ঢাকা ০১:১৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫
সংবাদ শিরোনাম ::
Logo অনির্বাচিত সরকার বেশিদিন টিকে থাকতে পারে না-খন্দকার মাশুক Logo রাণীনগরে লাল মাটির রাস্তা পাকাকরণের দাবিতে শিক্ষার্থী-এলাকাবাসীদের মানববন্ধন Logo বরগুনার তালতলীর কুখ্যাত আসামি আল আমিন গ্রেফতার Logo ‘বিএনপি ক্ষমতায় গেলে গ্রাম থেকে শহর, সবখানেই মানুষ শান্তিতে ঘুমাতে পারবে’ Logo কেশবপুর উপজেলা মাসিক এনজিও সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত Logo কোম্পানীগঞ্জে বিএনপির প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পালিত Logo নালিতাবাড়ীতে বিএনপির ৪৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী Logo নেপথ্যে কলকাঠি নাড়ে কয়েকজন কোটিপতি কর্মচারী, ইন্ধনদাতা Logo নেত্রকোণায় তামাক নিয়ন্ত্রণে অবস্থান কর্মসূচি Logo নওগাঁয় পরিবেশ অধিদপ্তরের উদ্যোগে দূষণ নিয়ন্ত্রণে জনসচেতনতামূলক সভা

কারাগারে দিনকাল কেমন কাটছে মিন্নি ও ঐশীর

বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট সময় : ৪৫৭ বার পড়া হয়েছে
দৈনিক গনমুক্তি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

রাজধানীর বেইলি রোডের বাসায় পুলিশ কর্মকর্তা বাবা ও মায়ের হত্যার ঘটনায় দেশজুড়ে আলোচিত দীর্ঘদিন কারাগারে আটক ঐশী রহমান। মাদকাশক্ত বেপরোয়া হয়ে প্রেমিককে নিয়ে বাবা মাকে নৃশংস ভাবে হত্যা করেছিল ঐশী। ২০১৩ সাল থেকে কারাগারে থাকা ঐশীর বিরুদ্ধে ইতিমধ্যে যাবজ্জীবন সাজার রায় হয়েছে। সাজার রায় হওয়ার পর থেকে কারাগারে তাকে থাকতে হচ্ছে কয়েদির পোশাকে। বর্তমানে কাশিমপুরের মহিলা কারাগারে অবস্থান করা ঐশী একাকি জীবন কাটাচ্ছেন। পরিবার থেকে কেউ সেভাবে খোঁজও রাখেনি এই তরুণীর। তবে মাঝে মধ্যে কারাগার থেকে ফোনে পরিবারের সঙ্গে ঐশী যোগাযোগ করেন বলে কারাসূত্রে জানা গেছে। ঐশী রহমানের বাবা ছিলেন পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) পরিদর্শক মাহফুজুর রহমান। তার মা ছিলেন স্বপ্না রহমান।
অপরদিকে বরগুনার আলোচিত রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় মৃত্যুদন্ড প্রাপ্ত আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি বর্তমানে গাজীপুরের কাশিমপুর মহিলা কারাগারের কনডেম সেলে বন্দি রয়েছেন। তবে কারাগারে তিনি ভালো নেই বলে দাবি করেছেন তার বাবা মোজাম্মেল হোসেন কিশোর। মিন্নির শরীরে নানা রোগে বাসা বেঁধেছে। তাকে কারা হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে বলে জানান কারা কর্তৃপক্ষ।
জানা গেছে, ২০১৩ সালের ১৬ আগস্ট সকালে চামেলীবাগের বাসা থেকে পুলিশ পরিদর্শক মাহফুজুর রহমান ও তার স্ত্রী স্বপ্না রহমানের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এর আগেই ঐশী বাসা থেকে পালিয়ে যান। পরদিন ১৭ আগস্ট মাহফুজুর রহমানের ভাই মশিউর রহমান এ ঘটনায় পল্টন থানায় হত্যা মামলা করেন। ওইদিনই ঐশী পল্টন থানায় আত্মসমর্পণ করে তার বাবা-মাকে খুন করার কথা জানান।
২০১৩ সালের ২৪ আগস্ট আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন ঐশী। পরে অবশ্য ওই জবানবন্দি প্রত্যাহারের জন্য আবেদন করেছিলেন। কিন্তু সাক্ষ্য, আলামত ও অন্যান্য যুক্তির পরিপ্রেক্ষিতে তা নাকচ করে দেন আদালত।
কারাগারের একটি সূত্র জানা যায়, ফজরের আজানের সময় ঘুম থেকে ওঠেন ঐশী। তিনি ফজরের নামাজ দিয়ে দিন শুরু করেন। এরপর দৈনিক নিয়ম করে পত্রিকাও পড়েন।
এছাড়াও নানা ধরনের বইপত্র পড়ে সময় কাটান এই তরুণী। কারাগারে মাঝেমধ্যে তাকে স্বনামধন্য লেখকদের বই উপন্যাস পড়তেও দেখা যায় বলে জানা গেছে।
অভিযোগ আছে, ঐশী যখন তার বাবা-মাকে হত্যা করে তখন তিনি নেশাগ্রস্ত ছিলেন। বাসায় নেশা করার জন্যই কফির সঙ্গে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে এবং পরে কুপিয়ে হত্যা করেন বাবা-মাকে। তবে কারাগারে যাওয়ার পর পুরোপুরি বদলে গেছে আগের জীবন। রায়ের পর থেকে বলতে গেলে একদম চুপচাপ হয়ে যান ঐশী।
কারাগারের ওই সূত্রটি আরও জানায়, কারাগারে ঐশী ভালো আছেন। সবসময় চুপচাপ থাকেন। নামাজ-কালাম পড়ে সময় কাটে তার। এছাড়া কিছু বইপত্র পড়েন। পরিবারের কেউ খোঁজখবর নিতে আসে কি-না জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে কারাগারের এক কর্মকর্তা বলেন, এখন করোনার কারণে দেখা সাক্ষাৎ একেবারেই বন্ধ। আমি এখানে আসার পর এখন পর্যন্ত তার পরিবারের কাউকে আসতে দেখিনি।
ওই সূত্রটি জানায়, মাঝেমধ্যে কারাগার থেকে ফোনে স্বজনদের সঙ্গে কথা বলেন ঐশী। বাবা-মাকে হত্যার দায়ে ২০১৫ সালে ঐশীকে ফাঁসির আদেশ দেন বিচারিক আদালত। তার বন্ধু রনির সাজা হয় দুই বছরের কারাদন্ড। পরে আপিলে ২০১৭ সালের ৬ জুন উচ্চ আদালত ঐশীর সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন করে। সেই থেকে ঐশী স্থায়ীভাবে কাশিমপুর মহিলা কারাগারে আছেন।
অপরদিকে বরগুনার আলোচিত রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় মৃত্যুদন্ড প্রাপ্ত আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি বর্তমানে গাজীপুরের কাশিমপুর মহিলা কারাগারের কনডেম সেলে বন্দি রয়েছেন। তবে কারাগারে তিনি ভালো নেই বলে দাবি করেছেন তার বাবা মোজাম্মেল হোসেন কিশোর।
কারাগারে মিন্নি কেমন আছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, শরীরের নানা ধরনের রোগ বাসা বেঁধেছে। এছাড়াও কারাগারে দেওয়া খাবার সে খেতে পারে না। প্রিজন ক্যান্টিন থেকে খাবার কিনে খেতে গেলেও অনেক টাকা লাগে। ওখানে একটি ডিমের দাম ৮০ টাকা, এক টুকরো পোল্ট্রি মুরগির মাংশের দাম দেড়শ টাকা, একটি ডাবের দাম দেড়শ টাকা। কারাগারে যার টাকা আছে সেই ভালো থাকতে পারে।
কাশিমপুর মহিলা কারাগারের জেল সুপার জানান, কারাগারে মিন্নি ভালো আছেন। তিনি একজন মৃত্যুদন্ড প্রাপ্ত আসামি। তাকে দিয়ে কোনো কাজ করানোর সুযোগ নেই। আর কারাগারের প্রিজন ক্যান্টিনে একটি ডিমের দাম ২০ থেকে ২৫ টাকা। একশ্রেণির দুষ্টুলোক কারাগারের বিরুদ্ধে গুজব এবং প্রপাগান্ডা ছড়াচ্ছে।
গাজীপুরের কাশিমপুর মহিলা কেন্দ্রীয় কারাগারের মাধবীলতা সেল। এই সেলেই থাকেন স্বামী রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় মৃত্যুদন্ড পাওয়া আয়শা সিদ্দিকা মিন্নি। তাঁর সঙ্গে ওই সেলে থাকেন আরও দুই ফাঁসির আসামি। তেমন কোনো কাজ দেয়া হয় না তাঁদের। কারা কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাঁদের দিন কাটে কনডেম সেলে (নির্জন প্রকোষ্ঠে) শুয়ে, বসে আর প্রার্থনা করে।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

কারাগারে দিনকাল কেমন কাটছে মিন্নি ও ঐশীর

আপডেট সময় :

রাজধানীর বেইলি রোডের বাসায় পুলিশ কর্মকর্তা বাবা ও মায়ের হত্যার ঘটনায় দেশজুড়ে আলোচিত দীর্ঘদিন কারাগারে আটক ঐশী রহমান। মাদকাশক্ত বেপরোয়া হয়ে প্রেমিককে নিয়ে বাবা মাকে নৃশংস ভাবে হত্যা করেছিল ঐশী। ২০১৩ সাল থেকে কারাগারে থাকা ঐশীর বিরুদ্ধে ইতিমধ্যে যাবজ্জীবন সাজার রায় হয়েছে। সাজার রায় হওয়ার পর থেকে কারাগারে তাকে থাকতে হচ্ছে কয়েদির পোশাকে। বর্তমানে কাশিমপুরের মহিলা কারাগারে অবস্থান করা ঐশী একাকি জীবন কাটাচ্ছেন। পরিবার থেকে কেউ সেভাবে খোঁজও রাখেনি এই তরুণীর। তবে মাঝে মধ্যে কারাগার থেকে ফোনে পরিবারের সঙ্গে ঐশী যোগাযোগ করেন বলে কারাসূত্রে জানা গেছে। ঐশী রহমানের বাবা ছিলেন পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) পরিদর্শক মাহফুজুর রহমান। তার মা ছিলেন স্বপ্না রহমান।
অপরদিকে বরগুনার আলোচিত রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় মৃত্যুদন্ড প্রাপ্ত আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি বর্তমানে গাজীপুরের কাশিমপুর মহিলা কারাগারের কনডেম সেলে বন্দি রয়েছেন। তবে কারাগারে তিনি ভালো নেই বলে দাবি করেছেন তার বাবা মোজাম্মেল হোসেন কিশোর। মিন্নির শরীরে নানা রোগে বাসা বেঁধেছে। তাকে কারা হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে বলে জানান কারা কর্তৃপক্ষ।
জানা গেছে, ২০১৩ সালের ১৬ আগস্ট সকালে চামেলীবাগের বাসা থেকে পুলিশ পরিদর্শক মাহফুজুর রহমান ও তার স্ত্রী স্বপ্না রহমানের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এর আগেই ঐশী বাসা থেকে পালিয়ে যান। পরদিন ১৭ আগস্ট মাহফুজুর রহমানের ভাই মশিউর রহমান এ ঘটনায় পল্টন থানায় হত্যা মামলা করেন। ওইদিনই ঐশী পল্টন থানায় আত্মসমর্পণ করে তার বাবা-মাকে খুন করার কথা জানান।
২০১৩ সালের ২৪ আগস্ট আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন ঐশী। পরে অবশ্য ওই জবানবন্দি প্রত্যাহারের জন্য আবেদন করেছিলেন। কিন্তু সাক্ষ্য, আলামত ও অন্যান্য যুক্তির পরিপ্রেক্ষিতে তা নাকচ করে দেন আদালত।
কারাগারের একটি সূত্র জানা যায়, ফজরের আজানের সময় ঘুম থেকে ওঠেন ঐশী। তিনি ফজরের নামাজ দিয়ে দিন শুরু করেন। এরপর দৈনিক নিয়ম করে পত্রিকাও পড়েন।
এছাড়াও নানা ধরনের বইপত্র পড়ে সময় কাটান এই তরুণী। কারাগারে মাঝেমধ্যে তাকে স্বনামধন্য লেখকদের বই উপন্যাস পড়তেও দেখা যায় বলে জানা গেছে।
অভিযোগ আছে, ঐশী যখন তার বাবা-মাকে হত্যা করে তখন তিনি নেশাগ্রস্ত ছিলেন। বাসায় নেশা করার জন্যই কফির সঙ্গে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে এবং পরে কুপিয়ে হত্যা করেন বাবা-মাকে। তবে কারাগারে যাওয়ার পর পুরোপুরি বদলে গেছে আগের জীবন। রায়ের পর থেকে বলতে গেলে একদম চুপচাপ হয়ে যান ঐশী।
কারাগারের ওই সূত্রটি আরও জানায়, কারাগারে ঐশী ভালো আছেন। সবসময় চুপচাপ থাকেন। নামাজ-কালাম পড়ে সময় কাটে তার। এছাড়া কিছু বইপত্র পড়েন। পরিবারের কেউ খোঁজখবর নিতে আসে কি-না জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে কারাগারের এক কর্মকর্তা বলেন, এখন করোনার কারণে দেখা সাক্ষাৎ একেবারেই বন্ধ। আমি এখানে আসার পর এখন পর্যন্ত তার পরিবারের কাউকে আসতে দেখিনি।
ওই সূত্রটি জানায়, মাঝেমধ্যে কারাগার থেকে ফোনে স্বজনদের সঙ্গে কথা বলেন ঐশী। বাবা-মাকে হত্যার দায়ে ২০১৫ সালে ঐশীকে ফাঁসির আদেশ দেন বিচারিক আদালত। তার বন্ধু রনির সাজা হয় দুই বছরের কারাদন্ড। পরে আপিলে ২০১৭ সালের ৬ জুন উচ্চ আদালত ঐশীর সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন করে। সেই থেকে ঐশী স্থায়ীভাবে কাশিমপুর মহিলা কারাগারে আছেন।
অপরদিকে বরগুনার আলোচিত রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় মৃত্যুদন্ড প্রাপ্ত আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি বর্তমানে গাজীপুরের কাশিমপুর মহিলা কারাগারের কনডেম সেলে বন্দি রয়েছেন। তবে কারাগারে তিনি ভালো নেই বলে দাবি করেছেন তার বাবা মোজাম্মেল হোসেন কিশোর।
কারাগারে মিন্নি কেমন আছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, শরীরের নানা ধরনের রোগ বাসা বেঁধেছে। এছাড়াও কারাগারে দেওয়া খাবার সে খেতে পারে না। প্রিজন ক্যান্টিন থেকে খাবার কিনে খেতে গেলেও অনেক টাকা লাগে। ওখানে একটি ডিমের দাম ৮০ টাকা, এক টুকরো পোল্ট্রি মুরগির মাংশের দাম দেড়শ টাকা, একটি ডাবের দাম দেড়শ টাকা। কারাগারে যার টাকা আছে সেই ভালো থাকতে পারে।
কাশিমপুর মহিলা কারাগারের জেল সুপার জানান, কারাগারে মিন্নি ভালো আছেন। তিনি একজন মৃত্যুদন্ড প্রাপ্ত আসামি। তাকে দিয়ে কোনো কাজ করানোর সুযোগ নেই। আর কারাগারের প্রিজন ক্যান্টিনে একটি ডিমের দাম ২০ থেকে ২৫ টাকা। একশ্রেণির দুষ্টুলোক কারাগারের বিরুদ্ধে গুজব এবং প্রপাগান্ডা ছড়াচ্ছে।
গাজীপুরের কাশিমপুর মহিলা কেন্দ্রীয় কারাগারের মাধবীলতা সেল। এই সেলেই থাকেন স্বামী রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় মৃত্যুদন্ড পাওয়া আয়শা সিদ্দিকা মিন্নি। তাঁর সঙ্গে ওই সেলে থাকেন আরও দুই ফাঁসির আসামি। তেমন কোনো কাজ দেয়া হয় না তাঁদের। কারা কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাঁদের দিন কাটে কনডেম সেলে (নির্জন প্রকোষ্ঠে) শুয়ে, বসে আর প্রার্থনা করে।