* মিয়ানমারে বিজিপি ফাঁড়িতে আগুন * কালো ধোঁয়ায় ছেয়ে গেছে
অশান্ত পরিস্থিতি সীমান্তে
- আপডেট সময় : ১২:১৭:৩০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৪ ২৭১ বার পড়া হয়েছে
মিয়ানমারে বিভিন্ন স্থাপনায় আগুন জ¦লছে। বাংলাদেশের ঘুমধুম থেকে তা দেখা যাচ্ছে। আকারান আর্মি বিজিপির ফাঁড়িতে আগুন দিয়ে থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে পরিস্থিতি অবনতি হতে পারে। এপারে বাংলাদেশ অংশে বিজিবি ও কোস্ট গার্ড নিরাপত্তা জোরদার করেছে। যাতে রোহিঙ্গা বা তাদের পলাতক সেনা সদস্যরা ঢুকে পড়তে না পারে।
বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারের পরিস্থিতি আবারও অশান্ত হয়ে উঠছে। গতকাল সোমবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে মিয়ানমার অংশ থেকে কালো ধোঁয়ার কুণ্ডলি দেখা গেছে। যে স্থান থেকে ধোঁয়া উঠতে দেখা যাচ্ছে সেটি মিয়ানমারের ঢেঁকিবনিয়া এলাকা বলে জানিয়েছেন ঘুমধুম ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আজিজ। তিনি বলেন, ‘ধারণা করা হচ্ছে সীমান্তবর্তী মিয়ানমার বিজিপির কয়েকটি ফাঁড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে।’
বিভিন্ন সূত্র থেকে পাওয়া তথ্যের বরাত দিয়ে তুমব্রুর স্থানীয়রা বলেন, সীমান্তে বিজিপি সদস্যদের বিতাড়িত করে তাদের ঘাঁটিতে আরাকান আর্মির সদস্যদের শক্ত অবস্থান নেওয়ার খবর পাওয়া যাচ্ছে। নিজেদের অবস্থান জানান দিতে রাতের বেলা তারা গুলিবর্ষণ করে, দিনে পাহাড়ে নির্মিত বাংকারে অবস্থান নেয়। যা সীমান্তের এপার থেকেও দেখা যায়। সোমবার ধোঁয়ার কুণ্ডলির সঙ্গে সঙ্গে কিছু গুলির শব্দও ভেসে এসেছে। অন্যদিকে টেকনাফের নাফ নদীর ওপার থেকে আসছে থেমে থেমে বিস্ফোরণের শব্দ।
হোয়াইক্যং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নুর আহমদ আনোয়ারি জানিয়েছেন, নাফ নদীর ওপার থেকে থেমে থেমে গুলি ও বিস্ফোরণের আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে। সীমান্ত এলাকার মানুষের মাঝে উদ্বেগ এখনো রয়ে গেছে।
উনচিপ্রাং এলাকার বাসিন্দারা জানান, হোয়াইক্যং লম্বাবিল ও উনচিপ্রাং সীমান্তের ওপারে নাফ নদীতে তোতার দ্বীপ নামে একটি ছোট দ্বীপ রয়েছে। ওই দ্বীপের কাছাকাছি মিয়ানমারের চাকমাকাটা, কোয়াংচি বং ও কুমিরখালী এলাকায় বিজিপির ঘাঁটি দখলে নিতে যুদ্ধ চলছে বলে জানা গেছে। এর জের ধরে দ্বীপে অবস্থান নেওয়া কিছু রোহিঙ্গা নাগরিককে নাফ নদীতে নেমে যেতে দেখা যায়। এসব রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করতে পারে বলে স্থানীয়দের মধ্যে এক ধরনের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে বলে জানান সীমান্তের বাসিন্দারা। তবে বিজিবি ও কোস্টগার্ডের কঠোর নজরদারি রয়েছে বলেও জানান তারা।
নাফ নদী পেরিয়ে একজন রোহিঙ্গাও যেন বাংলাদেশে প্রবেশ করতে না পারে সে ব্যাপারে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় থাকার কথা জানিয়েছেন কোস্টগার্ডের টেকনাফ স্টেশন কমান্ডার লেফটেন্যান্ট কমান্ডার লুৎফুর লাহিল মাজিদ। নাফ নদী দিয়ে অনুপ্রবেশের চেষ্টাকালে কোস্ট গার্ড এ পর্যন্ত ১০৪ জন রোহিঙ্গাকে পুশব্যাক করেছে।
টেকনাফ ব্যাটালিয়নের (বিজিবি-২) অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. মহিউদ্দীন আহমেদ বলেন, নাফ নদী অতিক্রম করে মিয়ানমারের রোহিঙ্গা নাগরিকদের পাশাপাশি কোনো লোকজন যাতে টেকনাফ সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশ করতে না পারে, সেজন্য অতিরিক্ত বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। সেই লক্ষ্যে টেকনাফের সীমান্ত পয়েন্টে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।
এদিকে মিয়ানমারের মংডু থেকে ছোট ছোট ট্রলারে টেকনাফ সীমান্ত দিয়ে কয়েকদিন ধরে সীমান্তে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করছে অনেক রোহিঙ্গা। একজন রোহিঙ্গাও যাতে সীমান্ত দিয়ে ডুকতে না পারে, তা নিশ্চিত করতে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় রয়েছে বিজিবি।
অধিনায়ক আরও বলেন, বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে লোকজন অনুপ্রবেশের চেষ্টা চালাচ্ছে। আমরা নতুন করে কাউকে ঢুকতে দিচ্ছি না। আজকে পর্যন্ত ১৩৭ জনকে প্রতিহত করা হয়েছে। অন্যদিনের তুলনায় এ দিন সীমান্ত শান্ত ছিল।
বিভাগীয় কমিশনার বলেন, সীমান্ত পরিস্থিতি আগের চেয়ে উন্নত হয়েছে। এই পরিস্থিতিকে অস্বাভাবিক বলা যাবে না।
উপস্থিত গণমাধ্যমকর্মীদের প্রশ্নের জাবাবে বিভাগীয় কমিশনার বলেন, সীমান্তের পরিস্থিতি বিবেচনা করে নাইক্ষ্যংছড়ি ঘুমধুম উচ্চ বিদ্যালয় এসএসসি পরীক্ষার কেন্দ্র সরিয়ে পাশের দুটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে স্থানান্তরিত করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে এ ব্যাপারে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা বিভাগ থেকে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
পালিয়ে আশ্রয় নেওয়া ৩৩০ বিজিপিসহ মিয়ানমারের অন্য অনুপ্রবেশকারীদের ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া সম্পর্কে মো. তোফায়েল ইসলাম বলেন, “বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশ মিয়ানমারের মন্ত্রণালয়ের আলোচনা চলছে। ২-৩ দিনের মধ্যে এটা চূড়ান্ত হবে।”
সীমান্ত পরিস্থিতি পরিদর্শনকালে পুলিশ চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি নুরে আলম মিনা বলেন, ‘সীমান্তের বিষয়ে কী হচ্ছে তা বিজিবি দেখছে। তবে মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সংঘর্ষ ও সংঘাতের বিষয়ে সীমান্ত এলাকায় কোনো ধরনের হুমকি নেই। পুলিশ প্রয়োজনে সকল ধরনের সহযোগিতা করে যাচ্ছে। সীমান্ত ইস্যুকে কেন্দ্র করে কোন অপরাধীচক্র সক্রিয় হয়ে উঠলে তা দমন করা হবে। কোন অপরাধীকে ছাড় দেওয়া হবে না।
রোহিঙ্গা ক্যাম্পের শৃঙ্খলা বিষয়ে জানতে চাইলে নুরে আলম মিনা বলেন, বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা নাগরিকদের নিরাপত্তার জন্য আলাদা বাহিনী রয়েছে। ত্রাণ প্রত্যাবাসন কমিশনারের সুপারিশ মতো জেলা পুলিশ সহযোগিতা করে যাচ্ছে। ক্যাম্পে কোন সন্ত্রাসী গ্রুপকে মাথা ছাড়া দিয়ে উঠতে দেওয়া হবে না।