ঢাকা ০৩:৪৩ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ জুন ২০২৫

দীর্ঘমেয়াদি ষড়যন্ত্রে পিলখানা হত্যাকাণ্ড

স্টাফ রিপোর্টার
  • আপডেট সময় : ১০:৪৯:৫০ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৫ জুন ২০২৫ ৯ বার পড়া হয়েছে
দৈনিক গনমুক্তি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

রাজধানীর পিলখানায় তৎকালীন বিডিআর সদর দপ্তরে ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি সংগঠিত হত্যাকাণ্ডটি একটি ‘দীর্ঘমেয়াদি ষড়যন্ত্রের ফল’ হিসেবে প্রতীয়মান বলে জানিয়েছে জাতীয় স্বাধীন তদন্ত কমিশন। গতকাল বুধবার সকালে এক সংবাদ সম্মেলনে এই কথা জানান কমিশনের সভাপতি মেজর জেনারেল (অব.) আ ল ম ফজলুর রহমান। বাংলাদেশ রেফারেন্স ইনস্টিটিউট ফর কেমিক্যাল মেজারমেন্টসে (বিআরআইসিএম) এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে কমিশন।
সংবাদ সম্মেলনে আ ল ম ফজলুর রহমান বলেন, প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্ত থেকে পিলখানা হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে তৎকালীন রাজনৈতিক নেতাদের নানা মাত্রায় সংশ্লিষ্টতার যথেষ্ট তথ্য-প্রমাণ পাওয়া গেছে এবং বর্তমানে তথ্য-প্রমাণ যাচাই-বাছাইয়ের কাজ চলছে। পিলখানায় সংঘটিত এই হত্যাকাণ্ডটি একটি দীর্ঘমেয়াদী ষড়যন্ত্রের ফল হিসেবে কমিশনের কাছে প্রতীয়মান হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, বিভিন্ন সাক্ষ্য হতে প্রতীয়মান যে, রাজনৈতিকভাবে সমস্যা সমাধানের নামে অযথা কালক্ষেপণ করায় এবং সশস্ত্র বাহিনী ও অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী নিষ্ক্রিয় থাকার কারণে বিদ্রোহীরা নির্বিঘ্নে হত্যাকাণ্ড এবং অন্যান্য অপরাধ সংঘটন করতে পেরেছে। ২৫ ফেব্রুয়ারি সকাল থেকেই পিলখানার ভেতর থেকে আটকে পড়া অফিসার ও তাদের পরিবারের সদস্যদের বারংবার অনুরোধ ও আকুতি সত্ত্বেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
স্বাধীন তদন্ত কমিশনের সভাপতি বলেন, এই পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে এটা বলা যায় যে তৎকালীন সশস্ত্র বাহিনীর কমান্ড ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলো সময়মত সিদ্ধান্ত নেয়নি এবং অপরাধ সংঘটনের সময় তারা নিষ্ক্রিয় অবস্থায় ছিল। যার ফলে তারা বিদ্রোহ ও হত্যাকাণ্ড প্রতিহত করতে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। তৎকালীন গোয়েন্দা সংস্থাগুলো দায়িত্ব পালনে চরম অবহেলা ও ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে বলে এই পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্যে প্রতীয়মান। গোয়েন্দা ব্যর্থতার স্বরূপ ও কারণ বিশ্লেষণ করা হচ্ছে।
ঘটনা ভিন্নখাতে প্রবাহিত করা ও আলামত ধ্বংস করার প্রয়াস প্রতীয়মান হয়েছে উল্লেখ করে আ ল ম ফজলুর রহমান বলেন, এর পেছনে দায়ী ব্যক্তি ও সংস্থাগুলোকে চিহ্নিত করা হচ্ছে। পিলখানায় হত্যাযজ্ঞ চলাকালে কিছু গণমাধ্যম পক্ষপাতদুষ্ট সংবাদ প্রচার করার মাধ্যমে বিদ্রোহ উসকে দিয়েছে এবং একইসঙ্গে পরিকল্পিতভাবে সামরিক অফিসারদের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করার প্রয়াস চালিয়েছে বলে প্রতীয়মান হয়েছে। তিনি আরও বলেন, বিদেশি সংশ্লিষ্টতা সম্পর্কে ভুক্তভোগী ও প্রত্যক্ষদর্শীদের কাছ থেকে বেশ কিছু তথ্য-প্রমাণ পাওয়া গেছে, যেগুলো যাচাই-বাছাই ও বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী কমিশন মনে করে যে, সময়মতো সামরিক ব্যবস্থা নেওয়া হলে এই নৃশংস হত্যাকাণ্ড ও অন্যান্য অপরাধ প্রতিরোধ করা যেতো।
তদন্তের স্বার্থে গৃহীত পদক্ষেপ সম্পর্কে তিনি বলেন, প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ এবং তদন্ত কার্যক্রমে অধিকতর সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য কমিশন ৩৩ জন ব্যক্তির দেশত্যাগের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। পলাতক ব্যক্তিবর্গের সাক্ষ্য প্রদানের জন্য কমিশন তিনটি বিশেষ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে।
পিলখানা হত্যাকাণ্ডের তদন্তের অগ্রগতি তুলে ধরে ফজলুর রহমান বলেন, শহীদ পরিবারের সদস্যদের ছয়জনের বিস্তারিত জবানবন্দি নেওয়া হয়েছে। সব শহীদ পরিবারের সদস্যদের নিয়ে দুটি সম্মেলন করা হয়েছে। সেখানে পরিবারের সদস্যরা তাদের অভিজ্ঞতা ও মতামত ব্যক্ত করেছেন। সম্মেলনে সব ইচ্ছুক সদস্যদের লিখিত বা কমিশনে উপস্থিত হয়ে বিস্তারিত জবানবন্দি দিতে অনুরোধ করা হয়েছে এবং অনেক শহীদ পরিবারের সদস্য ইতোমধ্যেই তা করেছেন। বেঁচে ফিরে আসা অফিসারদের ১৫ জনের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছে। এছাড়াও ৫০ জন বেঁচে যাওয়া অফিসারের লিখিত জবানবন্দি প্রদান করার জন্য সেনা সদরের মাধ্যমে ব্যক্তিগতভাবে চিঠি দেওয়া হয়েছে। দুটি সম্মেলনে তাদের সঙ্গে সার্বিক বিষয়ে মতবিনিময় হয়েছে।
পিলখানার অভ্যন্তরে সংঘটিত অপরাধের ধরন সম্পর্কে তিনি বলেন, বেঁচে যাওয়া অফিসার ও তাদের পরিবারের সদস্যদের জবানবন্দি থেকে পিলখানার অভ্যন্তরে ঘটে যাওয়া এক মর্মন্তুদ চিত্র পাওয়া গেছে। অফিসারদের খুঁজে খুঁজে হত্যা করা ছাড়াও তাদের পরিবারের সদস্যদের ওপর চালানো হয়েছে অমানবিক নির্যাতন। নারী ও শিশুদের মারধর, সশস্ত্র অবস্থায় হুমকি প্রদান, বাড়িঘর ভাঙচুর, অমানবিক পরিবেশে খাবার ও পানি ছাড়া কোয়ার্টার গার্ডে দীর্ঘসময় আটকে রাখা, রাষ্ট্রের এবং ব্যক্তিগত সম্পত্তির ধ্বংস সাধন, আলামত ধ্বংস, অগ্নিসংযোগ ছাড়াও নানা ধরনের অপরাধ সংঘটিত হয়েছে। প্রাপ্ত তথ্য আরও বিশ্লেষণ করা হচ্ছে।
রাজনৈতিক ব্যক্তিদের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পর্কে কমিশনের সভাপতি বলেন, আটজন সংশ্লিষ্ট রাজনীতিবিদের জবানবন্দি নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে তিনজনের সাক্ষাৎকার কারাগারে নেওয়া হয়েছে। তিনজন উপস্থিত হয়ে সাক্ষ্য দিয়েছেন। দুজন পলাতক আওয়ামী লীগ নেতা ইমেইলে জবানবন্দি দিয়েছেন। তারা হলেন- জাহাঙ্গীর কবির নানক ও মির্জা আজম।
এখন পর্যন্ত জাতীয় স্বাধীন তদন্ত কমিশন ১৪৪ কর্মদিবস অতিবাহিত করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ৫০ এর অধিক ব্যক্তির সাক্ষ্যগ্রহণ এখনো বাকি আছে। এছাড়া কিছু সংখ্যক ব্যক্তির পুনঃসাক্ষ্য গ্রহণেরও প্রয়োজন হবে। গৃহীত সাক্ষ্যগুলোর পূর্ণাঙ্গ লিখিতরূপ প্রস্তুত, স্বাক্ষর গ্রহণ ও বিশ্লেষণের কাজ চলমান রয়েছে-এটি একটি সময়সাপেক্ষ কাজ। কিছু বিদেশি দূতাবাস ও সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করে তথ্য সংগ্রহের প্রচেষ্টা করা হচ্ছে। যার জন্য কিছু সময় প্রয়োজন। এসব বাস্তবতা বিবেচনায় নিয়ে চূড়ান্ত তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের মেয়াদ ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বৃদ্ধির জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন বিডিআর (বর্তমানে বিজিবি)-এর বিদ্রোহী জওয়ানরা সংস্থাটির সদরদপ্তর রাজধানীর পিলখানায় নারকীয় তাণ্ডব চালায়। তাদের হাতে প্রাণ হারান ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ ব্যক্তি।

 

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

দীর্ঘমেয়াদি ষড়যন্ত্রে পিলখানা হত্যাকাণ্ড

আপডেট সময় : ১০:৪৯:৫০ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৫ জুন ২০২৫

রাজধানীর পিলখানায় তৎকালীন বিডিআর সদর দপ্তরে ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি সংগঠিত হত্যাকাণ্ডটি একটি ‘দীর্ঘমেয়াদি ষড়যন্ত্রের ফল’ হিসেবে প্রতীয়মান বলে জানিয়েছে জাতীয় স্বাধীন তদন্ত কমিশন। গতকাল বুধবার সকালে এক সংবাদ সম্মেলনে এই কথা জানান কমিশনের সভাপতি মেজর জেনারেল (অব.) আ ল ম ফজলুর রহমান। বাংলাদেশ রেফারেন্স ইনস্টিটিউট ফর কেমিক্যাল মেজারমেন্টসে (বিআরআইসিএম) এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে কমিশন।
সংবাদ সম্মেলনে আ ল ম ফজলুর রহমান বলেন, প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্ত থেকে পিলখানা হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে তৎকালীন রাজনৈতিক নেতাদের নানা মাত্রায় সংশ্লিষ্টতার যথেষ্ট তথ্য-প্রমাণ পাওয়া গেছে এবং বর্তমানে তথ্য-প্রমাণ যাচাই-বাছাইয়ের কাজ চলছে। পিলখানায় সংঘটিত এই হত্যাকাণ্ডটি একটি দীর্ঘমেয়াদী ষড়যন্ত্রের ফল হিসেবে কমিশনের কাছে প্রতীয়মান হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, বিভিন্ন সাক্ষ্য হতে প্রতীয়মান যে, রাজনৈতিকভাবে সমস্যা সমাধানের নামে অযথা কালক্ষেপণ করায় এবং সশস্ত্র বাহিনী ও অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী নিষ্ক্রিয় থাকার কারণে বিদ্রোহীরা নির্বিঘ্নে হত্যাকাণ্ড এবং অন্যান্য অপরাধ সংঘটন করতে পেরেছে। ২৫ ফেব্রুয়ারি সকাল থেকেই পিলখানার ভেতর থেকে আটকে পড়া অফিসার ও তাদের পরিবারের সদস্যদের বারংবার অনুরোধ ও আকুতি সত্ত্বেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
স্বাধীন তদন্ত কমিশনের সভাপতি বলেন, এই পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে এটা বলা যায় যে তৎকালীন সশস্ত্র বাহিনীর কমান্ড ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলো সময়মত সিদ্ধান্ত নেয়নি এবং অপরাধ সংঘটনের সময় তারা নিষ্ক্রিয় অবস্থায় ছিল। যার ফলে তারা বিদ্রোহ ও হত্যাকাণ্ড প্রতিহত করতে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। তৎকালীন গোয়েন্দা সংস্থাগুলো দায়িত্ব পালনে চরম অবহেলা ও ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে বলে এই পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্যে প্রতীয়মান। গোয়েন্দা ব্যর্থতার স্বরূপ ও কারণ বিশ্লেষণ করা হচ্ছে।
ঘটনা ভিন্নখাতে প্রবাহিত করা ও আলামত ধ্বংস করার প্রয়াস প্রতীয়মান হয়েছে উল্লেখ করে আ ল ম ফজলুর রহমান বলেন, এর পেছনে দায়ী ব্যক্তি ও সংস্থাগুলোকে চিহ্নিত করা হচ্ছে। পিলখানায় হত্যাযজ্ঞ চলাকালে কিছু গণমাধ্যম পক্ষপাতদুষ্ট সংবাদ প্রচার করার মাধ্যমে বিদ্রোহ উসকে দিয়েছে এবং একইসঙ্গে পরিকল্পিতভাবে সামরিক অফিসারদের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করার প্রয়াস চালিয়েছে বলে প্রতীয়মান হয়েছে। তিনি আরও বলেন, বিদেশি সংশ্লিষ্টতা সম্পর্কে ভুক্তভোগী ও প্রত্যক্ষদর্শীদের কাছ থেকে বেশ কিছু তথ্য-প্রমাণ পাওয়া গেছে, যেগুলো যাচাই-বাছাই ও বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী কমিশন মনে করে যে, সময়মতো সামরিক ব্যবস্থা নেওয়া হলে এই নৃশংস হত্যাকাণ্ড ও অন্যান্য অপরাধ প্রতিরোধ করা যেতো।
তদন্তের স্বার্থে গৃহীত পদক্ষেপ সম্পর্কে তিনি বলেন, প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ এবং তদন্ত কার্যক্রমে অধিকতর সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য কমিশন ৩৩ জন ব্যক্তির দেশত্যাগের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। পলাতক ব্যক্তিবর্গের সাক্ষ্য প্রদানের জন্য কমিশন তিনটি বিশেষ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে।
পিলখানা হত্যাকাণ্ডের তদন্তের অগ্রগতি তুলে ধরে ফজলুর রহমান বলেন, শহীদ পরিবারের সদস্যদের ছয়জনের বিস্তারিত জবানবন্দি নেওয়া হয়েছে। সব শহীদ পরিবারের সদস্যদের নিয়ে দুটি সম্মেলন করা হয়েছে। সেখানে পরিবারের সদস্যরা তাদের অভিজ্ঞতা ও মতামত ব্যক্ত করেছেন। সম্মেলনে সব ইচ্ছুক সদস্যদের লিখিত বা কমিশনে উপস্থিত হয়ে বিস্তারিত জবানবন্দি দিতে অনুরোধ করা হয়েছে এবং অনেক শহীদ পরিবারের সদস্য ইতোমধ্যেই তা করেছেন। বেঁচে ফিরে আসা অফিসারদের ১৫ জনের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছে। এছাড়াও ৫০ জন বেঁচে যাওয়া অফিসারের লিখিত জবানবন্দি প্রদান করার জন্য সেনা সদরের মাধ্যমে ব্যক্তিগতভাবে চিঠি দেওয়া হয়েছে। দুটি সম্মেলনে তাদের সঙ্গে সার্বিক বিষয়ে মতবিনিময় হয়েছে।
পিলখানার অভ্যন্তরে সংঘটিত অপরাধের ধরন সম্পর্কে তিনি বলেন, বেঁচে যাওয়া অফিসার ও তাদের পরিবারের সদস্যদের জবানবন্দি থেকে পিলখানার অভ্যন্তরে ঘটে যাওয়া এক মর্মন্তুদ চিত্র পাওয়া গেছে। অফিসারদের খুঁজে খুঁজে হত্যা করা ছাড়াও তাদের পরিবারের সদস্যদের ওপর চালানো হয়েছে অমানবিক নির্যাতন। নারী ও শিশুদের মারধর, সশস্ত্র অবস্থায় হুমকি প্রদান, বাড়িঘর ভাঙচুর, অমানবিক পরিবেশে খাবার ও পানি ছাড়া কোয়ার্টার গার্ডে দীর্ঘসময় আটকে রাখা, রাষ্ট্রের এবং ব্যক্তিগত সম্পত্তির ধ্বংস সাধন, আলামত ধ্বংস, অগ্নিসংযোগ ছাড়াও নানা ধরনের অপরাধ সংঘটিত হয়েছে। প্রাপ্ত তথ্য আরও বিশ্লেষণ করা হচ্ছে।
রাজনৈতিক ব্যক্তিদের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পর্কে কমিশনের সভাপতি বলেন, আটজন সংশ্লিষ্ট রাজনীতিবিদের জবানবন্দি নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে তিনজনের সাক্ষাৎকার কারাগারে নেওয়া হয়েছে। তিনজন উপস্থিত হয়ে সাক্ষ্য দিয়েছেন। দুজন পলাতক আওয়ামী লীগ নেতা ইমেইলে জবানবন্দি দিয়েছেন। তারা হলেন- জাহাঙ্গীর কবির নানক ও মির্জা আজম।
এখন পর্যন্ত জাতীয় স্বাধীন তদন্ত কমিশন ১৪৪ কর্মদিবস অতিবাহিত করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ৫০ এর অধিক ব্যক্তির সাক্ষ্যগ্রহণ এখনো বাকি আছে। এছাড়া কিছু সংখ্যক ব্যক্তির পুনঃসাক্ষ্য গ্রহণেরও প্রয়োজন হবে। গৃহীত সাক্ষ্যগুলোর পূর্ণাঙ্গ লিখিতরূপ প্রস্তুত, স্বাক্ষর গ্রহণ ও বিশ্লেষণের কাজ চলমান রয়েছে-এটি একটি সময়সাপেক্ষ কাজ। কিছু বিদেশি দূতাবাস ও সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করে তথ্য সংগ্রহের প্রচেষ্টা করা হচ্ছে। যার জন্য কিছু সময় প্রয়োজন। এসব বাস্তবতা বিবেচনায় নিয়ে চূড়ান্ত তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের মেয়াদ ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বৃদ্ধির জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন বিডিআর (বর্তমানে বিজিবি)-এর বিদ্রোহী জওয়ানরা সংস্থাটির সদরদপ্তর রাজধানীর পিলখানায় নারকীয় তাণ্ডব চালায়। তাদের হাতে প্রাণ হারান ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ ব্যক্তি।