হাসিনার শাসন: উর্দিপরা সংগঠিত গুণ্ডাবাহিনী পুলিশের নৃশংসতা!
- আপডেট সময় : ০৯:২৫:০৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১১০ বার পড়া হয়েছে
দুই পায়ে গুলি চালানোর পর দুই হাতের আঙুল কেটে দেয়া হয়
পতিত সরকারের প্রধানমন্ত্রী দেশ পালানো হাসিনার পুলিশ ছিলো উর্দিপরা সংগঠিত এক গুন্ডাবাহিনী। তারা দলীয় কর্মীর ভূমিকায় কাজ করেছে। আইনের প্রতি কোন তোয়াক্কা করেনি। বলা হয়, হাসিনার শাসনামলে শতভাগ পুলিশিরাজ কায়েম হয়েছিলো। কারণ, তা না হলেও তো হাসিনা একটা লম্বা সময় দেশের প্রধানমন্ত্রী থেকে দেশের বারোটা বাজাতে পারতো না। একারণে পুলিশের ভূমিকা ছিলো ছাড়া গুরুর মতো। থানায় বসে টেবিলে পা তুলে বসে থাকার অসভ্য আচরণের কথাও শোনা যায়। কোন কারণে মহিলারা থানায় গিয়ে পরিবেশ দেখে কোন রকমের অভিযোগ না করেই ফিরে আসতে বাধ্য হবার ঘটনাও লোকমুখে শোনা যায়!
হাসিনা সেই পুলিশ গুম-হত্যা, বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গুলি করা ইত্যাদির জন্য কারো কাছে জবাবদেহী করতে হতো না। ফলে বাংলাদেশে কায়েম হয়েছিলো পুলিশ রাজ। অথচ শেখ হাসিনা এসব জঘন্য অপরাধ বেমালুম হজম করে গণতন্ত্রের নামাবলি পড়ে মিথ্যা বুলি আওড়িয়ে মানুষকে ধোকা দিয়েছে।
হাসিনার পুলিশ কতটা নৃশংস হতে পারে, তার প্রমাণ ওঠে এসেছে চট্টগ্রামের রাউজানের কামরুল হাসানের ধরা গলার বয়ানে। নোয়াপাড়ার পলোয়ান পাড়ার বাসিন্দা কামরুল হাসান নিজ গ্রামের খোলা মাঠের একটি জমিনে হুইল চেয়ারে বসে আছেন। তার একটি পা নেই। হাতের একাধিক আঙ্গুল কাটা। একটি বিচ্ছিন্ন! কামরুল হাসানের জীবন কাহিনীর বর্ণনা শুনে উপস্থিত মানুষের চোখের পাতা ভারী হয়ে ওঠে। ভারী হয়ে ওঠে রাউজানের বাতাস।
কামরুল হাসান বলেন, তিনি সেদিন বোয়ালখালীতে মেয়ের শ্বশুরবাড়িতে অবস্থান করছিলেন। রাউজান থানার দারোগা টুটন মজুমদার কয়েকজন পুলিশ সদস্য ছাড়াও কয়েকজন সন্ত্রাসীকে সঙ্গে নিয়ে গভীর রাতে (রাত ১২টার পর) সেখান থেকে জোড়পূর্বক তুলে নিয়ে আসে। টুটন মজুমদারের নেতৃত্বে অনেকটা ফিল্মী স্টাইলে গ্রামের দুই কিলোমিটার দূরে সূর্যসেন পল্লি এলাকায় গিয়ে থামে।
কামরুল হাসান বলেন, সেখানে আমার দুই পায়ে গুলির পর দুই হাতের কয়েকটি আঙুল কেটে দেয়া হয়। পরদিন পুলিশ ঘটনাটিকে বন্দুকযুদ্ধ দাবি করে আমাকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে জেলে পাঠায়। কামরুল হাসানের গলা ধরে আসে। উপস্থিত মানুষজন বিস্ফোরিত নয়নে তাকিয়ে আছে তার দিকে। কামরুল হাসানের বয়ান শুনে খোলা মাঠের বাতাসও চলাচলে লজ্জবোধ করে। হাসিনার পুলিশ বলে কথা।
স্থানীয় সাবেক এমপি (গ্রেপ্তারকৃত) এ বি এম ফজলে করিমের নির্দেশে পুলিশ ও সন্ত্রাসী বাহিনীর নির্যাতনের শিকার এবং মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর অভিযোগ এনে শুক্রবার বিকেলে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তার ওপর পুলিশ ও আওয়ামী গুন্ডাদের নৃশংস নির্যাতনের বর্ণনা তুলে ধরেন কামরুল হাসান।
কামরুল হাসান অভিযোগ করেন, কেবল বিএনপির কর্মী হওয়ার কারণেই নির্যাতন করে তার জীবনকে বিপন্ন করে তোলা হয়েছে এবং তাকে একাধিক মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হয়েছে। স্থানীয় সাবেক সংসদ সদস্য এ বি এম ফজলে করিমের নির্দেশে এসব নির্যাতনের ঘটনার সঙ্গে পুলিশের দারোগা (এস আই) টুটন মজুমদার ছাড়াও জড়িত স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ বাবুল মিয়া জড়িত।
কামরুল হাসানের একটি পা নেই। একটি হাতের কনিষ্ঠ আঙুল পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন। সময়টা ২০১৫ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি। পায়ে গুলি করা এবং ধারালো অস্ত্রের আঘাতে চারটি আঙুল প্রায় বিচ্ছিন্ন করে ফেলা হয়। যদিও তিনটি আঙুল পরে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে জোড়া লাগানো হয়েছে। তার একটি পা সম্পূর্ণ কেটে ফেলতে হয়। অপর পা এখনো নিয়মিত ড্রেসিং করতে হচ্ছে। পায়ে ঘা, তা থেকে পুঁজ পড়ে। টুটন মজুমদার অনেকটা গাব্বার সিং স্টাইলে এসব কিছু করেন।
কামরুল হাসান তার লিখিত বক্তব্যে আরও বলেন, গুলি এবং ধারালো অস্ত্রের জখমের পর পুলিশ দাবি করে তার কাছ থেকে একটি দেশীয় বন্দুক ও পেট্রলবোমা উদ্ধার করে।
২০১৫ সালের ঘটনার পরও তাকে নির্যাতন এবং হয়রানি করা হয়েছে দাবি করে কামরুল বলেন, সে সময় একটি পা বিচ্ছিন্ন। অন্যটিও পঙ্গু। তারপরও ২০২২ সালের ১৬ আগস্ট চট্টগ্রামের হাটহাজারীর ভাড়া বাসা থেকে তুলে নিয়ে অস্ত্র দিয়ে আরেকটি মামলায় ফাঁসানো হয়। আবারও জেলে যেতে হয়েছে। শুধু তা-ই নয়, আমাকে রাঙামাটির কাউখালী থানার একটি চাঁদাবাজি মামলায়ও আসামি করা হয়। কামরুল মুখে হাসিনার পুলিশের অপকর্মের বর্ণনা শুনে উপস্থিত সবাই বিস্মিত!
সংবাদ সম্মেলনে নিজের ওপর সংঘটিত নির্যাতনের বিচার দাবি করেন কামরুল হাসান। এসব ঘটনায় মামলা করবেন বলেও জানান তিনি। সংবাদ সম্মেলনে স্ত্রী পারভিন আকতার, মেয়ে রুনা আকতার, রেশমি আকতার, সানজিয়া হাসান ও কয়েকজন গ্রামবাসী উপস্থিত ছিলেন।
অভিযুক্তদের মধ্যে সাবেক সংসদ সদস্য এ বি এম ফজলে করিম বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মুহাম্মদ বাবুল মিয়া গত ৫ আগস্ট থেকে আত্মগোপনে। অভিযুক্ত পুলিশের উপপরিদর্শক টুটন মজুমদার সংবাদমাধ্যমকে বলেন, দুটি মামলায় পরোয়ানা থাকায় কামরুলকে বোয়ালখালী থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তাকে নিয়ে অস্ত্র উদ্ধারে গেলে কামরুলের সহযোগীদের সঙ্গে পুলিশের পাল্টাপাল্টি গুলি ছোড়ার ঘটনা ঘটেছে।