ঢাকা ০৪:০৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫
সংবাদ শিরোনাম ::
Logo জয়পুরহাটে স্ত্রীকে হত্যার পর আত্মহত্যার চেষ্টা স্বামীর Logo ব্যস্ত সময় পার করছে প্রতিমা শিল্পীরা Logo ডাকসু হল সংসদে মাগুরার জয়জয়কার: ছয় কৃতি মুখে গর্বিত জনপদ Logo ইসলামপুরে মিথ্যা মামলার প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত Logo জামালপুরে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের মৃত্যুবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে স্মরণসভা Logo ঘাটাইলে স্বাধীন বাংলা মিনি ফুটবল টুর্নামেন্ট ফাইনাল খেলা অনুষ্ঠিত Logo গৌরীপুরে ৩১ দফা বাস্তবায়ন ও দলকে নির্বাচন মুখী করতে বিএনপির আলোচনা সভা Logo গোলাপগঞ্জে শিশু ধর্ষনের মিথ্যা মামলার অভিযোগে মানববন্ধন Logo ভেদরগঞ্জে জমি বিক্রির বায়না নিয়ে প্রতারণায় পাল্টা পাল্টি অভিযোগ Logo খুনিদের ফাঁসির দাবিতে মানববন্ধন

অলস পড়ে রয়েছে বিপুল টাকায় নির্মিত জ্বালানি তেল খালাসের পাইপলাইন

স্টাফ রিপোর্টার
  • আপডেট সময় : ৩৬৬ বার পড়া হয়েছে
দৈনিক গনমুক্তি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

অলস পড়ে রয়েছে বিপুল টাকায় নির্মিত জ্বালানি তেল খালাসের পাইপলাইন। কম সময় ও খরচে মাদার ভেসেল (গভীর সমুদ্রগামী জাহাজ) থেকে সরাসরি জ্বালানি তেল খালাসে কক্সবাজারের মহেশখালীর মাতারবাড়ীতে ৮ হাজার ৫৫৫ কোটি টাকার প্রকল্প নেয়া হয়। আর ১১ মাস আগে ওই পাইপলাইনের কাজ শেষ হলেও পরিচালনা সংস্থা না থাকায় কোনো তেল খালাস হয়নি। বরং অলস পড়ে আছে বিপুল অর্থ ব্যয়ে নির্মাণ করা জ্বালানি তেলের স্টোরেজ এবং প্রায় ২৫০ কিলোমিটারের পাইপলাইন। তবে শিগগিরই অপারেটর নিয়োগে টেন্ডার প্রক্রিয়া শুরু হবে বলে জানা যায়।

বিপিসি ও ইআরএল সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, চট্টগ্রামে অবস্থিত রাষ্ট্রায়ত্ত একমাত্র তেল পরিশোধনাগার ইস্টার্ন রিফাইনারিতে (ইআরএল) জ্বালানিবাহী ট্যাঙ্কার সাগরে নৌ-চ্যানেলের গভীরতা কম হওয়ায় ভিড়তে পারে না। বরং মহেশখালীর কাছাকাছি গভীর সাগরে নোঙর করা ওসব মাদার ভেসেল থেকে আমদানি করা জ্বালানি তেল লাইটারেজে (ছোট জাহাজ) করে ইআরএলে আনা হয়। ফলে তেল খালাস ও পরিবহনে সময়ক্ষেপণ ও অপচয় হয়। এ অবস্থার উত্তরণে বিগত ২০১৮ সালে মহেশখালীতে ‘ইনস্টলেশন অব সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং (এসপিএম) উইথ ডাবল পাইপলাইন’ শীর্ষক প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। বলা হয়, পাইপলাইনটি চালু হলে ১০ থেকে ১২ দিনের পরিবর্তে মাত্র দু’দিনেই মাদার ভেসেল থেকে তেল খালাস করা সম্ভব হবে এবং তাতে বছরে ৮০০ কোটি টাকা সাশ্রয় হবে। সূত্র জানায়, চট্টগ্রামের মহেশখালীতে চীনের ঋণ সহায়তায় প্রকল্পের আওতায় দুই লাখ টন ধারণ ক্ষমতার ছয়টি স্টোরেজ নির্মাণ করা হয়েছে। তাতে দেশের আড়াই মাসের চাহিদার সমান বাড়তি তেল মজুত করা যাবে। আর ১৬ কিলোমিটার গভীর সাগরে স্থাপন করা হয়েছে বয়া। তাছাড়া স্টোরেজ ট্যাঙ্ক থেকে চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় ইআরএল পর্যন্ত সমুদ্র তলদেশ ও স্থল মিলিয়ে ২২০ কিলোমিটারের পৃথক দুটি পাইপলাইন টানা হয়েছে। ওই দুই পাইপলাইনের মাধ্যমে মাদার ট্যাঙ্কার থেকে পরিশোধিত ও অপরিশোধিত জ্বালানি তেল মহেশখালী হয়ে সরাসরি ইআরএলে আসার কথা।

প্রকল্পটির কাজ শেষে গত বছরের মার্চে কমিশনিং করা হয়। এর ৫ মাস পর আগস্টে প্রকল্পটি বাস্তবায়নকারী সংস্থা বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনকে (বিপিসি) হস্তান্তর করা হয়। তবে ছয় মাস পার হলেও দেশে ওই ধরনের ইনস্টলেশন পরিচালনায় সক্ষম লোকবল না থাকায় বিপুল ব্যয়ের স্থাপনাগুলো অলস পড়ে রয়েছে। গত বছরের জুলাইয়ে প্রকল্পটিতে ট্রায়াল রান বা পরীক্ষামূলক তেল খালাস কার্যক্রমের উদ্যোগ নেয়া হয়। সৌদি আরব থেকে আসা একটি জাহাজ থেকে পাইপলাইনে জ্বালানি তেল সরবরাহের চেষ্টাও করা হয়। তবে কারিগরি ত্রুটির কারণে তখন মহেশখালীর স্টোরেজে তেল আনা যায়নি। তারপর ওই ত্রুটি সারানো হলেও পরিচালনা সংস্থা না থাকায় সেটি চালু করা যায়নি। অথচ প্রকল্পটি রক্ষণাবেক্ষণে সরকারের বিপুল টাকা ব্যয় হচ্ছে। সূত্র আরো জানায়, প্রকল্পের কাজ শেষ করার সঙ্গে সংগতি রেখে রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচালনায় ঠিকাদার নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু না করায় মিলছে না বিপুল টাকা ব্যয়ের সুফল। কারণ এ ধরনের কাজ পরিচালনার জন্য অভিজ্ঞ দেশীয় কোনো প্রতিষ্ঠানই নেই। এ অবস্থায় সুফল পেতে হলে দ্রুত জ্বালানি খালাস ও পরিবহন ব্যবস্থার আধুনিকীকরণ এবং সার্বিক নিরাপত্তা বিবেচনায় ঠিকাদার নিয়োগ দিতে হবে। পাইপলাইনের মাধ্যমে জাহাজ থেকে তেল খালাস ও সঞ্চালনের কাজটি পেতে প্রকল্প বাস্তবায়নকারী ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান চায়না পেট্রোলিয়াম পাইপলাইন ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি আগ্রহী। তবে তা জি-টু-জি (গভর্মেন্ট টু গভর্মেন্ট) ভিত্তিতে করার চেষ্টা চলছে। এদিকে এ প্রসঙ্গে ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও এসপিএম প্রকল্প পরিচালক শরীফ হাসনাত জানান, এসপিএম প্রকল্প পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণে অভিজ্ঞতাসম্পন্ন দেশীয় অপারেটর না থাকায় বিদেশি অপারেটর নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে। যত দ্রুত সম্ভব অপারেটর নিয়োগের মাধ্যমে তেল খালাস ও সঞ্চালনার কাজ শুরু করা হবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

অলস পড়ে রয়েছে বিপুল টাকায় নির্মিত জ্বালানি তেল খালাসের পাইপলাইন

আপডেট সময় :

অলস পড়ে রয়েছে বিপুল টাকায় নির্মিত জ্বালানি তেল খালাসের পাইপলাইন। কম সময় ও খরচে মাদার ভেসেল (গভীর সমুদ্রগামী জাহাজ) থেকে সরাসরি জ্বালানি তেল খালাসে কক্সবাজারের মহেশখালীর মাতারবাড়ীতে ৮ হাজার ৫৫৫ কোটি টাকার প্রকল্প নেয়া হয়। আর ১১ মাস আগে ওই পাইপলাইনের কাজ শেষ হলেও পরিচালনা সংস্থা না থাকায় কোনো তেল খালাস হয়নি। বরং অলস পড়ে আছে বিপুল অর্থ ব্যয়ে নির্মাণ করা জ্বালানি তেলের স্টোরেজ এবং প্রায় ২৫০ কিলোমিটারের পাইপলাইন। তবে শিগগিরই অপারেটর নিয়োগে টেন্ডার প্রক্রিয়া শুরু হবে বলে জানা যায়।

বিপিসি ও ইআরএল সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, চট্টগ্রামে অবস্থিত রাষ্ট্রায়ত্ত একমাত্র তেল পরিশোধনাগার ইস্টার্ন রিফাইনারিতে (ইআরএল) জ্বালানিবাহী ট্যাঙ্কার সাগরে নৌ-চ্যানেলের গভীরতা কম হওয়ায় ভিড়তে পারে না। বরং মহেশখালীর কাছাকাছি গভীর সাগরে নোঙর করা ওসব মাদার ভেসেল থেকে আমদানি করা জ্বালানি তেল লাইটারেজে (ছোট জাহাজ) করে ইআরএলে আনা হয়। ফলে তেল খালাস ও পরিবহনে সময়ক্ষেপণ ও অপচয় হয়। এ অবস্থার উত্তরণে বিগত ২০১৮ সালে মহেশখালীতে ‘ইনস্টলেশন অব সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং (এসপিএম) উইথ ডাবল পাইপলাইন’ শীর্ষক প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। বলা হয়, পাইপলাইনটি চালু হলে ১০ থেকে ১২ দিনের পরিবর্তে মাত্র দু’দিনেই মাদার ভেসেল থেকে তেল খালাস করা সম্ভব হবে এবং তাতে বছরে ৮০০ কোটি টাকা সাশ্রয় হবে। সূত্র জানায়, চট্টগ্রামের মহেশখালীতে চীনের ঋণ সহায়তায় প্রকল্পের আওতায় দুই লাখ টন ধারণ ক্ষমতার ছয়টি স্টোরেজ নির্মাণ করা হয়েছে। তাতে দেশের আড়াই মাসের চাহিদার সমান বাড়তি তেল মজুত করা যাবে। আর ১৬ কিলোমিটার গভীর সাগরে স্থাপন করা হয়েছে বয়া। তাছাড়া স্টোরেজ ট্যাঙ্ক থেকে চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় ইআরএল পর্যন্ত সমুদ্র তলদেশ ও স্থল মিলিয়ে ২২০ কিলোমিটারের পৃথক দুটি পাইপলাইন টানা হয়েছে। ওই দুই পাইপলাইনের মাধ্যমে মাদার ট্যাঙ্কার থেকে পরিশোধিত ও অপরিশোধিত জ্বালানি তেল মহেশখালী হয়ে সরাসরি ইআরএলে আসার কথা।

প্রকল্পটির কাজ শেষে গত বছরের মার্চে কমিশনিং করা হয়। এর ৫ মাস পর আগস্টে প্রকল্পটি বাস্তবায়নকারী সংস্থা বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনকে (বিপিসি) হস্তান্তর করা হয়। তবে ছয় মাস পার হলেও দেশে ওই ধরনের ইনস্টলেশন পরিচালনায় সক্ষম লোকবল না থাকায় বিপুল ব্যয়ের স্থাপনাগুলো অলস পড়ে রয়েছে। গত বছরের জুলাইয়ে প্রকল্পটিতে ট্রায়াল রান বা পরীক্ষামূলক তেল খালাস কার্যক্রমের উদ্যোগ নেয়া হয়। সৌদি আরব থেকে আসা একটি জাহাজ থেকে পাইপলাইনে জ্বালানি তেল সরবরাহের চেষ্টাও করা হয়। তবে কারিগরি ত্রুটির কারণে তখন মহেশখালীর স্টোরেজে তেল আনা যায়নি। তারপর ওই ত্রুটি সারানো হলেও পরিচালনা সংস্থা না থাকায় সেটি চালু করা যায়নি। অথচ প্রকল্পটি রক্ষণাবেক্ষণে সরকারের বিপুল টাকা ব্যয় হচ্ছে। সূত্র আরো জানায়, প্রকল্পের কাজ শেষ করার সঙ্গে সংগতি রেখে রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচালনায় ঠিকাদার নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু না করায় মিলছে না বিপুল টাকা ব্যয়ের সুফল। কারণ এ ধরনের কাজ পরিচালনার জন্য অভিজ্ঞ দেশীয় কোনো প্রতিষ্ঠানই নেই। এ অবস্থায় সুফল পেতে হলে দ্রুত জ্বালানি খালাস ও পরিবহন ব্যবস্থার আধুনিকীকরণ এবং সার্বিক নিরাপত্তা বিবেচনায় ঠিকাদার নিয়োগ দিতে হবে। পাইপলাইনের মাধ্যমে জাহাজ থেকে তেল খালাস ও সঞ্চালনের কাজটি পেতে প্রকল্প বাস্তবায়নকারী ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান চায়না পেট্রোলিয়াম পাইপলাইন ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি আগ্রহী। তবে তা জি-টু-জি (গভর্মেন্ট টু গভর্মেন্ট) ভিত্তিতে করার চেষ্টা চলছে। এদিকে এ প্রসঙ্গে ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও এসপিএম প্রকল্প পরিচালক শরীফ হাসনাত জানান, এসপিএম প্রকল্প পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণে অভিজ্ঞতাসম্পন্ন দেশীয় অপারেটর না থাকায় বিদেশি অপারেটর নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে। যত দ্রুত সম্ভব অপারেটর নিয়োগের মাধ্যমে তেল খালাস ও সঞ্চালনার কাজ শুরু করা হবে।