ঢাকা ০৩:৫৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪
সংবাদ শিরোনাম ::

পোশাক খাত বাংলাদেশের জায়গা নিচ্ছে ভারত?

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০৬:২৯:৫৯ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২২ অক্টোবর ২০২৪ ৯৬ বার পড়া হয়েছে
দৈনিক গনমুক্তি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

 

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ইউনাইটেড স্টেটস ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড কমিশনের (ইউএসআইটিসি) সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে আশঙ্কা করা হচ্ছে, বাংলাদেশে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে তৈরি পোশাখ খাতে ভারত ক্রমবর্ধমান বিশ্বাসযোগ্যতা লাভ করছে। সেখানে ভারতের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতাকে আমেরিকান ক্রেতাদের আকৃষ্ট হওয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

চলতি বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার নজিরবিহীন অভ্যুত্থানের মুখে বাংলাদেশ থেকে ভারতে চলে যান সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর থেকে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা চলছে। আর এতে বেশ লাভ হয়েছে ভারতের তৈরি পোশাক (আরএমজি) শিল্প খাতে। সেই সঙ্গে তৈরি পোশাকের বৈশ্বিক বাজারে বাংলাদেশের জায়গা ভারতের দখলে চলে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

ইউএসআইটিসির প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, রাজনৈতিকভাবে স্থিতিশীল দেশগুলোর তুলনায় বিদেশি ব্র্যান্ডগুলো ভারত থেকে উচ্চ মূল্যের ফ্যাশন আইটেমগুলো আমদানি করতে ইচ্ছুক। কারণ তারা আত্মবিশ্বাসী যে, ভারত পণ্যগুলো উৎপাদন করতে ও রপ্তানি করতে সক্ষম হবে।

প্রতিবেদনে বাংলাদেশ, পাকিস্তান, ইন্দোনেশিয়া ও কম্বোডিয়াসহ অন্যান্য শীর্ষস্থানীয় পোশাক রপ্তানিকারকদের সঙ্গে ভারতের তুলনা করা হয়েছে। বলা হয়েছে, ভিয়েতনামসহ এই দেশগুলো গত এক দশকে চীন থেকে বাজারের অংশীদারত্ব অর্জন করেছে। আমেরিকান পোশাক আমদানিতে চীনের অংশ উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে, যা ২০১৩ সালের ৩৭ দশমিক ৭ শতাংশ থেকে কমে ২১ দশমিক ৩ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। একই সময়ে ভারতের অংশ ৪ শতাংশ থেকে বেড়ে ৫ দশমিক ৮ শতাংশে উন্নীত হয়েছে।

এদিকে, গত বছর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ভারতের পোশাক রপ্তানি ৪ দশমি ৬ বিলিয়নে পৌঁছেছে। যুক্তরাষ্ট্র পোশাক রপ্তানির জন্য ভারতের বৃহত্তম বাজার হলেও ভিয়েতনাম এখানে সবচেয়ে বড় বিজয়ী হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ভিয়েতনাম তার শেয়ার ১০ শতাংশ থেকে ১৭ দশমিক ৮ শতাংশে উন্নীত করেছে।

ভারতীয় তৈরি পোশাক রপ্তানিকারকদের সংগঠন অ্যাপারেল এক্সপোর্ট প্রমোশন কাউন্সিলের (এইপিসি) চেয়ারম্যান সুধীর সেখরি বলেন, বিশ্বজুড়ে নানা সংকট আর অব্যাহত মুদ্রাস্ফীতির চাপ সত্ত্বেও ভারতের তৈরি পোশাক (আরএমজি) রপ্তানির উচ্চ প্রবৃদ্ধির রেকর্ড হয়েছে। যদিও প্রধান প্রধান পোশাক রপ্তানিকারক দেশগুলো সাম্প্রতিক মাসগুলোতে তৈরি পোশাক রপ্তানির মন্থর গতির মুখোমুখি হয়েছে।

এইপিসি’র সেক্রেটারি জেনারেল মিথিলেশ্বর ঠাকুর ভারতের এই শক্তি অর্জনের স্বীকৃতিকে স্বাগত জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ভারতীয় টেক্সটাইল ও পোশাক শিল্প দীর্ঘদিন ধরে নেতিবাচক ধারণার শিকার। ইউএসআইটিসির সমীক্ষা এই পৌরাণিক ধারণাকে উড়িয়ে দিয়েছে।

বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ পোশাক রপ্তানিকারক বাংলাদেশ। সম্প্রতি সামাজিক-রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা দেখা দেওয়ায় বাংলাদেশে কিছু কারখানা সাময়িকভাবে বন্ধ হয়ে গেছে। এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশে যদি আর্থ-সামাজিক-রাজনৈতিক অস্থিরতা বছরের এক বা দুই চতুর্থাংশের বেশি সময় ধরে চলতে থাকে, তাহলে রপ্তানিকারকদের সময়মত ডেলিভারি নিশ্চিতে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হওয়ার শঙ্কা তৈরি হবে।

এমন পরিস্থিতিতে ২০০ থেকে ২৫০ মিলিয়ন ডলারের অতিরিক্ত মাসিক রপ্তানি আদেশ পেতে পারে ভারত। তৈরি পোশাক খাতের অপারেশনাল দক্ষতার কারণে ভারতীয় রপ্তানিকারকরা স্থায়ীভাবে বাংলাদেশের কাছ থেকে এই খাতের বৈশ্বিক বাজারের শেয়ার দখলে নিতে পারে|

সুযোগকে কাজে লাগাতে ভারতীয় রপ্তানিকারকরা বিভিন্ন ধরনের আন্তর্জাতিক মেলায় অংশ নেওয়ার ও ভারত টেক্স-২০২৫ আয়োজনের পরিকল্পনা করেছে বলে জানিয়েছেন এইপিসি চেয়ারম্যান সুধীর সেখরি। ভারতের তৈরি পোশাক খাতের একটি গুরুত্বপূর্ণ আয়োজন হতে পারে ভারত টেক্স। দেশটির এই খাতের ব্যবসায়ীরা এই মেলা আয়োজনের পরিকল্পনা করেছেন। সূত্র: বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড (ভারত) টেলিগ্রাফ ইন্ডিয়া

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

পোশাক খাত বাংলাদেশের জায়গা নিচ্ছে ভারত?

আপডেট সময় : ০৬:২৯:৫৯ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২২ অক্টোবর ২০২৪

 

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ইউনাইটেড স্টেটস ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড কমিশনের (ইউএসআইটিসি) সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে আশঙ্কা করা হচ্ছে, বাংলাদেশে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে তৈরি পোশাখ খাতে ভারত ক্রমবর্ধমান বিশ্বাসযোগ্যতা লাভ করছে। সেখানে ভারতের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতাকে আমেরিকান ক্রেতাদের আকৃষ্ট হওয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

চলতি বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার নজিরবিহীন অভ্যুত্থানের মুখে বাংলাদেশ থেকে ভারতে চলে যান সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর থেকে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা চলছে। আর এতে বেশ লাভ হয়েছে ভারতের তৈরি পোশাক (আরএমজি) শিল্প খাতে। সেই সঙ্গে তৈরি পোশাকের বৈশ্বিক বাজারে বাংলাদেশের জায়গা ভারতের দখলে চলে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

ইউএসআইটিসির প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, রাজনৈতিকভাবে স্থিতিশীল দেশগুলোর তুলনায় বিদেশি ব্র্যান্ডগুলো ভারত থেকে উচ্চ মূল্যের ফ্যাশন আইটেমগুলো আমদানি করতে ইচ্ছুক। কারণ তারা আত্মবিশ্বাসী যে, ভারত পণ্যগুলো উৎপাদন করতে ও রপ্তানি করতে সক্ষম হবে।

প্রতিবেদনে বাংলাদেশ, পাকিস্তান, ইন্দোনেশিয়া ও কম্বোডিয়াসহ অন্যান্য শীর্ষস্থানীয় পোশাক রপ্তানিকারকদের সঙ্গে ভারতের তুলনা করা হয়েছে। বলা হয়েছে, ভিয়েতনামসহ এই দেশগুলো গত এক দশকে চীন থেকে বাজারের অংশীদারত্ব অর্জন করেছে। আমেরিকান পোশাক আমদানিতে চীনের অংশ উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে, যা ২০১৩ সালের ৩৭ দশমিক ৭ শতাংশ থেকে কমে ২১ দশমিক ৩ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। একই সময়ে ভারতের অংশ ৪ শতাংশ থেকে বেড়ে ৫ দশমিক ৮ শতাংশে উন্নীত হয়েছে।

এদিকে, গত বছর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ভারতের পোশাক রপ্তানি ৪ দশমি ৬ বিলিয়নে পৌঁছেছে। যুক্তরাষ্ট্র পোশাক রপ্তানির জন্য ভারতের বৃহত্তম বাজার হলেও ভিয়েতনাম এখানে সবচেয়ে বড় বিজয়ী হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ভিয়েতনাম তার শেয়ার ১০ শতাংশ থেকে ১৭ দশমিক ৮ শতাংশে উন্নীত করেছে।

ভারতীয় তৈরি পোশাক রপ্তানিকারকদের সংগঠন অ্যাপারেল এক্সপোর্ট প্রমোশন কাউন্সিলের (এইপিসি) চেয়ারম্যান সুধীর সেখরি বলেন, বিশ্বজুড়ে নানা সংকট আর অব্যাহত মুদ্রাস্ফীতির চাপ সত্ত্বেও ভারতের তৈরি পোশাক (আরএমজি) রপ্তানির উচ্চ প্রবৃদ্ধির রেকর্ড হয়েছে। যদিও প্রধান প্রধান পোশাক রপ্তানিকারক দেশগুলো সাম্প্রতিক মাসগুলোতে তৈরি পোশাক রপ্তানির মন্থর গতির মুখোমুখি হয়েছে।

এইপিসি’র সেক্রেটারি জেনারেল মিথিলেশ্বর ঠাকুর ভারতের এই শক্তি অর্জনের স্বীকৃতিকে স্বাগত জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ভারতীয় টেক্সটাইল ও পোশাক শিল্প দীর্ঘদিন ধরে নেতিবাচক ধারণার শিকার। ইউএসআইটিসির সমীক্ষা এই পৌরাণিক ধারণাকে উড়িয়ে দিয়েছে।

বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ পোশাক রপ্তানিকারক বাংলাদেশ। সম্প্রতি সামাজিক-রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা দেখা দেওয়ায় বাংলাদেশে কিছু কারখানা সাময়িকভাবে বন্ধ হয়ে গেছে। এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশে যদি আর্থ-সামাজিক-রাজনৈতিক অস্থিরতা বছরের এক বা দুই চতুর্থাংশের বেশি সময় ধরে চলতে থাকে, তাহলে রপ্তানিকারকদের সময়মত ডেলিভারি নিশ্চিতে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হওয়ার শঙ্কা তৈরি হবে।

এমন পরিস্থিতিতে ২০০ থেকে ২৫০ মিলিয়ন ডলারের অতিরিক্ত মাসিক রপ্তানি আদেশ পেতে পারে ভারত। তৈরি পোশাক খাতের অপারেশনাল দক্ষতার কারণে ভারতীয় রপ্তানিকারকরা স্থায়ীভাবে বাংলাদেশের কাছ থেকে এই খাতের বৈশ্বিক বাজারের শেয়ার দখলে নিতে পারে|

সুযোগকে কাজে লাগাতে ভারতীয় রপ্তানিকারকরা বিভিন্ন ধরনের আন্তর্জাতিক মেলায় অংশ নেওয়ার ও ভারত টেক্স-২০২৫ আয়োজনের পরিকল্পনা করেছে বলে জানিয়েছেন এইপিসি চেয়ারম্যান সুধীর সেখরি। ভারতের তৈরি পোশাক খাতের একটি গুরুত্বপূর্ণ আয়োজন হতে পারে ভারত টেক্স। দেশটির এই খাতের ব্যবসায়ীরা এই মেলা আয়োজনের পরিকল্পনা করেছেন। সূত্র: বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড (ভারত) টেলিগ্রাফ ইন্ডিয়া