তাপসের ওপর বোমা হামলা সাজানো
- আপডেট সময় : ১১:৪৮:১৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪ ১৭৭ বার পড়া হয়েছে
বিশেষ প্রতিনিধি :
রাজধানীর মতিঝিল বাংলার বানী ভবনের বাইরে বিষ্ফোরনের ঘটনার পনের বছর পর পুলিশ তদন্ত শেষে মামলার ফাইনাল রিপোর্ট বা চুড়ান্ত প্রতিবেদন (এফআরটি) দাখিল করেছে আদালতে। গত ১৮ সেপ্টেম্বর মতিঝিল থানার বোমা বিস্ফোরন মামলার ফাইনাল রিপোর্ট দেয়। ২০০৯ সালের ২১ ফেব্রুয়ারী আওয়ামী লীগ আমলে তৎকালিন সময়ে আলোচিত ঘটনার ১৫ বছর তদন্তের পর ঘটনার সত্যতা এবং কোনো অপরাধী সনাক্ত করতে না পেরে চুড়ান্ত প্রতিবেদন প্রতিবেদন দাখিল করতে বাধ্য হয় পুলিশ। আওয়ামী লীগ আমলেই আদালতে চুড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিলের বিষয়টিও গোপন রাখা হয়।
২০০৯ সালের ২১ অক্টোবর। রাজধানীর মতিঝিল এলাকায় ঢাকা-১০ আসনের তৎকালীন সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপসের ওপর বোমা হামলা চালানো হয়। ঘটনার একদিন পর তিনি বাদী হয়ে রাজধানীর মতিঝিল থানায় একটি হত্যাচেষ্টা মামলা করেন তৎকালিন ওসি আরজু মিয়া। । ঘটনার সংশ্লিষ্ট প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেছেন, সে সময়ে মতিঝিল বাংলার বানী প্রত্রিকা ভবনের ৩য় তলায় অফিস ছিল এমপি, বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্য এবং বঙ্গবন্ধু স্বপরিবারে হত্যাকান্ডের মামলার আইনজীবি ব্যারিষ্টার ফজলে নুর তাপসের। সন্ধ্যার পর সে অফিসের এসির কমপ্রেসার বিস্ফোরনের ঘটনাকে ভিন্ন খ্যাতে ব্যবহার করা হয়েছে। এ ঘটনা পুঁজি করে বোমা হামলা করা হয়েছে, এমনটি সাজিয়ে মতিঝিল থানায় মামলা করা হয়। এ ঘটনায় বেশ কয়েকজন আহত হন। পুরো বিষয়টি ছিল ষড়যন্ত্র। বিডিআর বিদ্রোহে ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তা হত্যার ঘটনা, বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার শুনানী চলছিল। পাবলিক সেন্টিমেন্টকে ভিন্ন খ্যাতে নেয়া এবং প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতেই এমনটি জজ মিয়া নাটক সাজানো হয়েছিল।
যখন ব্যারিস্টার তাপসের ওপর বোমা হামলার ঘটনা ঘটে সুপ্রিম কোর্টে তখন বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার আপিল শুনানি চলছিল। বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় তাপস ছিলেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী। পাশাপাশি বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনা নিয়ে ছিল তাঁর ক্ষোভ ।
বোমা হামলা মামলার এজাহারে তাপস অভিযোগ করেন, বঙ্গবন্ধু হত্যার রায় ভিন্ন খাতে নিতে আসামিদের স্বজন ও সহযোগীরা তাকে মারার উদ্দেশেই ওই হামলা চালিয়েছে। তবে মামলার বিবরণীতে কোনো আসামির নাম উল্লেখ করেননি ব্যারিস্টার তাপস। এ ঘটনায় মহিউদ্দিনের দুই ছেলে নাজমুল হাসান, মাহবুবুল হাসান, মেজর শরিফুল ইসলাম ডালিমের ভাই কামরুল হক স্বপন, ফ্রিডমপার্টিও ৪ সদস্য ও কর্নেল আবদুর রশিদের মেয়ে মেহনাজ রশিদসহ ৮জনকে গ্রেফতার এবং দীর্ঘদিন কারাবরন করেতে হয়।
নাটক এখানেই শেষ নয়, এঘটনায় বিডিআর বিদ্রোহে জড়িত ট্যাগ লাগিয়ে ইন সার্ভিস অবস্থায় ৫ জন সেনা কর্মকর্তাকে চাকুরিচ্যূত, গ্রেফতার, গুম আয়না ঘরে নিয়ে নির্য়াতন করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সেনা কর্মকর্তারা হচ্ছেন, মেজর জেনারেল হেলাল মোহাম্মদ খান, ক্যাপ্টেন রেজাউল করিম রেজা, ক্যা. খন্দকার খান, ক্যা. ফুয়াদ খান, ক্যা. সুবাইল বিন রফিক। তাদের বিরুদ্ধে তৎকালিন সেনা আইনে সাজা দিয়ে কারাগারে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছিল। দীর্ঘ ৫টি বছর তারা জেল জুলুম এবং অমানুষিক নির্যাতন সহ্য করতে হয়েছে।
তাপসের উপর বোমা হামলার ঘটনায় মামলার তদন্তকারী অফিসার পরিদর্শক আরজু মিয়া বর্তমানে গাজীপুর জেলা সিআইডি দফতরে রয়েছেন। এ মামলার বিষয়ে তিনি এই প্রতিবেদককে জানান, এ মতিজিল থানার এ মামলা তদন্তে গিয়ে গত ১৫ বছরের তদন্তে ঘটনার কোনো সত্যতা পাইনি। বাংলারবানী ভবনে স্থাপিত এসির বিস্ফোরনে বিকট শব্দে আওয়াজ হয়েছে। পাশাপাশি এসিটি বিধ্বস্ত হয়েছে। এমন তথ্যই তিনি পেয়েছে। এ ঘটনায় কারো কোনো জড়িত এবং সংশ্লিস্টতা পাওয়া যায়নি । যার কারণে এ মামলা ফাইনাল রির্পোট দাকিল করা হয়েছে আদালতে।
এবিষয়ে ব্রি, জে, অব. হাসান নাসির বলেছেন, প্রতিপক্ষকে কোনঠাসা করে রাখতে এ ঘটনা সাজানো হয়েছিল। এ ঘটনার মাষ্টার মাইন্ড হিসেবে কাজ করেছে জিয়াউল আহসান, তারেক সিদ্দিকী, মোল্লা ফজলে আকবরসহ সাবেক ২০ সেনা কর্মকর্তা। সঙ্গে ছিলেন পুলিশ বিভাগের আলোচিত কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম।
উল্লেখ্য, রাজধানীর প্রাণকেন্দ্র মতিঝিল এলাকায় ২০০৯ সালের ২১ অক্টোবর রাতে বোমার বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছিলো। দেশের সব গণমাধ্যমেও তা ফলাও করে প্রচার করা হয়। সেই রাতের বোমা বিস্ফোরণে ব্যারিস্টার তাপস বেঁচে গেলেও অন্তত ১৩ জন আহতের খবর জানায় বিভিন্ন গণমাধ্যম। ঘটনার পরপরই তৎপর হয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। আসে সিআইডির ক্রাইমসিন টিমের সদস্যরাও। অল্প সময়ের ব্যবধানে সন্দেহভাজন বেশ কয়েক জনকে আটক করে পুলিশ।