সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স দখলের ষড়যন্ত্র, অচলাবস্থায় ব্যবসা কমেছে ৫০ শতাংশ
- আপডেট সময় : ০৬:১৫:৩৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৭ জুলাই ২০২৪ ১৪৬ বার পড়া হয়েছে
সংবাদ সম্মেলনে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অভিযোগ
আন্তর্জাতিক মানসম্মত সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানী। যা কিনা বাংলাশের একমাত্র লাইফ ইন্সুরেন্স কোম্পানী, সেটি আন্তর্জাতক অঙ্গন থেকে পুরষ্কার পর পর দু’বছর পুরষ্কার অর্জন করতে সক্ষম হয়েছেন। বাংলাদেশের শেয়ারবাজারে তালিকাভূক্ত প্রতিষ্ঠানটির ৮ লক্ষাধিক গ্রাহক রয়েছে।
এই বীমা কোম্পানীটির সঙ্গে জড়িত ২৮ হাজার উন্নয়ন কর্মকর্তা এবং ৭০০ শতাধিক নিয়মিত কর্মকর্তা-কর্মচারি রয়েছেন। পরিবার ও তাদের ওপর নির্ভরশীল ৭০ হাজার বীমা পরিবারের সদস্য আজ চরম সংকটে।
সোনালী ইন্সুরেন্স কোম্পানী ঘিরে যে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে, তা জানাতে বুধবার (১৭ জুলাই) মালিবাগে সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স ভবনে সংবাদ সম্মেলন ডাকা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সোনালী লাইফ ইন্সুরেন্স কোম্পানী লিমিটেডের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. রফিকুল ইসলাম। সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন সহকারী ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মঞ্জুর মোর্শেদ।
কোম্পানীর অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. রফিকুল ইসলাম জানান, ইন্স্যুরেন্স বিষয়ে কোন ধারণা না থাকায় বর্তমান প্রশাসক এসএম ফেরদৌসের নেতৃত্বে দেশের একমাত্র লাভজনক বীমা কোম্পানী এখন উল্টো পথে হাটছে। প্রতিষ্ঠার ১০ বছরে এই প্রথম গ্রাহকের বীমা দাবির ৭ দিন পেরিয়ে গেলেও তা পূরণ করতে পারেনি কোম্পানী। নানা অজুহাতে কোম্পানীর সকল প্রকার সেবা প্রদান বন্ধ করা হয়েছে।
মালিকানা বদলের মাধ্যমে সোনালী লাইফ ইন্সুইরেন্স ধ্বংসের চেষ্টা চলছে বলে অভিযোগ করেন কোম্পানীর সহকারী ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মঞ্জুর মোর্শেদ। বলেন, আগের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইওি) দুর্নীতি খতিয়ে দেখতে সোনালী লাইফ ইন্সুইরেন্সে প্রশাসক নিয়োগ দিয়েছিলো বীমা উন্নয়ন কতৃপক্ষ।
কিন্তুদায়িত্ব নেওয়ার পর তিনি দুর্নীতির তদন্ত না করে কোম্পানীর স্বার্থ বিরোধী একের এক পদক্ষেপ নিয়েছেন। যৌক্তিক কারণ ছাড়াই শীর্ষ নির্বাহীদের বরখাস্ত করেন। যা পরে উচ্চ আদালত রহিত করে। নিয়ম বহিভুত ভাবে নিজস্ব লোকজন নিয়োগ দিয়েছেন। সকল সুযোগ-সুবিধা বন্ধ ও কর্ম পরিবেশ নষ্ট করে কর্মীদের ধর্মঘটে যেতে বাধ্য করেছেন।
তিনি বলেন, সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্সকে ব্যর্থ কোম্পানী হিসিবে চিহ্নিত করার পাশাপাশি কোম্পানীটি দখলের ষড়যন্ত্র চলছে বলে অভিযোগ। বলেন, যড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে আইন ও নীতিমালা লংঘন করে কোম্পানীর ১৭ জন কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করা হয়।
উচ্চ আদালত বরখাস্ত আদেশ বাতিল করেছে। বিমা উন্নয়ন কতৃপক্ষের নিয়োগ দেওয়া প্রশাসকের স্বেচ্ছাচারিতায় অচলাবস্থার কারণে ইতোমধ্যে কোম্পানীর ৫০ শতাংশ ব্যবসা কমেছে। প্রশাসককে অপসারণসহ ৮দফা দাবি না মানলে কর্মবিরতি পালনসহ আন্দোলন অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছেন তারা।
বীমা খাতে অভিজ্ঞতা শুন্য বর্তমান প্রশাসককে সরিয়ে সেখানে একজন অভিজ্ঞ ব্যক্তিকে নিয়োগসহ ৮দফা দাবি তুলে ধরেন কোম্পানীর সহকারী ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমদাদুল হক সাহিল। তিনি বলেন, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত কর্ম বিরতি চলবে। কোনভাবেই কর্মীরা কোম্পানীটি ধ্বংসের আয়োজন মেনে নিবে না। এ বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্তপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
সংবাদ সম্মেলনে উত্থাপিত দাবিনামায় বলা হয়, সোনালী লাইফের সকল কর্মকর্তাদের বকেয়া পাওনা দ্রুত পরিশোধ করতে হবে। নিরপেক্ষ অডিট কোম্পানি দিয়ে দ্রুত পূর্ণাঙ্গ অডিট সম্পন্ন করে রিপোর্ট প্রকাশ এবং অনিয়ম ও দুর্নীতির সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।
বেতন নীতিমালা কার্যকর করার ক্ষেত্রে অন্যান্য জীবন বীমা কোম্পানির প্রচলিত সুযোগ-সুবিধা বিবেচনায় রেখে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের বিধান যথাযথ প্রতি পালন করতে হবে। এজেন্টদের অ্যালাউন্স ও বোনাস দ্রুত দেওয়ার পদক্ষেপ নিতে হবে। প্রধান কার্যালয়ের স্বাভাবিক কর্মপরিবেশ ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে অস্ত্রধারী আনসার সদস্যদের কার্যক্রম বন্ধ করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রতিষ্ঠানটির প্রশাসক একের পর এক বিতর্কিত সিদ্ধান্ত নিয়ে সবার মাঝে ভয় ছড়ানোর কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন।
সারাদেশের প্রায় ২৭ হাজার বীমা কর্মীর কমিশনের টাকা আটকে রাখার থেকে শুরু করে আইটিসহ বিভিন্ন বিভাগের নিবেদিত কর্মীদের নামে সহকর্মীদের দিয়ে জোর করে মামলা করানোর হুমকি দেওয়া, কথায় কথায় কর্মকর্তাদের কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হচ্ছে।
অতীতের সব রেওয়াজ ভেঙ্গে নিজের বেতন ৫ লাখ টাকা নির্ধারণ, সাথে বোনাস বাবদ আরো ৩ লাখ টাকা, ১৭ জন শীর্ষ নির্বাহী ও ৩৩ জন ড্রাইভারের জুন মাসের বেতন আটকে রাখা, ডিএমডি পদমর্যাদায় নিযুক্ত তার সাবেক ৪ সহকর্মীকে গড়ে ২ লাখ টাকা বেতনে সোনালী লাইফে নিয়োগের এক মাসের মধ্যেই নিয়মের বাইরে গিয়ে উৎসব ভাতা প্রদান এবং কম বেতনের কর্মীদের জন্য ভর্তুকিমূল্যে খাবার সরবরাহের ক্যান্টিন ভেঙ্গে সশস্ত্র আনসারদের আবাসনের ব্যবস্থাসহ কোম্পানী স্বার্থবিরোধী নানাবিধি পদক্ষেপ নিয়েছেন।