ঢাকা ০৩:৪১ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪

রাত যত গভীর ততই ভয়ঙ্কর সড়ক-মহাসড়কগুলো

মহিউদ্দিন তুষার
  • আপডেট সময় : ০৪:১৭:৫৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ১১ মার্চ ২০২৪ ১৪৩ বার পড়া হয়েছে
দৈনিক গনমুক্তি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

রাত যত গভীর হয় রাজধানীসহ মহাসড়কগুলো ততই ভয়ঙ্কর হয়ে উঠে। এই চিত্র বেশি ঘটছে ঢাকা-সিলেট, ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়কগুলোতে। এসবের কারনে অনেক সময় ঘটছে হত্যাকাণ্ডের মতো ঘটনা। এ বিষয়গুলো নিয়ে সড়কের যাত্রী ও স্থানীয়রা রীতিমত আতঙ্কিত। কিন্তু সহজে অভিযোগ করতে চায় না কেউ। পুলিশ বলছে, সড়কে অপরাধ বাড়ছে এটা সত্য তবে দমনে তারা কাজ করেছে।
জানা যায়, ঢাকা-সিলেট এবং ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়ক দুটি মাদক ব্যবসায়ীদের জন্য বেশ নিরাপদ। খুব সহজে তারা এ পথে মাদক চোরাচালান ও পাচারের কাজ করে থাকে। রাত বাড়তে থাকলে সড়কে ছিনতাই করতে সুবিধা হয় তাদের। অনেক সময় ছিনতাই-ডাকাতির সময় খুনের ঘটনা ঘটে।

স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, হাইওয়ে পুলিশ নিয়মিত এ সড়কগুলোতে টহল না দেয়ায় গত ফেব্রুয়ারী মাসে এ মহাসড়ক দুটিতে ৩০/৪০টি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। তাদের টার্গেক মোটরসাইকেল আর রিক্সায় যাতায়াত করা ব্যক্তিদের। অনেক সময় ভুয়া পুলিশের পরিচয় দিয়ে প্রাইভেটকার গতিরোধ করে ছিনতাই করছে।
ভুক্তভোগী এক ব্যক্তি জানান, তখন রাত সাড়ে ১১ টা। অফিস থেকে বাসায় ফিরছেন। স্টাফকোয়াটার থেকে ডেমরা ব্রিজ পার হওয়ার পর মেইন রাস্তার পাশে দু’জন ব্যক্তি চিৎকার করে বলছে ভাই একটু সাহায্য করেন। মোটরসাইকেল নিয়ে যাওয়া রেজাউল তার বাইকটি স্লো করে দেখতে পান দু’জন দাঁড়িয়ে আছেন আর একজন মাটিতে শোয়া অবস্থায়। জানতে চাইলেন কি হয়েছে উত্তরে জানান এক্সিডেন্ট করেছে! একটু সাহায্য করেন হাসপাতালে নিতে হবে। রেজাউল তার বাইকটি রাস্তার পাশে দাড় করতেই শোয়া অবস্থায় থাকা ব্যক্তিসহ তিন জন তার উপর আক্রমন করে। ছিনতাইকারীরা রেজাউলের বাইটি নেয়ার চেষ্টা করলেও একটি প্রাইভেটকারে থাকা একাধিক ব্যক্তির সহযোগিতায় সে এবং তার বাইকটি সে যাত্রায় বেঁচে যায়। ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের একটি অংশ রূপগঞ্জ উপজেলার বিশ^রোড়ের স্থানীয়রা বলছে, দিনের আলো ফুরিয়ে যাওয়ার পর পরই এই মহাসড়কে প্রায় প্রতিদিনই ছোট-বড় ছিনতাই হচ্ছে। এখনও ডাকাতির কথা শোনা যায়।

ডেমরা থানা সূত্রে জানা যায়, গেল ফেব্রুয়ারী মাসে নয়টি ছিনতাইকারী চক্র গ্রেফতার হয়। এর মধ্যে ডেমরার হাজীনগর এলাকা থেকে ছিনতাইকারী চক্রের তিন সদস্যকে হাতেনাতে গ্রেফতার করে ডেমরা থানা পুলিশ। এ সময় তাদের কাছ থেকে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ছয়টি মোবাইল ফোনসেট, দুটি চাকু, একটি ব্লেড, মলম ও ৫০ গ্রাম মরিচের গুঁড়া উদ্ধার করে পুলিশ। গ্রেফতার হওয়া ব্যক্তিরা তিনজনই কক্সবাজার এলাকার বাসিন্দা। ডেমরা থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম জানান, বর্তমানে যে ছিনতাইগুলো হচ্ছে এরা বেশির ভাগই অন্য জেলা থেকে আসে। স্থানীয়দের সাথে আতাত করে কাজ করার পর আবার চলে যায়।

ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের মতই ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়কে ছিনতাইসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড হচ্ছে প্রতিনিয়ত। গত শুক্রবার রাত ১২ টার দিকে চিটাগাংরোড এলাকায় বাস থেকে নেমে বাসায় যাচ্ছিলেন আব্দুর রশিদ বেপারী (৫৬)। ঐ সময় প্রাইভেটকার নিয়ে কয়েকজন ছিনতাইকারী রশিদ বেপারীর গলায় চাকু ধরে। ছিনতাইকারীদের ভয়ে তার সাথে থাকা নগদ টাকা এবং মোবাইল দিয়ে নিজের জীবন বাঁচায় রশিদ। পরে ওই ব্যক্তির চিৎকারে আশপাশের লোকজন দৌড়ে আসে। রশিদের বাড়ি মাদারীপুর জেলার কালকিনি।

সোনারগাঁও থানার লাঙ্গলবন্দ এলাকার স্থানীরা জানান, ১৫ ফ্রেব্রুয়ারি রাস্তার দুই পাশে রশি টানিয়ে মোটারসাইকেল ছিনতায়ের ঘটনা ঘটে। মোটরসাইকেল আহরী প্রাণে বেঁচে গেলেও গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়। তার দুই দিন পর প্রাইভেটকার থামিয়ে ছিনতাই করে একটি চক্র। তারা জানান, এমন ঘটনা প্রায় ঘটছে। এসব সমস্যা থেকে পরিত্রাণ চায় ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়ক এলাকার স্থানীয় বাসিন্দাসহ সাধারণ যাত্রীরা। এ ব্যাপারে তারা হাইওয়ে ও জেলা পুলিশের বিশেষ দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন গত শনিবার রাজধানী আফতাবনগর এলাকায় আব্দুর রহিম নামের এক ব্যক্তিকে দুই ছিনতাইকারী চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে তাঁর ব্যবহৃত মোবাইলটি ছিনিয়ে নেয়। পরে ওই দুজনকে গ্রেপ্তার করে বাড্ডা থানা পুলিশ। তাদের নামে ডিএমপির বিভিন্ন থানায় চুরি-ছিনতাইয়ের একাধিক মামলা রয়েছে।

যাত্রাবাড়ি, ডেমরা, ফতুল্লা, বন্দর, সিদ্ধিরগঞ্জ, রুপগঞ্জ, সোনারগাঁও, বাড্ডা, পল্টন, উত্তরাসহ আরও একাধিক থানা থেকে তথ্য নিয়ে জানা যায়, প্রতিটি থানাতেই তিন/চার মাস আগের থেকে বর্তমানে চুরি, ছিনতাই, ছিনতায়ের প্রস্তুতি এসব মামলা বেড়েছে। তার পাশাপাশি ঘটনাস্থল থেকে কিংবা আগে-পরে আসামীরাও গ্রেফতার বেশি হচ্ছে।
ডিএমপির তালিকায় মামলা দেখা যায় : রাজধানীর ৫০ থানায় ২০২০ সালে চুরি-ছিনতাইয়ে এক হাজার ৮৭৫টি মামলা হয়। ২০২১ সালে এক হাজার ৯৮৬টি। ২০২২ সালে এসে মামলার সংখ্যা দাঁড়ায় দুই হাজার ৩১৬টিতে। ২০২৩ সালে এ সংখ্যা আরও বাড়ে। এছাড়া চলতি বছরের প্রথম দুই মাস (জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি) ৫০০টি বেশি চুরি ছিনতাইয়ের মামলা হয়েছে।

পুলিশ জানায়, প্রতিনিয়ত চুরি-ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটলেও অনেক ঘটনা জানা যায় না। কারণ এসব ঘটনায় থানা পুলিশ পর্যন্ত যায় না অনেক ভুক্তভোগী। ফলে ডিএমপি তথ্যে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির বাস্তব চিত্র ফুটে ওঠে না। একাধিক ফাঁড়ির পুলিশের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রতিনিয়ত দুই মহাসড়কেই টহল ও হাইওয়ে পুলিশের টহল পরিচালনা হয়। ভুক্তভোগীরা অভিযোগ না করলে প্রতিকারে জটিলতা সৃষ্টি হয়। ভুক্তভোগীরা অন্তত জরুরি সেবা ৯৯৯ নম্বরে কল করতে পারে, যাতে দ্রুত সহায়তা পান।

বিষয়টি নিয়ে কথা হলে একাধিক হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা’রা (ওসি) ছিনতাইয়ের বিষয়টি স্বীকার করেন। তারা বলেন, রাতে সড়কে যেমন ছিনতাই হচ্ছে আবার ছিনতাইকারীরা আটকও হচ্ছে। তবে এটা সত্য বর্তমানে ছিনতায়ের ঘটনা বেড়েছে; কিন্তু আমরাও সতর্ক। নিয়মিত টহল পরিচালনা করছি। তারা বলেন, প্রতিনিয়ত ছিনতাইকারী ধরলেও এসব ঘটনায় ভিকটিম থানায় অভিযোগ দিতে চান না। অলিগলি এলাকায় এসব ঘটনা বেশি ঘটে। হাইওয়েতে নিরাপত্তা দেওয়া আমাদের প্রধান দায়িত্ব। তবে আশপাশের এলাকায় কোনো ঘটনা ঘটে থাকলে আমরা সেটাও দেখছি।

পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বলেন, প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত জিরো টলারেন্স নীতিতে বাংলাদেশ পুলিশ জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করে সফল হয়েছে। বাংলাদেশ পুলিশ আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় যেকোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সক্ষম। এক্ষেত্রে বিট পুলিশিং এবং কমিউনিটি পুলিশিং কার্যক্রম আরও জোরদার করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি। অপরাধ দমনে জনগণের সম্পৃক্ততা বাড়াতে হবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপলোডকারীর তথ্য
ট্যাগস :

রাত যত গভীর ততই ভয়ঙ্কর সড়ক-মহাসড়কগুলো

আপডেট সময় : ০৪:১৭:৫৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ১১ মার্চ ২০২৪

রাত যত গভীর হয় রাজধানীসহ মহাসড়কগুলো ততই ভয়ঙ্কর হয়ে উঠে। এই চিত্র বেশি ঘটছে ঢাকা-সিলেট, ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়কগুলোতে। এসবের কারনে অনেক সময় ঘটছে হত্যাকাণ্ডের মতো ঘটনা। এ বিষয়গুলো নিয়ে সড়কের যাত্রী ও স্থানীয়রা রীতিমত আতঙ্কিত। কিন্তু সহজে অভিযোগ করতে চায় না কেউ। পুলিশ বলছে, সড়কে অপরাধ বাড়ছে এটা সত্য তবে দমনে তারা কাজ করেছে।
জানা যায়, ঢাকা-সিলেট এবং ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়ক দুটি মাদক ব্যবসায়ীদের জন্য বেশ নিরাপদ। খুব সহজে তারা এ পথে মাদক চোরাচালান ও পাচারের কাজ করে থাকে। রাত বাড়তে থাকলে সড়কে ছিনতাই করতে সুবিধা হয় তাদের। অনেক সময় ছিনতাই-ডাকাতির সময় খুনের ঘটনা ঘটে।

স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, হাইওয়ে পুলিশ নিয়মিত এ সড়কগুলোতে টহল না দেয়ায় গত ফেব্রুয়ারী মাসে এ মহাসড়ক দুটিতে ৩০/৪০টি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। তাদের টার্গেক মোটরসাইকেল আর রিক্সায় যাতায়াত করা ব্যক্তিদের। অনেক সময় ভুয়া পুলিশের পরিচয় দিয়ে প্রাইভেটকার গতিরোধ করে ছিনতাই করছে।
ভুক্তভোগী এক ব্যক্তি জানান, তখন রাত সাড়ে ১১ টা। অফিস থেকে বাসায় ফিরছেন। স্টাফকোয়াটার থেকে ডেমরা ব্রিজ পার হওয়ার পর মেইন রাস্তার পাশে দু’জন ব্যক্তি চিৎকার করে বলছে ভাই একটু সাহায্য করেন। মোটরসাইকেল নিয়ে যাওয়া রেজাউল তার বাইকটি স্লো করে দেখতে পান দু’জন দাঁড়িয়ে আছেন আর একজন মাটিতে শোয়া অবস্থায়। জানতে চাইলেন কি হয়েছে উত্তরে জানান এক্সিডেন্ট করেছে! একটু সাহায্য করেন হাসপাতালে নিতে হবে। রেজাউল তার বাইকটি রাস্তার পাশে দাড় করতেই শোয়া অবস্থায় থাকা ব্যক্তিসহ তিন জন তার উপর আক্রমন করে। ছিনতাইকারীরা রেজাউলের বাইটি নেয়ার চেষ্টা করলেও একটি প্রাইভেটকারে থাকা একাধিক ব্যক্তির সহযোগিতায় সে এবং তার বাইকটি সে যাত্রায় বেঁচে যায়। ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের একটি অংশ রূপগঞ্জ উপজেলার বিশ^রোড়ের স্থানীয়রা বলছে, দিনের আলো ফুরিয়ে যাওয়ার পর পরই এই মহাসড়কে প্রায় প্রতিদিনই ছোট-বড় ছিনতাই হচ্ছে। এখনও ডাকাতির কথা শোনা যায়।

ডেমরা থানা সূত্রে জানা যায়, গেল ফেব্রুয়ারী মাসে নয়টি ছিনতাইকারী চক্র গ্রেফতার হয়। এর মধ্যে ডেমরার হাজীনগর এলাকা থেকে ছিনতাইকারী চক্রের তিন সদস্যকে হাতেনাতে গ্রেফতার করে ডেমরা থানা পুলিশ। এ সময় তাদের কাছ থেকে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ছয়টি মোবাইল ফোনসেট, দুটি চাকু, একটি ব্লেড, মলম ও ৫০ গ্রাম মরিচের গুঁড়া উদ্ধার করে পুলিশ। গ্রেফতার হওয়া ব্যক্তিরা তিনজনই কক্সবাজার এলাকার বাসিন্দা। ডেমরা থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম জানান, বর্তমানে যে ছিনতাইগুলো হচ্ছে এরা বেশির ভাগই অন্য জেলা থেকে আসে। স্থানীয়দের সাথে আতাত করে কাজ করার পর আবার চলে যায়।

ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের মতই ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়কে ছিনতাইসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড হচ্ছে প্রতিনিয়ত। গত শুক্রবার রাত ১২ টার দিকে চিটাগাংরোড এলাকায় বাস থেকে নেমে বাসায় যাচ্ছিলেন আব্দুর রশিদ বেপারী (৫৬)। ঐ সময় প্রাইভেটকার নিয়ে কয়েকজন ছিনতাইকারী রশিদ বেপারীর গলায় চাকু ধরে। ছিনতাইকারীদের ভয়ে তার সাথে থাকা নগদ টাকা এবং মোবাইল দিয়ে নিজের জীবন বাঁচায় রশিদ। পরে ওই ব্যক্তির চিৎকারে আশপাশের লোকজন দৌড়ে আসে। রশিদের বাড়ি মাদারীপুর জেলার কালকিনি।

সোনারগাঁও থানার লাঙ্গলবন্দ এলাকার স্থানীরা জানান, ১৫ ফ্রেব্রুয়ারি রাস্তার দুই পাশে রশি টানিয়ে মোটারসাইকেল ছিনতায়ের ঘটনা ঘটে। মোটরসাইকেল আহরী প্রাণে বেঁচে গেলেও গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়। তার দুই দিন পর প্রাইভেটকার থামিয়ে ছিনতাই করে একটি চক্র। তারা জানান, এমন ঘটনা প্রায় ঘটছে। এসব সমস্যা থেকে পরিত্রাণ চায় ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়ক এলাকার স্থানীয় বাসিন্দাসহ সাধারণ যাত্রীরা। এ ব্যাপারে তারা হাইওয়ে ও জেলা পুলিশের বিশেষ দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন গত শনিবার রাজধানী আফতাবনগর এলাকায় আব্দুর রহিম নামের এক ব্যক্তিকে দুই ছিনতাইকারী চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে তাঁর ব্যবহৃত মোবাইলটি ছিনিয়ে নেয়। পরে ওই দুজনকে গ্রেপ্তার করে বাড্ডা থানা পুলিশ। তাদের নামে ডিএমপির বিভিন্ন থানায় চুরি-ছিনতাইয়ের একাধিক মামলা রয়েছে।

যাত্রাবাড়ি, ডেমরা, ফতুল্লা, বন্দর, সিদ্ধিরগঞ্জ, রুপগঞ্জ, সোনারগাঁও, বাড্ডা, পল্টন, উত্তরাসহ আরও একাধিক থানা থেকে তথ্য নিয়ে জানা যায়, প্রতিটি থানাতেই তিন/চার মাস আগের থেকে বর্তমানে চুরি, ছিনতাই, ছিনতায়ের প্রস্তুতি এসব মামলা বেড়েছে। তার পাশাপাশি ঘটনাস্থল থেকে কিংবা আগে-পরে আসামীরাও গ্রেফতার বেশি হচ্ছে।
ডিএমপির তালিকায় মামলা দেখা যায় : রাজধানীর ৫০ থানায় ২০২০ সালে চুরি-ছিনতাইয়ে এক হাজার ৮৭৫টি মামলা হয়। ২০২১ সালে এক হাজার ৯৮৬টি। ২০২২ সালে এসে মামলার সংখ্যা দাঁড়ায় দুই হাজার ৩১৬টিতে। ২০২৩ সালে এ সংখ্যা আরও বাড়ে। এছাড়া চলতি বছরের প্রথম দুই মাস (জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি) ৫০০টি বেশি চুরি ছিনতাইয়ের মামলা হয়েছে।

পুলিশ জানায়, প্রতিনিয়ত চুরি-ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটলেও অনেক ঘটনা জানা যায় না। কারণ এসব ঘটনায় থানা পুলিশ পর্যন্ত যায় না অনেক ভুক্তভোগী। ফলে ডিএমপি তথ্যে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির বাস্তব চিত্র ফুটে ওঠে না। একাধিক ফাঁড়ির পুলিশের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রতিনিয়ত দুই মহাসড়কেই টহল ও হাইওয়ে পুলিশের টহল পরিচালনা হয়। ভুক্তভোগীরা অভিযোগ না করলে প্রতিকারে জটিলতা সৃষ্টি হয়। ভুক্তভোগীরা অন্তত জরুরি সেবা ৯৯৯ নম্বরে কল করতে পারে, যাতে দ্রুত সহায়তা পান।

বিষয়টি নিয়ে কথা হলে একাধিক হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা’রা (ওসি) ছিনতাইয়ের বিষয়টি স্বীকার করেন। তারা বলেন, রাতে সড়কে যেমন ছিনতাই হচ্ছে আবার ছিনতাইকারীরা আটকও হচ্ছে। তবে এটা সত্য বর্তমানে ছিনতায়ের ঘটনা বেড়েছে; কিন্তু আমরাও সতর্ক। নিয়মিত টহল পরিচালনা করছি। তারা বলেন, প্রতিনিয়ত ছিনতাইকারী ধরলেও এসব ঘটনায় ভিকটিম থানায় অভিযোগ দিতে চান না। অলিগলি এলাকায় এসব ঘটনা বেশি ঘটে। হাইওয়েতে নিরাপত্তা দেওয়া আমাদের প্রধান দায়িত্ব। তবে আশপাশের এলাকায় কোনো ঘটনা ঘটে থাকলে আমরা সেটাও দেখছি।

পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বলেন, প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত জিরো টলারেন্স নীতিতে বাংলাদেশ পুলিশ জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করে সফল হয়েছে। বাংলাদেশ পুলিশ আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় যেকোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সক্ষম। এক্ষেত্রে বিট পুলিশিং এবং কমিউনিটি পুলিশিং কার্যক্রম আরও জোরদার করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি। অপরাধ দমনে জনগণের সম্পৃক্ততা বাড়াতে হবে।