বঙ্গবন্ধু পরিষদ সিন্ডিকেট চালাচ্ছে বিআরডিবি!
- আপডেট সময় : ০৬:০০:২৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৪ ৪৬৮ বার পড়া হয়েছে
ছাত্র জনতার বিপ্লবে হাসিনা সরকারের পতন ঘটার পর প্রতিটি দপ্তর, মন্ত্রনালয়ে কিছু পরিবর্তন ঘটলেও ব্যতিক্রম দেখা যাচ্ছে বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ডের সদর দপ্তরে। ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের দোসর ও সমর্থিত কর্মকর্তরা গুরুত্বপূর্ন দায়িত্বে এখনো আছেন বহাল তবিয়তে। শুধু তাই নয় তৈরি করে রেখেছে শক্ত সিন্ডিকেট। বলা যায় বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ড (বিআরডিবি) সদর দপ্তর অনেকটাই আওয়ামীলীগ সমর্থিত কর্মকর্তাদের নিয়ন্ত্রণে।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আস্থাভাজন ব্যক্তি হিসেবে ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে বোর্ডের মহাপরিচালক (গ্রেড-১) পদে নিয়োগ লাভ করেন আ: গাফফার খান। সরকার পরিবর্তন হলেও বর্তমানে তিনি ঐ পদেই বহাল রয়েছেন। আওয়ামীপন্থী ও সাবেক ছাত্রলীগের সদস্য ধারা গঠিত বর্তমান বোর্ডের শীর্ষ কর্মকর্তা এবং বিআরডিবি বঙ্গবন্ধু পরিষদের আওয়ামীপন্থী নেতারা বিআরডিবিতে কর্মরত অন্য দলের সমর্থকদের কোনঠাসা করে রেখেছেন। শেখ হাসিনার আমলে নিয়োগ প্রাপ্ত বিআরডিবির পরিচালক প্রশাসন পদে ড. মোঃ মোকতার হোসেন নিজেকে জামায়াত সমর্থক পরিচয় দিয়ে সদর দপ্তরকে আওয়ামীপন্থীদের শক্তিশালী করার চেষ্টায় লিপ্ত রয়েছেন। জানা যায়, বদলি বাণিজ্য, মামলা এবং সরকারী হাজার কোটি টাকা বিভিন্ন ব্যাংকে এফডিআর করে পুরো বিআরডিবিকে হুমকীর মধ্যে ফেলেছেন এই সিন্ডিকেটের কর্মকর্তারা। স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রনালয় থেকে জানানো হয় সদর দপ্তরে কর্মরত ৫ বছরের অধিক কর্মকর্তাদের অন্যত্র বদলি করার নির্দেশ থাকলেও অনেক কর্মকর্তার ৮ বছরের বেশি সময় হলেও আওয়ামী সমর্থক হওয়ায় এই মহাপরিচালক এখন পর্যন্ত কাউকেউ বদলি করেননি। এছাড়া একাধিক ব্যক্তির রিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম এবং দুর্নীতির প্রমাণসহ বিআরডিবির ডিজিকে কয়েকটি সংগঠন জানালেও তা বাস্তবায়ন করা হয়নি। যারা সব সময় অনিয়ম এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন তাদের সদর দপ্তর থেকে সরিয়ে আওয়ামীপন্থীদের নিয়ে আসছেন মহাপরিচালক।
মো: সিফাত আজাদ নারায়ণগঞ্জ জেলার আড়াইহাজারে উপজেলা পল্লী উন্নয়ন অফিসার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তিনি আওয়ামীপন্থী বিদায় তাকে বিআরডিবি সদরদপ্তর ঢাকায় নিয়ে আসা হয়েছে। সিফাত আজাদ দীর্ঘদিন ধরে বিআরডিবি সদরদপ্তর বঙ্গবন্ধু পরিষদের সিনিয়র সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন।
উপপরিচালক শহীদুল ইসলাম (মনিটরিং) সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি ও বঙ্গবন্ধু পরিষদের বর্তমান উপদেষ্টা। শহীদুল ইসলাম সদর দপ্তরে ৮ বছর ধরে কর্মরত আছেন। উপপরিচালক নুরুজ্জামান (পিআরসি) সাবেক মন্ত্রী তাজুল ইসলামের আর্শীবাদপুষ্ট হওয়ায় তিনি সদর দপ্তরে ৮ বছর ধরে আছেন। বিভিন্ন সময় তার বিরুদ্ধে অনিয়মের প্রমাণ পাওয়া গেলেও ব্যবস্থা নেওয়া নেয়নি কর্তৃপক্ষ। জানা যায়, উপপরিচালক নুরুজামানের বিরুদ্ধে একাধিক পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশের পাশাপাশি তার বিরুদ্ধে দুদকেও রয়েছে অভিযোগ। এই নুরুজ্জামান গেল সরকারের আমলে সুযোগ সুবিধা ভোগ করে শত শত কোটি টাকা মালিক হয়েছেন।
সহকারী পরিচালক শরীয়ত উল্লাহ (প্রশিক্ষণ) সাবেক ছাত্রলীগ নেতা এবং বঙ্গবন্ধু পরিষদের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক। তিনি সদর দপ্তরে ৮ বছরের বেশি সময় ধরে কর্মরত আছেন। উপপরিচালক মহিদুর রহমান মোল্লা (প্রশিক্ষণ) তিনি ৫ বছরে বর্তমানে উপপরিচালক প্রশাসনে পৌছে গেছেন। মহিদুর রহমান বঙ্গবন্ধু পরিষদের পৃষ্ঠপোষক এবং বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে একাধিক কবিতা লিখেছেন। এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ভাষান চরে প্রশিক্ষণের নামে বিগত সরকারের আমলে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। আওয়ামীপন্থী সিন্ডিকেটের আর সদস্যরা হলেন, মাহফুজ আলম সহকারী পরিচালক (মনিটরিং) তিনি বঙ্গবন্ধু পরিষদের সহ-সভাপতি।
গোলাম রহমান রাজা সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) তিনি বঙ্গবন্ধু পরিষদের সহ-সভাপতি। সিদ্ধার্থ কুমার,সহকারী পরিচালক (প্রশাসন), সহ সভাপতি বঙ্গবন্ধু পরিষদ। তপন কুমার মন্ডল, উপদেষ্টা বঙ্গবন্ধু পরিষদ ও প্রকল্প পরিচালক,পিআরডিপি-৩। কল্লোল সরজার, প্রকল্প পরিচালক,পিইপি,তিনি রয়ের এজেন্ট হিসেবেও কাজ করছেন। আলাউদ্দিন সরকার, প্রকল্প পরিচালক (পজীক) উপদেষ্টা, বঙ্গবন্ধু পরিষদ। এছাড়া আরো অসংখ্য কর্মকর্তা যারা বঙ্গবন্ধু পরিষদের গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে সদর দপ্তরে বহাল তবিয়তে রয়েছেন এবং সিন্ডিকেটের বলয় তৈরি করছেন। যারা পুরো বিআরডিবি সদর দপ্তরসহ মাঠ পর্যায়ও নিয়ন্ত্রণ করছেন। জানা যায়, বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে যোগসাজশের মাধ্যমে পণ্যের অতিরিক্ত দাম নির্ধারণসহ বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতি করে অর্থ আত্মসাতের ঘটনা ঘটে এই সিন্ডিকেটের মাধ্যমে। কর্তৃপক্ষ এসব বিষয়ে নির্বিকার থাকায় একই ঘটনা পুনরাবৃত্তি হয়। বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে টেন্ডার কারসাজি, অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়গুলো গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলেও অপকর্মের হোতারা সিন্ডিকেটের লোক হওয়াতে বেশিরভাগ সময় শাস্তি এড়িয়ে যেতে সক্ষম হয়েছে।