হাসিনার আমলের জ্বালানি চুক্তি বাতিল ও জ্বালানি মাফিয়াদের বিচারের করতে হবে
- আপডেট সময় : ০২:৪৭:৪৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৬ অক্টোবর ২০২৪ ৬৬ বার পড়া হয়েছে
বিশেষ প্রতিনিধি
ব্রহ্মপুত্র অববাহিকার উজানে ১২ টি জলবিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণে ভারতের একতরফা সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ করতে হবে এবং এগুলো বাস্তবায়ন থেকে বিরত রাখতে প্রয়োজনীয় কূটনেতিক পদক্ষেপ নিতে হবে
পতিত হাসিনা সরকার আমলে বিদ্যুৎ ও জ্বালানিখাতের সকল চুক্তি বাতিল, সম্ভাব্য চুক্তি পুনর্মূল্যায়ন এবং জ¦ালানি মাফিয়াদের বিচারের আওতায় আনা হবে। একই সঙ্গে স্বৈরাচারী সরকারের সংগঠিত সকল জ্বালানি অপরাধের বিচারের দাবি জানিয়েছেন তেল গ্যাস খনিজসম্পদ ও বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি।
শনিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তন জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতের রূপরেখা বর্তমান পরিস্থিতি ও করণীয় শীর্ষক মতবিনিময় সভায় ছয় দফা দাবি পেশ উপস্থাপন করা হয়।
বক্তারা বলেন, রুপপপুর, রামপাল, মাতারবাড়ি ও পায়রার মেগা প্রকল্পসহ বিদ্যুৎ, তরল জ্বালানি, গ্যাস, কয়লা ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়ন প্রকল্পসমূহের অনিয়ম ও চুক্তি পর্যালোচনা করে বাতিল বা সংশোষনের ব্যবস্থা নিতে হবে।
রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রে বাতিল করতে হবে। রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র চালু করার পর থেকে স্বাধীন বিশেষজ্ঞ দ্বারা পরিবেশগত ক্ষতির পরিমাপ করতে হবে এবং তা জনগণের কাছে উন্মুক্ত করতে হবে।
আদানির কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প থেকে বিদ্যুৎ আমদানি ব্যয় লুন্ঠনমূলক হওয়ায় ও বাংলাদেশের বিদ্যুৎ ভোক্তারা জ্বালানি সুবিচার বঞ্চিত বিধায় আদানির সাথে সম্পাদিত বিদ্যুৎকেন্দ্র সম্পর্কিত সকল চুক্তি পুনর্মূল্যায়ন করে প্রয়োজনে বাতিল করতে হবে।
ব্রহ্মপুত্র অববাহিকার উজানে ১২ টি জলবিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণে ভারতের একতরফা সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ করতে হবে এবং এগুলো বাস্তবায়ন থেকে বিরত রাখতে প্রয়োজনীয় কূটনেতিক পদক্ষেপ নিতে হবে।
অবিলম্বে কাতিহার-পার্বতীপুর-বারনগর ট্রান্সমিশন লাইন প্রকল্পের অনুমোদন বাতিল করা উচিত, যাতে ব্রহ্মপুত্রে বাঁধ দিয়ে উৎপন্ন জলবিদ্যুৎ সরিয়ে নেওয়ার জন্য এটি ভারত ব্যবহার করতে না পারে।
জাতীয় স্বার্থ রক্ষার্থে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির মূল্য কমাতে স্বল্প মেয়াদে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে।
পেট্রোলিয়াম পণ্যসমূহের বিদ্যমান মূল্যহার ন্যায্য ও যেজিক কিনা তা যাচাই-বাছাইয়ের প্রস্তাব বিইআরসিতে পাঠানোর জন্য বিপিসিংকে নির্দেশ প্রদান করতে হবে।
ব্যাক্তিমালিকানাধীন বিদুৎকেন্দ্রগুলোকে অন্যায্য ক্যাপাসিটি চার্জ প্রদানে ভর্তুকি বন্ধ করে জনগণের উপর মূলা বৃদ্ধির চাপ কমাতে হবে।
স্বৈরাচারী সরকারের সংগঠিত সকল জ্বালানি অপরাধের বিচার করতে হবে। জনস্বার্থে দায়েরকৃত সকল মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি করার উদ্যোগ নিতে হবে। মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, সচিব, কনসালট্যান্ট, উপদেষ্টাসহ সকল জ্বালান অপরাধীর বিচার নিশ্চিত করতে হবে।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের প্রতিষ্ঠান সংস্কারক ও বিদ্যুৎখাত পরিকল্পনার ক্ষমতা তৈরি করতে হবে। বিদেশি পরামর্শ দিয়ে পরিকল্পনা বন্ধ করতে হবে দেশের বিভিন্ন ধরনের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন ব্যক্তিবর্গের বিদ্যুতের জ্বালানি খাত পরিকল্পনা করতে হবে।
বিদুৎ ও জ্বালানি খাতের সকল কোম্পানি ও সংস্থার পতিলনা বোর্ডসহ সকল কমিটি থেকে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সকল কর্মকর্তত প্রত্যাহার চাই এবং সেই সাথে পদাধিকার বলে কোন কেউ বা কমিটিতে থাকা প্রজাতন্ত্রের কোনো কর্মা ইকোর্মকারীর জন্য যে- কোন প্রকার সম্মানী নাবদ্ধ করতে হবে।
দেশীয় গ্যাস উত্তেলন ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে। আমদানিকৃত বাতাসর উপর নির্ভরতা কমাতে হবে, এবং সাগরে গ্যাস উত্তোলনে বাপেন্ধের সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে।
নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদনে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মান করে প্রতিযোগিতামূলক বিডিং নিশ্চিত করতে হবে।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ড. শামসুল ইসলাম বলেন, টনপ্রতি কয়লা আমদানি ব্যয় কম-বেশি ১০০ ডলার হলেও পিডিবি সেখানকার কয়লা ক্রয় করে ১৮৫ ডলারে। এই বিষয়ে স্বস্ছতা আনলে বছরে প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকা ব্যয় কমানো যাবে।
তিনি বলেন, ‘বিদ্যুৎ খাতে বছরে বছরে যে পরিমাণ ব্যয় হয় তার থেকে বছরে ৪০ হাজার কোটি টাকা ব্যয় কমাতে হবে।’
‘দেশের চল্লিশটা বিদ্যুৎ কেন্দ্র ফার্নেস ওয়েল দিয়ে বিদুৎ উৎপাদ্নৃ করছে না অথচ এসব প্রতিষ্ঠানগুলো ক্যাপাসিটি চার্জের নামে হাজার হাজার কোটি টাকা নিয়ে যাচ্ছে।’ এই প্রতিষ্টানগুলো থেকে সরকারের বিদ্যুৎ প্রয়োজন হয়নি। এসব চুক্তি বাতিল করলে ২০ হাজার কোটি টাকা ব্যায় কমানো যাবে।
অধ্যাপক আনু মোহাম্মদ বলেন, আমাদের দেশের সম্পদের শতভাগ মালিকানা নিশ্চিত করতে হবে। জাতীয় সক্ষমতার ভিত্তিতে গ্যাস অনুসন্ধান করতে হবে।
এম এম আকাশ বলেন, “এ সরকারের পটেনশিয়ালটি কতটুকু তা আগে আমাদের চিন্তা করতে হবে।
আওয়ামী লীগের বিদ্যুৎ খাতের বিশেষ আইন ২০১০- যেটা ইনডেমনিটি আইন সেটা বাতিল করা উচিত। ঐ আইনের আওতায় যত চুক্তি হয়েছে সবগুলো বাতিল করতে হবে, কারণ এসব চুক্তি করা হয়েছে মূলত দুর্নীতি করার জন্য।
পিটার হাস দুইটি এলএনজি পোর্ট করতে চান; একটা কক্সবাজারে, আরেকটা পায়রাতে।
‘প্রত্যেকটা চুক্তি প্রকাশ করতে হবে, আমাদের মালিকানাধীন কোন সম্পদ বিদেশির হাতে তুলে দিতে পারি নাই, সেটা গ্যাস হোক, আর অন্য যেকোন সম্পদই হোক।’
‘
ওপেন টেন্ডার সকলে অংশগ্রহণ করতে পারবে কিনা-সেটা নিশ্চিত করতে হবে, কোন স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতামূলক হতে টেন্ডার।সেই জায়গায় আমাদের পাহারা বসাতে হবে।’
‘আমাদের এলএনজি আমদানিতে কমিয়ে দেশীয় গ্যাস উত্তোলনের উপর জোর দেয়ার কথা বলেন তিনি।’
‘এছাড়াও বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের দুর্নীতি বাজদের গণশুনানি ও গণআদালতের মাধ্যম বিচারের বিষয়ে মতামত প্রকাশ করেন।’