ঢাকা ০৩:৩০ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৪ মার্চ ২০২৫
সংবাদ শিরোনাম ::
Logo আগামী ২৮শে মার্চ বেইজিংয়ে শির সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে বসছেন ড. ইউনূস Logo শ্রীপুরে আছিয়ার দাফন সম্পন্ন, ধর্ষণে অভিযুক্তের বাড়িতে জনতার আগুন Logo তিস্তা নদীর সমন্বিত ব্যবস্থাপনা ও পুনরুদ্ধার শীর্ষক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত Logo ডামুড্যায় জাতীয় পরিচয়পত্র সেবা ইসির অধীনে রাখতে মানববন্ধন Logo সব সাংবাদিক আমার কাছে সমান, কোন অন্যায় কে প্রশ্রয় দেয়া হবে না : চকরিয়ার নবাগত ওসি Logo ময়মনসিংহে মিশুক চালকের মরদেহ উদ্ধার Logo নাটোরে আদিবাসীদের আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত Logo না ফেরার দেশে মাগুরায় ধর্ষণের শিকার সেই শিশু Logo ত্রিশালে নির্বাচন অফিসের মানববন্ধন  অবস্থান কর্মসূচি   Logo এনআইডি সেবা নির্বাচন কমিশনের অধীনে রাখতে নরসিংদীতে মানববন্ধন

৬৭৪ কোটি টাকার কর ফাঁকি, মোনেম গ্রুপের আমদানি-রপ্তানি বন্ধ, ব্যাংক হিসাব জব্দ

গণমুক্তি ডিজিটাল ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ০৮:১১:১৬ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ২৭৭ বার পড়া হয়েছে
দৈনিক গনমুক্তি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

 

সময়টা ১৯৬৮ সাল। নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ গ্যারি বেকার সর্বপ্রথম অপরাধের অর্থনীতির তত্ত্ব দেন। যার ভিত্তিতে লেখক এমজি অ্যালিংহাম এবং এ. স্যান্ডমো ১৯৭২ সালে কর ফাঁকির একটি অর্থনৈতিক মডেল তৈরি করেছিলেন। এই মডেলটি আয়কর ফাঁকি নিয়ে কাজ করে, যা উন্নত দেশগুলিতে কর রাজস্বের প্রধান উৎস।

লেখকদের মতে, আয়কর ফাঁকির মাত্রা নির্ভর করে সনাক্তকরণের সম্ভাবনা এবং আইন দ্বারা প্রদত্ত শাস্তির মাত্রার ওপর। পরবর্তী অধ্যয়ন অবশ্য মডেলের সীমাবদ্ধতা নির্দেশ করে যেমন, যে ব্যক্তিরা ট্যাক্স মেনে চলেন এবং তারা বিশ্বাস করে যে করের অর্থ যথাযথভাবে ব্যবহার করা হয়েছে।

কর আইন সংক্রান্ত বিষয়ে দীর্ঘ দিন যাবত কাজ করে আসছেন এমন একজন সিনিয়র আইনজীবী মোখলেছুর রহমান। তার ভাষায় বাংলাদেশে কর দেওয়ার যোগ্যতা রয়েছে, এমন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান যদি সঠিকভাবে কর পরিশোধ করেন, তাহলে এদেশের বাজেটের ঘাটতি থাকতো না। মোখলেছুর রহমানের এমন বক্তব্যে মনে হয়েছে, তিনি তার অন্তরে দগদগে ঘা নিয়েই কথাগুলো উচ্চারণ করেছেন।

আব্দুল মোনেমেন এদেশের শীর্ষ শিল্প গোষ্ঠীর একটি। কিন্তু তারপরও কর পরিশোধে দায়িত্বশীল আচরণ না করায় কর ফাঁকির অভিযোগ তুলে প্রতিষ্ঠানটি আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম স্থগিতের পাশাপাশি ব্যাংক হিসাব জব্দের নির্দেশ দেয় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড তথা এনবিআর।

 

এনবিআর এর অভিযোগ, প্রতিষ্ঠানটি বন্ড সুবিধার অপব্যবহার করে ৬৭৪ কোটি ৩৫ লাখ টাকা তারা পরিশোধ করেনি। এ কারণে বুধবার (২৪ এপ্রিল) ঢাকা কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট (দক্ষিণ) এক অফিস আদেশে এই নির্দেশনা আসলো।

এনবিআর এর দেওয়া দেশের সকল সমুদ্র, স্থল ও বিমানবন্দরকে প্রতিষ্ঠানটির মালিকানাধীন সব প্রতিষ্ঠানের আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম বন্ধের পাশাপাশি সকল বিজনেস আইডেনটিফিকেশন নম্বর বা বিআইএন স্থগিত রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কমিশনারের পক্ষে আদেশে সই করেন বন্ড কমিশনারেটের উপ-কমিশনার দ্বৈপায়ন চাকমা।

কাস্টমস আইন ১৯৬৯ এর ২০২ এর (১) (১) ক্ষমতাবলে প্রতিষ্ঠানের চলতি অ্যাকাউন্টসহ অন্যান্য সকল অ্যাকাউন্ট অপরিচালনাযোগ্য তথা বন্ধ রাখার অনুরোধ জানায়।

অফিস আদেশে বলা হয়, শুল্ক পরিশোধ না করে ৫ লাখ ২৫ হাজার টন অপরিশোধিত চিনি কারখানা থেকে অবৈধভাবে অপসারণ করে ১ হাজার ২০৫ কোটি ৫২ লাখ টাকার কর ফাঁকি দিয়েছে শিল্প প্রতিষ্ঠানটি। ৬ কিস্তিতে এসব অর্থ পরিশোধের নির্দেশনা দেওয়া হলে প্রতিষ্ঠানটি ৫৩৩ কোটি টাকা পরিশোধ করে। বাকি ৬৭৪ কোটি ৩৫ লাখ টাকা এখন পর্যন্ত পরিশোধ করা হয়নি।

বিআইএন স্থগিত রাখার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটির আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম বন্ধ করা হয়েছে। এর ফলে বন্দরে প্রতিষ্ঠানটির যেসব পণ্য এরই মধ্যে আমদানি হয়েছে, তার শুল্কায়ন কার্যক্রমও বন্ধ থাকবে। একইভাবে গ্রুপটির প্রতিষ্ঠানগুলোর পাশাপাশি এর মালিকানাধীন ও ব্যবস্থাপনাধীন সব প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ করার ফলে প্রতিষ্ঠানটি এসব অ্যাকাউন্ট থেকে কোনো অর্থ উত্তোলন বা লেনদেন করতে পারবে না।

দেশের ১৯টি শুল্ক স্টেশনসহ রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো ও সংশ্লিষ্ট ব্যাংককে নির্দেশনা দিয়ে আদেশপত্রে বলা হয়, কাস্টমস অ্যাক্ট ১৯৬৯ এর সেকশন ২০২ (১,বি) অনুযায়ী সরকারি পাওনা আদায় না হওয়া পর্যন্ত ওই প্রতিষ্ঠান অথবা তার সহযোগী প্রতিষ্ঠান অথবা একই মালিকানাধীন বা ব্যবস্থাপনাধীন প্রতিষ্ঠানের মালামাল খালাস স্থগিত থাকবে।

 

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

৬৭৪ কোটি টাকার কর ফাঁকি, মোনেম গ্রুপের আমদানি-রপ্তানি বন্ধ, ব্যাংক হিসাব জব্দ

আপডেট সময় : ০৮:১১:১৬ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪

 

সময়টা ১৯৬৮ সাল। নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ গ্যারি বেকার সর্বপ্রথম অপরাধের অর্থনীতির তত্ত্ব দেন। যার ভিত্তিতে লেখক এমজি অ্যালিংহাম এবং এ. স্যান্ডমো ১৯৭২ সালে কর ফাঁকির একটি অর্থনৈতিক মডেল তৈরি করেছিলেন। এই মডেলটি আয়কর ফাঁকি নিয়ে কাজ করে, যা উন্নত দেশগুলিতে কর রাজস্বের প্রধান উৎস।

লেখকদের মতে, আয়কর ফাঁকির মাত্রা নির্ভর করে সনাক্তকরণের সম্ভাবনা এবং আইন দ্বারা প্রদত্ত শাস্তির মাত্রার ওপর। পরবর্তী অধ্যয়ন অবশ্য মডেলের সীমাবদ্ধতা নির্দেশ করে যেমন, যে ব্যক্তিরা ট্যাক্স মেনে চলেন এবং তারা বিশ্বাস করে যে করের অর্থ যথাযথভাবে ব্যবহার করা হয়েছে।

কর আইন সংক্রান্ত বিষয়ে দীর্ঘ দিন যাবত কাজ করে আসছেন এমন একজন সিনিয়র আইনজীবী মোখলেছুর রহমান। তার ভাষায় বাংলাদেশে কর দেওয়ার যোগ্যতা রয়েছে, এমন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান যদি সঠিকভাবে কর পরিশোধ করেন, তাহলে এদেশের বাজেটের ঘাটতি থাকতো না। মোখলেছুর রহমানের এমন বক্তব্যে মনে হয়েছে, তিনি তার অন্তরে দগদগে ঘা নিয়েই কথাগুলো উচ্চারণ করেছেন।

আব্দুল মোনেমেন এদেশের শীর্ষ শিল্প গোষ্ঠীর একটি। কিন্তু তারপরও কর পরিশোধে দায়িত্বশীল আচরণ না করায় কর ফাঁকির অভিযোগ তুলে প্রতিষ্ঠানটি আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম স্থগিতের পাশাপাশি ব্যাংক হিসাব জব্দের নির্দেশ দেয় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড তথা এনবিআর।

 

এনবিআর এর অভিযোগ, প্রতিষ্ঠানটি বন্ড সুবিধার অপব্যবহার করে ৬৭৪ কোটি ৩৫ লাখ টাকা তারা পরিশোধ করেনি। এ কারণে বুধবার (২৪ এপ্রিল) ঢাকা কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট (দক্ষিণ) এক অফিস আদেশে এই নির্দেশনা আসলো।

এনবিআর এর দেওয়া দেশের সকল সমুদ্র, স্থল ও বিমানবন্দরকে প্রতিষ্ঠানটির মালিকানাধীন সব প্রতিষ্ঠানের আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম বন্ধের পাশাপাশি সকল বিজনেস আইডেনটিফিকেশন নম্বর বা বিআইএন স্থগিত রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কমিশনারের পক্ষে আদেশে সই করেন বন্ড কমিশনারেটের উপ-কমিশনার দ্বৈপায়ন চাকমা।

কাস্টমস আইন ১৯৬৯ এর ২০২ এর (১) (১) ক্ষমতাবলে প্রতিষ্ঠানের চলতি অ্যাকাউন্টসহ অন্যান্য সকল অ্যাকাউন্ট অপরিচালনাযোগ্য তথা বন্ধ রাখার অনুরোধ জানায়।

অফিস আদেশে বলা হয়, শুল্ক পরিশোধ না করে ৫ লাখ ২৫ হাজার টন অপরিশোধিত চিনি কারখানা থেকে অবৈধভাবে অপসারণ করে ১ হাজার ২০৫ কোটি ৫২ লাখ টাকার কর ফাঁকি দিয়েছে শিল্প প্রতিষ্ঠানটি। ৬ কিস্তিতে এসব অর্থ পরিশোধের নির্দেশনা দেওয়া হলে প্রতিষ্ঠানটি ৫৩৩ কোটি টাকা পরিশোধ করে। বাকি ৬৭৪ কোটি ৩৫ লাখ টাকা এখন পর্যন্ত পরিশোধ করা হয়নি।

বিআইএন স্থগিত রাখার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটির আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম বন্ধ করা হয়েছে। এর ফলে বন্দরে প্রতিষ্ঠানটির যেসব পণ্য এরই মধ্যে আমদানি হয়েছে, তার শুল্কায়ন কার্যক্রমও বন্ধ থাকবে। একইভাবে গ্রুপটির প্রতিষ্ঠানগুলোর পাশাপাশি এর মালিকানাধীন ও ব্যবস্থাপনাধীন সব প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ করার ফলে প্রতিষ্ঠানটি এসব অ্যাকাউন্ট থেকে কোনো অর্থ উত্তোলন বা লেনদেন করতে পারবে না।

দেশের ১৯টি শুল্ক স্টেশনসহ রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো ও সংশ্লিষ্ট ব্যাংককে নির্দেশনা দিয়ে আদেশপত্রে বলা হয়, কাস্টমস অ্যাক্ট ১৯৬৯ এর সেকশন ২০২ (১,বি) অনুযায়ী সরকারি পাওনা আদায় না হওয়া পর্যন্ত ওই প্রতিষ্ঠান অথবা তার সহযোগী প্রতিষ্ঠান অথবা একই মালিকানাধীন বা ব্যবস্থাপনাধীন প্রতিষ্ঠানের মালামাল খালাস স্থগিত থাকবে।