ঢাকা ০২:২৩ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৩০ জুন ২০২৫

কাজে না ফিরলে কঠোর ব্যবস্থা

বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট সময় : ০৯:০৬:৪২ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৯ জুন ২০২৫ ১১ বার পড়া হয়েছে
দৈনিক গনমুক্তি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) আন্দোলনরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অনতিবিলম্বে কর্মস্থলে ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে সরকার। অন্যথায় দেশের জনগণ ও অর্থনীতির সুরক্ষায় সরকার কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার বার্তা দেয়া হয়েছে। সম্প্রতি এনবিয়ার পুনর্গঠনের সিদ্ধান্তের পর এর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের লাগাতার আন্দোলন এবং কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচির প্রেক্ষিতে এ বিবৃতি দিয়েছে সরকার।
এদিকে এনবিআরের আন্দোলনকারী কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেছেন, কর্মকর্তারা শাটডাউন কর্মসূচি পালন করতে চাইলে করুক। গতকাল রোববার দুপুরে অর্থ মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে অর্থ উপদেষ্টা এসব কথা বলেন। অর্থ উপদেষ্টা বলেন, আজ (গতকাল) এনবিআরের কর্মকর্তাদের আন্দোলনের বিষয় নিয়ে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। এ বিষয়ে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানানো হবে। আন্দোলনকারী এনবিআর কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক না করার বিষয়ে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে। আগামী ১ জুলাই তাদের সঙ্গে যে বৈঠক হওয়ার কথা, তাও হবে কি না, সে সিদ্ধান্ত পরে নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা।
প্রধান উপদেস্টার কার্যালয় থেকে দেয়া বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের বাজেট ব্যবস্থাপনায় উন্নয়নমুখী কার্যক্রম পরিচালনার সবচেয়ে বড় সীমাবদ্ধতা হলো দুর্বল রাজস্ব সংগ্রহ ব্যবস্থা। রাষ্ট্রের প্রয়োজনের তুলনায় আমাদের রাজস্ব সংগ্রহ অনেক কম। এর মূল কারণ হলো আমাদের রাজস্ব আহরণ ব্যবস্থাপনার নানা দুর্বলতা, অনিয়ম ও দুর্নীতি। এ প্রেক্ষিতে অন্তর্বর্তী সরকার সকল অংশীজনের পরামর্শ অনুযায়ী জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) পুনর্গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এই পুনর্গঠনের সিদ্ধান্তের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আন্দোলনের কারণে জনদুর্ভোগ তৈরি হয়েছে উল্লেখ করে বিবৃতি বলা হয়, সরকার গভীর উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করছে যে, রাজস্ব সংস্কারের কাজকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য কতিপয় কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ নজিরবিহীনভাবে গত ২ মাস ধরে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য, আমদানী-রপ্তানি এবং রাজস্ব আদায় কার্যক্রম অন্যায় ও অনৈতিকভাবে ব্যাহত করে মারাত্মকভাবে ব্যাহত করে আন্দোলনের নামে চরম দুর্ভোগ তৈরি করেছে যা সম্পূর্ণভাবে অগ্রহণযোগ্য।
এনবিআরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আন্দোলনকে সংস্কারবিরোধী আখ্যা দিয়ে বিবৃতি আরও বলা হয়, সংস্কারের বিরোধিতা ছাড়াও অর্থ বছরের শেষ ২ মাসে তারা রাজস্ব আদায় কার্যক্রম মারাত্মকভাবে বাধাগ্রস্ত করেছে। এই তথাকথিত আন্দোলন পরিকল্পিত ও দুরভিসন্ধিমূলক যা জাতীয় স্বার্থ এবং নাগরিক অধিকারের চরম পরিপন্থি। সরকারের পক্ষ থেকে রাজস্ব বোর্ডের কর্মকর্তা-কর্মচারিদের দাবি বিবেচনায় নেয়ার সুস্পষ্ট ঘোষণা দেয়া হয় এবং আলোচনায় আসার আহ্বান জানালেও তারা তা অগ্রাহ্য করে। আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার গ্রহণযোগ্য সমাধান না করে তারা আন্দোলনের নামে অনমনীয় অবস্থান নিয়ে ক্রমাগত দেশের অর্থনীতির ক্ষতি করে চলেছে।
এ পরিস্থিতিতে জাতীয় স্বার্থে সরকার জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের আওতাধীন সকল কাস্টমস হাউস, আইসিডি, বন্ড কমিশনারেট এবং শুল্ক স্টেশনসমূহের সকল শ্রেণির চাকরিকে অত্যাবশ্যকীয় সার্ভিস (ঊংংবহঃরধষ ঝবৎারপবং) ঘোষণা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
অপরদিকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের আন্দোলনের কোনও সমাধান হয়নি বলে জানিয়েছে ‘এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ’। সংগঠনটি জানিয়েছে, পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী ‘মার্চ টু এনবিআর’ ও পূর্ণাঙ্গ শাটডাউন কর্মসূচি আগের মতোই চলবে। গতকাল রোববার বিকালে রাজধানীর এনবিআরের প্রধান কার্যালয়ের মূল ফটকের সামনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই ঘোষণা দেন সংগঠনের মহাসচিব ও অতিরিক্ত কর কমিশনার সেহেলা সিদ্দিকা।
তিনি বলেন, সরকার একতরফাভাবে এনবিআরের সব স্তরের চাকরিকে অত্যাবশ্যকীয় সার্ভিস ঘোষণা করেছে। এটি আমাদের দাবি ও বাস্তব সংকটের প্রতি চরম উদাসীনতা ও অগণতান্ত্রিক মনোভাবের বহিঃপ্রকাশ। সেহেলা সিদ্দিকা আরও বলেন, আমরা বারবার আলোচনার আহ্বান জানালেও সরকার প্রশাসনিক দমননীতির আশ্রয় নিচ্ছে। এনবিআর পুনর্গঠন ও রাজস্ব সংস্কার নিয়ে আমাদের ১১ দফা যৌক্তিক দাবি রয়েছে, যেগুলোর কোনও সুরাহা ছাড়াই আমাদের কর্মবিরতির বিরুদ্ধে দমনমূলক পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
সংগঠনের নেতারা জানান, আজ সোমবার সকাল ১১টায় এনবিআর অভিমুখে পদযাত্রা অনুষ্ঠিত হবে। এর পাশাপাশি দেশের সব কর অঞ্চল, কাস্টম হাউস ও শুল্ক স্টেশনেও শাটডাউন কর্মসূচি বহাল থাকবে। একইসঙ্গে তারা বলেন, আমরা সরকারকে আবারও আলোচনার টেবিলে আসার আহ্বান জানাচ্ছি। দাবি মেনে নেওয়া হলে আমরা আন্দোলন প্রত্যাহার করতে প্রস্তুত। কিন্তু দমন-পীড়ন চালিয়ে এই ন্যায়সঙ্গত দাবি দমিয়ে রাখা যাবে না।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

কাজে না ফিরলে কঠোর ব্যবস্থা

আপডেট সময় : ০৯:০৬:৪২ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৯ জুন ২০২৫

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) আন্দোলনরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অনতিবিলম্বে কর্মস্থলে ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে সরকার। অন্যথায় দেশের জনগণ ও অর্থনীতির সুরক্ষায় সরকার কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার বার্তা দেয়া হয়েছে। সম্প্রতি এনবিয়ার পুনর্গঠনের সিদ্ধান্তের পর এর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের লাগাতার আন্দোলন এবং কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচির প্রেক্ষিতে এ বিবৃতি দিয়েছে সরকার।
এদিকে এনবিআরের আন্দোলনকারী কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেছেন, কর্মকর্তারা শাটডাউন কর্মসূচি পালন করতে চাইলে করুক। গতকাল রোববার দুপুরে অর্থ মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে অর্থ উপদেষ্টা এসব কথা বলেন। অর্থ উপদেষ্টা বলেন, আজ (গতকাল) এনবিআরের কর্মকর্তাদের আন্দোলনের বিষয় নিয়ে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। এ বিষয়ে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানানো হবে। আন্দোলনকারী এনবিআর কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক না করার বিষয়ে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে। আগামী ১ জুলাই তাদের সঙ্গে যে বৈঠক হওয়ার কথা, তাও হবে কি না, সে সিদ্ধান্ত পরে নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা।
প্রধান উপদেস্টার কার্যালয় থেকে দেয়া বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের বাজেট ব্যবস্থাপনায় উন্নয়নমুখী কার্যক্রম পরিচালনার সবচেয়ে বড় সীমাবদ্ধতা হলো দুর্বল রাজস্ব সংগ্রহ ব্যবস্থা। রাষ্ট্রের প্রয়োজনের তুলনায় আমাদের রাজস্ব সংগ্রহ অনেক কম। এর মূল কারণ হলো আমাদের রাজস্ব আহরণ ব্যবস্থাপনার নানা দুর্বলতা, অনিয়ম ও দুর্নীতি। এ প্রেক্ষিতে অন্তর্বর্তী সরকার সকল অংশীজনের পরামর্শ অনুযায়ী জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) পুনর্গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এই পুনর্গঠনের সিদ্ধান্তের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আন্দোলনের কারণে জনদুর্ভোগ তৈরি হয়েছে উল্লেখ করে বিবৃতি বলা হয়, সরকার গভীর উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করছে যে, রাজস্ব সংস্কারের কাজকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য কতিপয় কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ নজিরবিহীনভাবে গত ২ মাস ধরে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য, আমদানী-রপ্তানি এবং রাজস্ব আদায় কার্যক্রম অন্যায় ও অনৈতিকভাবে ব্যাহত করে মারাত্মকভাবে ব্যাহত করে আন্দোলনের নামে চরম দুর্ভোগ তৈরি করেছে যা সম্পূর্ণভাবে অগ্রহণযোগ্য।
এনবিআরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আন্দোলনকে সংস্কারবিরোধী আখ্যা দিয়ে বিবৃতি আরও বলা হয়, সংস্কারের বিরোধিতা ছাড়াও অর্থ বছরের শেষ ২ মাসে তারা রাজস্ব আদায় কার্যক্রম মারাত্মকভাবে বাধাগ্রস্ত করেছে। এই তথাকথিত আন্দোলন পরিকল্পিত ও দুরভিসন্ধিমূলক যা জাতীয় স্বার্থ এবং নাগরিক অধিকারের চরম পরিপন্থি। সরকারের পক্ষ থেকে রাজস্ব বোর্ডের কর্মকর্তা-কর্মচারিদের দাবি বিবেচনায় নেয়ার সুস্পষ্ট ঘোষণা দেয়া হয় এবং আলোচনায় আসার আহ্বান জানালেও তারা তা অগ্রাহ্য করে। আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার গ্রহণযোগ্য সমাধান না করে তারা আন্দোলনের নামে অনমনীয় অবস্থান নিয়ে ক্রমাগত দেশের অর্থনীতির ক্ষতি করে চলেছে।
এ পরিস্থিতিতে জাতীয় স্বার্থে সরকার জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের আওতাধীন সকল কাস্টমস হাউস, আইসিডি, বন্ড কমিশনারেট এবং শুল্ক স্টেশনসমূহের সকল শ্রেণির চাকরিকে অত্যাবশ্যকীয় সার্ভিস (ঊংংবহঃরধষ ঝবৎারপবং) ঘোষণা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
অপরদিকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের আন্দোলনের কোনও সমাধান হয়নি বলে জানিয়েছে ‘এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ’। সংগঠনটি জানিয়েছে, পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী ‘মার্চ টু এনবিআর’ ও পূর্ণাঙ্গ শাটডাউন কর্মসূচি আগের মতোই চলবে। গতকাল রোববার বিকালে রাজধানীর এনবিআরের প্রধান কার্যালয়ের মূল ফটকের সামনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই ঘোষণা দেন সংগঠনের মহাসচিব ও অতিরিক্ত কর কমিশনার সেহেলা সিদ্দিকা।
তিনি বলেন, সরকার একতরফাভাবে এনবিআরের সব স্তরের চাকরিকে অত্যাবশ্যকীয় সার্ভিস ঘোষণা করেছে। এটি আমাদের দাবি ও বাস্তব সংকটের প্রতি চরম উদাসীনতা ও অগণতান্ত্রিক মনোভাবের বহিঃপ্রকাশ। সেহেলা সিদ্দিকা আরও বলেন, আমরা বারবার আলোচনার আহ্বান জানালেও সরকার প্রশাসনিক দমননীতির আশ্রয় নিচ্ছে। এনবিআর পুনর্গঠন ও রাজস্ব সংস্কার নিয়ে আমাদের ১১ দফা যৌক্তিক দাবি রয়েছে, যেগুলোর কোনও সুরাহা ছাড়াই আমাদের কর্মবিরতির বিরুদ্ধে দমনমূলক পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
সংগঠনের নেতারা জানান, আজ সোমবার সকাল ১১টায় এনবিআর অভিমুখে পদযাত্রা অনুষ্ঠিত হবে। এর পাশাপাশি দেশের সব কর অঞ্চল, কাস্টম হাউস ও শুল্ক স্টেশনেও শাটডাউন কর্মসূচি বহাল থাকবে। একইসঙ্গে তারা বলেন, আমরা সরকারকে আবারও আলোচনার টেবিলে আসার আহ্বান জানাচ্ছি। দাবি মেনে নেওয়া হলে আমরা আন্দোলন প্রত্যাহার করতে প্রস্তুত। কিন্তু দমন-পীড়ন চালিয়ে এই ন্যায়সঙ্গত দাবি দমিয়ে রাখা যাবে না।