ঢাকা ০২:২১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৮ অক্টোবর ২০২৫

কুড়িগ্রামে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি, দুই শতাধিক গ্রাম প্লাবিত, ২৫০ স্কুল বন্ধ

গণমুক্তি ডিজিটাল ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ৫২৩ বার পড়া হয়েছে

কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার সাহেবের আলগা ইউনিয়নের হকের চরে বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে বাড়ি। ভেলায় রান্না করছে একটি পরিবার : ছবি সংগ্রহ

দৈনিক গনমুক্তি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

 

উজানের ঢলে উত্তরের বন্যা পরিস্থিতির অবণতি ঘটেছে। শুক্রবার (৫ জুলাই) সকালে চিলমারী পয়েন্টে ব্রহ্মপুত্রের পানি বিপৎসীমার ৭৮ সেন্টিমিটার, নুনখাওয়া পয়েন্টে ৭২ সেন্টিমিটার এবং হাতিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ৮০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার খবর জানিয়েছে কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)।

এতে বন্যা পরিস্থিতি আরও অবনতি হয়ে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এরই মধ্যে দুই শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়ে পড়েছে। বন্ধ গেছে ২৫০ বেশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।

আগামী ৪৮ ঘণ্টা ব্রহ্মপুত্রসহ অন্যান্য নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকতে পারে বলে জানিয়েছে (পাউবো)।

জেলার নদী তীরবর্তী ৪১ ইউনিয়নের দুই শতাধিক গ্রামের লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি। দুর্যোগ কবলিত মানুষের সংখ্যা ৬২ হাজার ২০০ বলে জানিয়েছে কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসন।

বন্যার পানিতে ঘরবাড়ি তলিয়ে বানভাসি পরিবারগুলো বসতবাড়িতে বাঁশের মাচান, নৌকা ও কলা গাছের ভেলায় আশ্রয় নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে। অধিকাংশ পরিবারে পাঁচ দিন ধরে চুলা জ্বলছে না। ভেসে গেছে গৃহপালিত পশুপাখি। চারণভূমি তলিয়ে যাওয়ায় দেখা দিয়েছে গো-খাদ্যের তীব্র সংকট।

বানের পানিতে প্লাবিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান : ছবি সংগ্রহ

বানভাসিদের অনেকেই গবাদিপশুসহ বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ও আশ্রয়কেন্দ্রে কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন। গ্রামাঞ্চলের কাঁচা-পাকা সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় ভেঙে পড়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থা।

খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি ও শুকনো খাবার এবং জ্বালানি সংকটের পাশাপাশি স্যানিটেশন ব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন বন্যা কবলিত মানুষ।

সদর উপজেলার পাঁচগাছী ইউনিয়নের মিলপাড়া এলাকার আব্দুল মতিন বলেন, “পানি হু হু করে বাড়ছে। ঘরেও পানি ঢুকেছে। উঁচু স্থানে আশ্রয় নেওয়ার চিন্তা করছি।”

যাত্রাপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আব্দুল গফুর সংবাদমাধ্যমকে বলেন, এ ইউনিয়নের অনেক চর তলিয়ে গেছে। এ ছাড়া কুড়িগ্রাম-যাত্রাপুর সড়কের দুই স্থানে পানি ওঠায় যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। পানিবন্দি হয়েছে পড়েছেন ৩০ হাজারের বেশি মানুষ।

কুড়িগ্রাম জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আব্দুল হাই সরকার সংবাদমাধ্যমকে জানান, এখন পর্যন্ত বানভাসিদের জন্য ৯ উপজেলায় ২৮২ টন চাল ও ২১ লাখ ৮৫ হাজার টাকা বিতরণের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

এ ছাড়া ৩৯৫ টন চাল, আট লাখ ৫০ হাজার টাকা এবং ৫০০ প্যাকেট শুকনা খাবার মজুত আছে; যা পর্যায়ক্রমে বিতরণ করা হবে বলে জানান তিনি।

সরকারের নির্দেশে স্থানীয় প্রশাসন বন্যার্তদের পাশে থেকে দুর্ভোগ কমাতে সব ধরনের চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে বলে জানান কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ।

শুক্রবার সকাল থেকে উলিপুর ও সদর উপজেলার বন্যাদুর্গত এলাকা পরিদর্শন এবং বন্যার্তদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করেছেন রংপুর বিভাগীয় কমিশনার মো. জাকির হোসেন।

জেলা প্রশাসক জানান, জেলার ৯টি উপজেলার মধ্যে আটটি উপজেলা বন্যাকবলিত। ৪০৪টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এ পর্যন্ত আশ্রয়কেন্দ্র উঠেছেন এক হাজার ২৪৬ জন।

শুক্রবার দুই হাজার ৮৫০টি পরিবারের মাঝে ২৮ টন চাল, শুকনা খাবার, তেল, ডালসহ প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

কুড়িগ্রামে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি, দুই শতাধিক গ্রাম প্লাবিত, ২৫০ স্কুল বন্ধ

আপডেট সময় :

 

উজানের ঢলে উত্তরের বন্যা পরিস্থিতির অবণতি ঘটেছে। শুক্রবার (৫ জুলাই) সকালে চিলমারী পয়েন্টে ব্রহ্মপুত্রের পানি বিপৎসীমার ৭৮ সেন্টিমিটার, নুনখাওয়া পয়েন্টে ৭২ সেন্টিমিটার এবং হাতিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ৮০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার খবর জানিয়েছে কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)।

এতে বন্যা পরিস্থিতি আরও অবনতি হয়ে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এরই মধ্যে দুই শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়ে পড়েছে। বন্ধ গেছে ২৫০ বেশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।

আগামী ৪৮ ঘণ্টা ব্রহ্মপুত্রসহ অন্যান্য নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকতে পারে বলে জানিয়েছে (পাউবো)।

জেলার নদী তীরবর্তী ৪১ ইউনিয়নের দুই শতাধিক গ্রামের লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি। দুর্যোগ কবলিত মানুষের সংখ্যা ৬২ হাজার ২০০ বলে জানিয়েছে কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসন।

বন্যার পানিতে ঘরবাড়ি তলিয়ে বানভাসি পরিবারগুলো বসতবাড়িতে বাঁশের মাচান, নৌকা ও কলা গাছের ভেলায় আশ্রয় নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে। অধিকাংশ পরিবারে পাঁচ দিন ধরে চুলা জ্বলছে না। ভেসে গেছে গৃহপালিত পশুপাখি। চারণভূমি তলিয়ে যাওয়ায় দেখা দিয়েছে গো-খাদ্যের তীব্র সংকট।

বানের পানিতে প্লাবিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান : ছবি সংগ্রহ

বানভাসিদের অনেকেই গবাদিপশুসহ বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ও আশ্রয়কেন্দ্রে কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন। গ্রামাঞ্চলের কাঁচা-পাকা সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় ভেঙে পড়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থা।

খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি ও শুকনো খাবার এবং জ্বালানি সংকটের পাশাপাশি স্যানিটেশন ব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন বন্যা কবলিত মানুষ।

সদর উপজেলার পাঁচগাছী ইউনিয়নের মিলপাড়া এলাকার আব্দুল মতিন বলেন, “পানি হু হু করে বাড়ছে। ঘরেও পানি ঢুকেছে। উঁচু স্থানে আশ্রয় নেওয়ার চিন্তা করছি।”

যাত্রাপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আব্দুল গফুর সংবাদমাধ্যমকে বলেন, এ ইউনিয়নের অনেক চর তলিয়ে গেছে। এ ছাড়া কুড়িগ্রাম-যাত্রাপুর সড়কের দুই স্থানে পানি ওঠায় যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। পানিবন্দি হয়েছে পড়েছেন ৩০ হাজারের বেশি মানুষ।

কুড়িগ্রাম জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আব্দুল হাই সরকার সংবাদমাধ্যমকে জানান, এখন পর্যন্ত বানভাসিদের জন্য ৯ উপজেলায় ২৮২ টন চাল ও ২১ লাখ ৮৫ হাজার টাকা বিতরণের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

এ ছাড়া ৩৯৫ টন চাল, আট লাখ ৫০ হাজার টাকা এবং ৫০০ প্যাকেট শুকনা খাবার মজুত আছে; যা পর্যায়ক্রমে বিতরণ করা হবে বলে জানান তিনি।

সরকারের নির্দেশে স্থানীয় প্রশাসন বন্যার্তদের পাশে থেকে দুর্ভোগ কমাতে সব ধরনের চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে বলে জানান কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ।

শুক্রবার সকাল থেকে উলিপুর ও সদর উপজেলার বন্যাদুর্গত এলাকা পরিদর্শন এবং বন্যার্তদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করেছেন রংপুর বিভাগীয় কমিশনার মো. জাকির হোসেন।

জেলা প্রশাসক জানান, জেলার ৯টি উপজেলার মধ্যে আটটি উপজেলা বন্যাকবলিত। ৪০৪টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এ পর্যন্ত আশ্রয়কেন্দ্র উঠেছেন এক হাজার ২৪৬ জন।

শুক্রবার দুই হাজার ৮৫০টি পরিবারের মাঝে ২৮ টন চাল, শুকনা খাবার, তেল, ডালসহ প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে বলে জানান তিনি।