে প্রচুর মানুষ ঢাকায় ফিরছেন। দেশের শিল্পঞ্চলগুলোতে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরেছে। বাস-ট্রেন জয়দেবপুর স্টেশনে পৌছালে অর্ধেকের বেশি যাত্রী সেখানে নেবার খবর মিলছে। ট্রেনেও প্রচুর মানুষ ফিরছে মহানগরে।
এবারে ঈদে পাশ্ববর্তী দেশ থেকে কোন রকমের পশু আমদানি করা হয়নি। দেশী খামারিদের অনেক বেশি গরু বিক্রি হয়েছে বলে জানালেন, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার। রোববার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, যাতায়াত, কোরবানি, কোরবানির মাংসসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অন্য যেকোনো বছরের তুলনায় সার্বিকভাবে ভালো ও স্বস্তিদায়ক ছিল। তিনি বলেন, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় বিশেষ করে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর বছরজুড়ে বিভিন্ন বিষয়ে খামারিদের সহযোগিতা ও সচেতনতা বৃদ্ধিতে কাজ করে যাচ্ছে। তবে স্বস্তির বিষয় হলো এ বছর কোরবানিতে প্রতিবেশী কোনো রাষ্ট্র থেকে গবাদি পশু আমদানি করা হয়নি। ফলে দেশীয় খামারিদের অনেক বেশি গরু বিক্রি হয়েছে।
ঢাকায় গণপরিবহনের সংখ্যা তুলনামূলক কম থাকায় কর্মজীবী মানুষদের বিড়ম্বনায় পড়তে হয়েছে। অতিরিক্ত রিকশা ভাড়ার পাশাপাশি সিএনজি চালিত অটো রিকশার ভাড়া কোন কোন ক্ষেত্রে দেড়গণ। কারণ হিসাবে অনেক চালক জানান, ঈদের পর এখন চালকরা এসে পৌছায়নি। যে কারণে রিকশা সঙকট। একারণে ভাড়া বেশি চাইছে। বিশেষ সকালে স্কুলে যাবার সময়টিতে সবচেয়ে বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে।