প্রশাসনে বাড়ছে ক্ষোভ
- আপডেট সময় : ০৫:৪৮:৪৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪ ৪২ বার পড়া হয়েছে
উপসচিব পদে পদোন্নতিতে প্রশাসন ক্যাডারের ৭৫ শতাংশ কর্মকর্তা এবং অন্যান্য সব ক্যাডার থেকে ২৫ শতাংশ কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেওয়া হচ্ছিল এতদিন। তবে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন এ পদে পদোন্নতিতে প্রশাসন ক্যাডারের ৫০ শতাংশ এবং অন্যসব ক্যাডার থেকে ৫০ শতাংশ কর্মকর্তাকে পদোন্নতির সুপারিশ করতে চায়। পদোন্নতির ক্ষেত্রে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের জন্য বিদ্যমান কোটা বহাল রাখার দাবিতে জনপ্রশাসন সচিবের সাথে বৈঠক করেছেন তারা। অন্যদিকে, পাল্টা দাবিতে কর্মসূচি ঘোষণা করেছে প্রশাসন ক্যাডার ছাড়া অন্যান্য ক্যাডারদের নিয়ে গঠিত সংগঠন ‘আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদ।জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের সুপারিশের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে ঢাকায় সমাবেশসহ ৫ কর্মসূচি ঘোষণা দিয়েছে আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদ। কোটামুক্ত মেধাভিত্তিক উপসচিব পুল চায় এ পরিষদ।বিসিএস শিক্ষাকে ক্যাডারভুক্ত না রেখে জুডিসিয়াল সার্ভিস কমিশনের মতো আলাদা করার প্রস্তাব প্রত্যাখান করে প্রতিবাদলিপি দিয়েছেন বিসিএস জেনারেল এডুকেশন অ্যাসোসিয়েশন। জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রস্তাব ইস্যুতে তীব্র আপত্তি জানিয়েছে স্বাস্থ্য ক্যাডার অ্যাসোসিয়েশনও।
সংস্কার কমিশনের দেওয়া তথ্য থেকে জানা যায়, পরীক্ষা ছাড়া সিভিল সার্ভিসের উপসচিব এবং যুগ্ম-সচিব পর্যায়ে কেউ পদোন্নতি পাবেন না বলে সুপারিশ করা হচ্ছে। একই সঙ্গে উপসচিব পদে পদোন্নতির ক্ষেত্রে প্রশাসন ক্যাডার কর্মকর্তাদের জন্য ৫০ এবং অন্য ক্যাডার থেকে ৫০ শতাংশ কর্মকর্তাদের নেওয়ার সুপারিশ দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া বিসিএস শিক্ষা ও স্বাস্থ্যকে ক্যাডারভুক্ত না রেখে জুডিসিয়াল সার্ভিস কমিশনের মতো আলাদা করার প্রস্তাব দেওয়া হবে।
উপসচিব পদোন্নতি প্রত্যাশী প্রশাসনের কর্মকর্তাদের মতামত, জরিপ, সমীক্ষা সংগ্রহ করে তার ভিত্তিতে পর্যাপ্ত বিচার-বিশ্লেষণ করা হয়নি বলে জানা যায়। ফলে প্রকাশিত খবরের ভিত্তিতে মাঠ প্রশাসনসহ সকল স্তরে কর্মরত বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ এবং প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন কমিশন প্রধানের এই বক্তব্যের তীব্র নিন্দা এবং প্রতিবাদ জানাচ্ছে। আমরা অত্যন্ত যৌক্তিকভাবে রাষ্ট্রের কল্যাণের স্বার্থে মনে করি যে, উপসচিব/যুগ্মসচিব/অতিরিক্ত সচিব/সচিব পদে শতভাগ প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের পদায়ন হওয়া উচিৎ। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবের কাছে কার্যবিবরণী পাঠিয়ে জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) বক্তব্য তুলে ধরেন তারা। কার্যবিবরণীতে বলা হয়, উপসচিব পদে পদোন্নতির ক্ষেত্রে সংস্কার কমিশন যে ধরনের সুপারিশ করার চিন্তা করছে, তা বাস্তবতাবিবর্জিত। এ ধরনের উদ্যোগ কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়।
জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের সুপারিশের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে ঢাকায় সমাবেশসহ ৫ কর্মসূচি ঘোষণা দিয়েছে আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদ। কোটামুক্ত মেধাভিত্তিক উপসচিব পুল চায় এ পরিষদ। এই পরিষদের সাথে অন্তর্ভূক্ত হয় ২৫টি ক্যাডার। তারা বলেন, সিভিল সার্ভিসের কার্যকর সেবা নিশ্চিত করতে আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদ থেকে কৃত্য পেশাভিত্তিক মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠার দাবি করা হয়েছে অর্থাৎ প্রতিটি মন্ত্রণালয়ে স্ব-স্ব ক্যাডারের অভিজ্ঞ ও দক্ষ কর্মকর্তারা পদায়িত হবেন। আমরা বৈষম্যহীন জনকল্যাণমূলক রাষ্ট্র গঠনে প্রত্যেকটি মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট ক্যাডারের কর্মকর্তার দ্বারা পরিচালনা এবং কোটামুক্ত মেধাভিত্তিক উপসচিব পুল অত্যন্ত জরুরি বলে জোর দাবি করেন।
বিসিএস শিক্ষাকে ক্যাডারভুক্ত না রেখে জুডিসিয়াল সার্ভিস কমিশনের মতো আলাদা করার প্রস্তাব প্রত্যাখান করে প্রতিবাদলিপি দিয়েছেন বিসিএস জেনারেল এডুকেশন অ্যাসোসিয়েশন। প্রতিবাদলিপিতে বলা হয়, এই সুপারিশ সর্বতভাবে প্রত্যাখ্যান করা হচ্ছে। ২০১২ সালে অনুরূপ একটি প্রচেষ্টা আমরা প্রতিহত করেছি। বিষয়টি মীমাংসিত। সংস্কারের মাধ্যমে সব বৈষম্য নিরসন ও গতিশীল জনবান্ধব জনপ্রশাসন তৈরির লক্ষ্যে গঠিত কমিশনের এ ধরনের সুপারিশ বর্তমান অন্তবর্তী সরকারের বৈষম্যবিরোধী মূল চেতনার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। তাই এ সুপারিশ প্রত্যাহার করা না হলে কার্যকর প্রশাসনিক সংস্কার ব্যর্থ হবে।
জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রস্তাব ইস্যুতে তীব্র আপত্তি জানিয়েছে স্বাস্থ্য ক্যাডার অ্যাসোসিয়েশনও। বিসিএস হেলথ ক্যাডার অ্যাসোসিয়েশন এক প্রতিবাদলিপিতে জানায়, বিসিএস স্বাস্থ্য ক্যাডারের ৩৫ হাজার সদস্যের মুখপাত্র বিসিএস হেলথ ক্যাডার এসোসিয়েশন এ ধরনের একতরফা সংস্কার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করছে।
বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের (বিএএসএ) সভাপতি মো. আনোয়ার উল্ল্যাহ গণমাধ্যমকে বলেন, উচ্চ আদালতের রায়ের ভিত্তিতে উপসচিব পদে পদোন্নতিতে প্রশাসন ক্যাডার থেকে ৭৫ শতাংশ ও অন্য ক্যাডার থেকে ২৫ শতাংশ নেওয়া হয়। এটি একটি মীমাংসিত বিষয়ে। এ বিষয়ে নতুন করে ভিন্ন সুপারিশ প্রস্তাবের বিষয়টি আমাদের উদ্বেগ উৎকণ্ঠা বাড়াচ্ছে। জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন যদি তাদের এই দাবি মেনে না নেয় তাহলে নতুন করে কর্মসূচি দেয়ার কথাও ভাবছে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মো মোখলেস উর রহমান বলেন, কয়েকটি মৌলিক বিষয় নিয়ে ভুল বোঝাবুঝি হচ্ছে। চলতি সপ্তাহেই বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের (বিএএসএ) সঙ্গে বসবে কমিশন। এরপর কারও মধ্যে ভুল বোঝাবুঝির সুযোগ থাকবে না। অন্যান্য ক্যাডারের সাথে আগেই বৈঠক হয়েছে বলেও দাবি করেন তিনি।