গুরুত্ব পাচ্ছে নারী ভোটারা
- আপডেট সময় : ২৪ বার পড়া হয়েছে
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নারীদের গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান থাকলেও ভোটের লড়াইয়ে উপস্থিতি সামান্যই। ভোটের মাঠে পিছিয়ে পড়ছে নারী। প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছেন মাত্র ১১ জন। এনসিপি’র সম্ভাব্য নারী প্রার্থীও হাতে গোনা কয়েকজন। জামায়াতে ইসলামীসহ ধর্মভিত্তিক দলগুলো অনেকটাই নারী নেতৃত্বশূন্য। এজন্য পেশিশক্তি আর কালো টাকার দৌরাত্ম্যকে দুষছেন নারী নেত্রীরা। বলছেন, তারা নির্বাচনমুখী হতে চাইলেও সামর্থ্যের মানদন্দের বিচারে আস্থা রাখতে পারছে না দলগুলো।
সরকারি হিসেবে দেশে পুরুষের চেয়ে নারীর সংখ্যা বেশি হলেও সংসদে প্রতিনিধিত্বের প্রশ্নে চিত্রটি নিতান্তই হতাশার। আইন অনুযায়ী সব দলেই ৩৩ শতাংশ নারী নেতৃত্বের বাধ্যবাধকতা থাকলেও হচ্ছে না বাস্তবায়ন।
অপরদিকে দেশে নারী ভোটার বেড়েছে, ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচন জেন্ডার ফ্রেন্ডলি করার আকাঙ্খা সিইসির। দেশে নারী ভোটারের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে জানিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে জেন্ডার ফ্রেন্ডলি করার আকাঙ্খা ব্যক্ত করেছেন। সম্প্রতি আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে নারী অধিকারকর্মীদের সঙ্গে সংলাপের সূচনা বক্তব্যে সিইসি বলেন, অবাধ, সুষ্ঠু এবং বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন যেমন, এর সঙ্গে আমি যোগ করবো একটা ‘জেন্ডার ফ্রেন্ডলি ইলেকশন’। আমার পক্ষ থেকে এটা যোগ করলাম।
দেশের জনসংখ্যা বিবেচনায় নারী-পুরুষের অনুপাত প্রায় সমান উল্লেখ করে তিনি বলেন, আপনারা জেনে অবাক হবেন, পুরুষ ভোটারের থেকে ৩০ লাখের উপরে নারী ভোটার কম ছিল। এটা স্বাভাবিক না। আমরা বুঝেছি, নারী ভোটারদের মধ্যে কিছু একটা গোলমাল হয়েছে। এটা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই হয়তো প্রত্যন্ত এলাকায় হয়েছে। মানুষ নির্বাচন থেকে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছিল, নির্বাচন ব্যবস্থার উপর আস্থাহীনতার কারণেও এটা হতে পারে। সিইসি আরও বলেন, আমরা এবার যেটা করেছি, নারী ভোটারের সংখ্যা ব্যাপকহারে বেড়েছে। ৩০ লাখের পার্থক্যটা ১৮ লাখে চলে এসেছে, ভোটার তালিকা হালনাগাদ করতে যেয়ে।
এছাড়া জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নারীদের গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান থাকলেও ভোটের লড়াইয়ে উপস্থিতি সামান্যই। এক্ষেত্রে পুরোনো পথেই হাঁটছে রাজনৈতিক দলগুলো, অভিযোগ নারী নেত্রীদের। এনসিপি’র জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন বলেন, অস্ত্র, অর্থ এবং পেশিশক্তির আধিপত্যমূলক ও দখলদারিত্ববিহীন রাজনীতি তৈরি করার কোনো দুরবর্তী চিন্তাও আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে নেই। বিএনপি’র সাবেক সংসদ সদস্য সৈয়দা আশরাফি পাপিয়া বলেন, হারুনের স্ত্রী হিসেবে নাকি প্রার্থীই হওয়া যাবে না। বিংশ শতাব্দীতে একজন স্ত্রীকে পার্মানেন্টলি এভাবে একটা জায়গায় আটকে রাখা এটা কি সভ্যতা? এনসিপি’র আরেক নেত্রী মনিরা শারমিন বলেন, নারীদের নির্বাচনমুখীতা আমাদের খুব মুগ্ধ করেছে। শুধু রাজনীতিই না, তারা এখন নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বিতার দিকেও যাচ্ছে।
ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপি’র ঘোষিত ২৭২ আসনে প্রার্থীর মধ্যে, মাত্র ১১ জন নারীকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে নারী নেতৃত্ব নিয়ে সাহসী সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না এই বড় দলটির নীতি নির্ধারকরাও।
বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, ‘এটা নির্ভর করে মাঠের অবস্থা দেখে। এবারের নির্বাচনটা খুবই কঠিন। এবার এমন একটি শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করতে হচ্ছে, যে শক্তি কখনোই বাংলাদেশের জন্য মঙ্গলকর না। যে শক্তি দেশের অস্তিত্বই মানতে চায় না। মানেই না, মানতেও চায় না। এখন যেসব ন্যারেটিভ এই শক্তি নিয়ে আসতেছে, এটা তো একটা স্বাধীন দেশে হয় না।
এখনো চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করেনি এনসিপি। তবে সবচেয়ে বেশি নারী প্রার্থী দেওয়ার আশ্বাস দিলেও তা থেকে যাচ্ছে কথার ফুলঝুরিতেই। প্রতিদ্বন্দ্বিতার মাঠে এনসিপি’র হাতে গোনা কয়েকজন নারীর কথাই ঘুরেফিরে আসছে। তাদেরই একজন সামান্তা শারমিন।
এনসিপি’র এই জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক বলেন, ‘মনোনয়ন নিতে যারা এসেছেন, সেখানে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নারী আসলে আমরা পাইনি। এটা আমার নিজের জন্যও অনেক হতাশার। কিন্তু অন্য দলের চেয়ে বেশি হতে পারে। মনোনয়ন ফরম তো এভাবে ওপেনভাবে সেল হয়ও না। আবার যারা এসেছেন, তাদের মধ্যে ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন ও মেধাবি, দেশের প্রতি ওই প্রতিজ্ঞাটা রাখার সম্ভাবনাটা যাদের আসলে আছে, সেই নারীদের তুলে আনার জন্য তো আমার ক্লিন পলিটিক্স লাগবে। জামায়াতে ইসলামী তাদের রাজনীতিতে ৪৩ শতাংশ নারীর অংশগ্রহণ রয়েছে দাবি করলেও, মনোনয়ন তালিকায় এখনো শোনা যায়নি কোনো নারীর নামই। ধর্মভিত্তিক অন্য দলগুলোও বলা যায় – নারী নেতৃত্বশূন্য।























