ঢাকা ০৫:৩৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪
সংবাদ শিরোনাম ::

বাংলাদেশের জলসীমায় ভারতীয়দের রাজত্ব, অসহায় দেশি জেলেরা

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০৮:১৯:৩৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৪ অক্টোবর ২০২৪ ৬৮ বার পড়া হয়েছে
দৈনিক গনমুক্তি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

 

বরগুনা জেলা মৎস্যজীবী ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী বলেন, আমাদের জেলেরা ইলিশ রক্ষার এই ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শতভাগ মেনে চলে। তবে বাংলাদেশের সাগরে ভারতীয় জেলেদের তাণ্ডব নতুন নয়। প্রতি বছর ইলিশ মৌসুমে তারা আগ্রাসী হয়ে ওঠে। আমাদের জেলেদের মারধর, জাল, মাছ ও অন্যান্য রসদ কেড়ে নেয়

গভীর সাগরে বাংলাদেশের জলসীমায় রীতিমতো দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ভারতের জেলেরা। মৌসুমের শেষ দিকে এসে রূপালি ইলিশের বিচরণের বড় ক্ষেত্রগুলো দখলে নিয়েছে তারা। এমনটাই জানিয়েছেন চলমান ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞার কারণে গভীর সাগর থেকে ফিরে আসা একাধিক জেলে।

সোমবার (১৪ অক্টোবর) সকালে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তর মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য ঘাটে ফিরে স্থানীয় সাংবাদিকদের কাছে এ অভিযোগ জানিয়েছেন তারা।

জেলেদের অভিযোগ, সাগরে তাদের সঙ্গে ভারতীয় জেলেরা দস্যুর মতো আচরণ করছে। হ্যান্ডমাইক দিয়ে ঘোষণা দিয়ে বাংলাদেশি জেলেদের সরিয়ে দিচ্ছে। নিজ দেশের জলসীমা হওয়ায় কেউ সরতে না চাইলে তাদের দিকে জালে বাধার ইট, চাড়া নিক্ষেপ করছে। জাল কেটে দেওয়া ছাড়াও শক্তিশালী ট্রলারের মাধ্যমে ধাক্কা দিয়ে ছোট ছোট বাংলাদেশি ট্রলার ডুবিয়ে দেওয়ার চেষ্টাও করা হচ্ছে।

পাথরঘাটা পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা ও এফবি রাসেল মাছ ধরা ট্রলারে জেলে আব্দুল্লাহ বলেন, ভারতীয় জেলেরা আমাদের ট্রলারের পাশে এসে জাল ফেলে। তাদের জাল আমাদের জালের ওপর পড়লে আমাদের জাল কেটে দিয়ে তারা জাল টেনে মাছ ধরে নিয়ে যায়।

বাধা দিলে আমাদের উপর চড়াও হয়। সেইসঙ্গে আমাদের ট্রলার বেঁধে ভারতের জলসীমায় নিয়ে গিয়ে সে দেশের পুলিশের হাতে ধরিয়ে দেওয়ারও ভয় দেখায়। ১০ দিন আগে আমাদের দেড় লাখ টাকার জাল কেটে নিয়ে গেছে। তাদের অত্যাচারে সাগরে আমাদের অসহায় অবস্থায় থাকতে হয়।

আরেক জেলে পাথরঘাটা পৌর শহরের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের মোহাম্মদ নুহু বলেন, ভারতীয় জেলেরা সিক্স (ছয়) সিলিন্ডারের শক্তিশালী ইঞ্জিন ব্যবহার করে। তারা বাংলাদেশের জলসীমায় চালনার বয়া, মাইজদার বয়া, বড়ইয়ার চর, ফেয়ারওয়ের বয়া, বড় আমবাড়িয়া, ডিমের চর, সোনার চর, কবরখালীসহ সাগরে ইলিশ বিচরণের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে এসে মাছ ধরছে।

আমরা কিছু বললে তারা ওয়্যারলেসের মাধ্যমে পাশের একাধিক ট্রলার এনে আমাদের ট্রলারের ওপর হামলা করে। এ বিষয়ে একাধিকবার মালিক সমিতির কাছে অভিযোগ দিলেও কোনো প্রতিকার হয়নি।

ভারতীয় জেলেরা বাংলাদেশ সীমানার দক্ষিণ পশ্চিমে বঙ্গোপসাগরের সুন্দরবন ও কুয়াকাটার কাছাকাছি এসে ইলিশ মাছ ধরছে বলে জানিয়েছেন এফবি মা ট্রলারের জেলে জিহাদ। তিনি জানান, বর্তমানে ভারতের ব্যাপক ইলিশের চাহিদা। আমাদের দেশে এখন নিষেধাজ্ঞা চললেও তাদের তো আর এখন কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই। এই সুযোগে পাথরঘাটা থেকে প্রায় ৭০ কিলোমিটারের দক্ষিণে এসেও তারা ইলিশ ধরে নিয়ে যাচ্ছে।

একাধিক জেলে জানান, গভীর সমুদ্রে কোনো টহল নেই। তাদের দাবি, সমুদ্রে টহল জোরদার করলে যেমন ভারতীয় জেলেরা আমাদের জলসীমায় আসতে পারে না, তেমনি আমাদের জেলেরাও বুকে সাহস নিয়ে মাছ শিকার করতে পারবে।

বরগুনা জেলা মৎস্যজীবী ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী বলেন, আমাদের জেলেরা ইলিশ রক্ষার এই ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শতভাগ মেনে চলে। তবে বাংলাদেশের সাগরে ভারতীয় জেলেদের তাণ্ডব নতুন নয়। প্রতি বছর ইলিশ মৌসুমে তারা আগ্রাসী হয়ে ওঠে। আমাদের জেলেদের মারধর, জাল, মাছ ও অন্যান্য রসদ কেড়ে নেয়।

তিনি আরও বলেন, সাগরে যেসব পয়েন্টে ইলিশের বিচরণ বেশি, সেগুলো ভারতীয়রা এরই মধ্যে দখল করেছে। আমাদের দাবি, নিষেধাজ্ঞার সময়গুলো যেন ভারত বাংলাদেশে এক সঙ্গে দেওয়া হয়।

বরগুনা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. মহসিন বলেন, গভীর সাগরে বাংলাদেশের জলসীমায় ভারতীয় জেলেদের অনুপ্রবেশ ও ইলিশ আহরণের অভিযোগ আমি বিভিন্ন মাধ্যমে জেনেছি। দাপ্তরিক অভিযোগ এখনও পাইনি।

এ প্রসঙ্গে নৌবাহিনীর এক কর্মকর্তা জানান, কয়েক বছর সাগরে জলদস্যুর উপদ্রব না থাকলেও, ভারতীয় জেলেদের আতঙ্কে আছেন বাংলাদেশিরা। শক্তিশালী ও উন্নত প্রযুক্তির সুবিধা নিয়ে তারা বাংলাদেশের ছোট ছোট ট্রলারে ধাক্কা দেয়, যেখানে জাল পাতা, তার ওপর দিয়ে ইচ্ছাকৃতভাবে ট্রলার চালিয়ে কেটে দেয়। অভিযানে গেলে দ্রুত খবর ছড়িয়ে পড়ে এবং তারা ভারতের জলসীমায় পালিয়ে যায়। তাদের সঙ্গে পেরে ওঠা কঠিন হয়ে পড়েছে।

দক্ষিণ স্টেশন কোষ্টগার্ড ভোলা জোনের কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কমান্ডার মোহাম্মদ হারুন-অর-রশিদ বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, দেশের জলসীমায় ভারতীয় জেলেদের অনুপ্রবেশ ঘটনা রয়েছে। তবে সামনের দিনগুলোতে আমরা আরও কঠোর হয়ে টহল জোরদার করব। ভারতীয় জেলেদের অনুপ্রবেশের অভিযোগ আমরা আর নিতে চাই না।

এজন্য গভীর সমুদ্রে জাহাজের পাশাপাশি স্পেশাল টহলের জন্য ইতিমধ্যে অতিরিক্ত শক্তিশালী ট্রলার ও স্পীড বোট প্রস্তুত করা হয়েছে এবং অভিযান চলমান রয়েছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

বাংলাদেশের জলসীমায় ভারতীয়দের রাজত্ব, অসহায় দেশি জেলেরা

আপডেট সময় : ০৮:১৯:৩৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৪ অক্টোবর ২০২৪

 

বরগুনা জেলা মৎস্যজীবী ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী বলেন, আমাদের জেলেরা ইলিশ রক্ষার এই ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শতভাগ মেনে চলে। তবে বাংলাদেশের সাগরে ভারতীয় জেলেদের তাণ্ডব নতুন নয়। প্রতি বছর ইলিশ মৌসুমে তারা আগ্রাসী হয়ে ওঠে। আমাদের জেলেদের মারধর, জাল, মাছ ও অন্যান্য রসদ কেড়ে নেয়

গভীর সাগরে বাংলাদেশের জলসীমায় রীতিমতো দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ভারতের জেলেরা। মৌসুমের শেষ দিকে এসে রূপালি ইলিশের বিচরণের বড় ক্ষেত্রগুলো দখলে নিয়েছে তারা। এমনটাই জানিয়েছেন চলমান ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞার কারণে গভীর সাগর থেকে ফিরে আসা একাধিক জেলে।

সোমবার (১৪ অক্টোবর) সকালে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তর মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য ঘাটে ফিরে স্থানীয় সাংবাদিকদের কাছে এ অভিযোগ জানিয়েছেন তারা।

জেলেদের অভিযোগ, সাগরে তাদের সঙ্গে ভারতীয় জেলেরা দস্যুর মতো আচরণ করছে। হ্যান্ডমাইক দিয়ে ঘোষণা দিয়ে বাংলাদেশি জেলেদের সরিয়ে দিচ্ছে। নিজ দেশের জলসীমা হওয়ায় কেউ সরতে না চাইলে তাদের দিকে জালে বাধার ইট, চাড়া নিক্ষেপ করছে। জাল কেটে দেওয়া ছাড়াও শক্তিশালী ট্রলারের মাধ্যমে ধাক্কা দিয়ে ছোট ছোট বাংলাদেশি ট্রলার ডুবিয়ে দেওয়ার চেষ্টাও করা হচ্ছে।

পাথরঘাটা পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা ও এফবি রাসেল মাছ ধরা ট্রলারে জেলে আব্দুল্লাহ বলেন, ভারতীয় জেলেরা আমাদের ট্রলারের পাশে এসে জাল ফেলে। তাদের জাল আমাদের জালের ওপর পড়লে আমাদের জাল কেটে দিয়ে তারা জাল টেনে মাছ ধরে নিয়ে যায়।

বাধা দিলে আমাদের উপর চড়াও হয়। সেইসঙ্গে আমাদের ট্রলার বেঁধে ভারতের জলসীমায় নিয়ে গিয়ে সে দেশের পুলিশের হাতে ধরিয়ে দেওয়ারও ভয় দেখায়। ১০ দিন আগে আমাদের দেড় লাখ টাকার জাল কেটে নিয়ে গেছে। তাদের অত্যাচারে সাগরে আমাদের অসহায় অবস্থায় থাকতে হয়।

আরেক জেলে পাথরঘাটা পৌর শহরের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের মোহাম্মদ নুহু বলেন, ভারতীয় জেলেরা সিক্স (ছয়) সিলিন্ডারের শক্তিশালী ইঞ্জিন ব্যবহার করে। তারা বাংলাদেশের জলসীমায় চালনার বয়া, মাইজদার বয়া, বড়ইয়ার চর, ফেয়ারওয়ের বয়া, বড় আমবাড়িয়া, ডিমের চর, সোনার চর, কবরখালীসহ সাগরে ইলিশ বিচরণের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে এসে মাছ ধরছে।

আমরা কিছু বললে তারা ওয়্যারলেসের মাধ্যমে পাশের একাধিক ট্রলার এনে আমাদের ট্রলারের ওপর হামলা করে। এ বিষয়ে একাধিকবার মালিক সমিতির কাছে অভিযোগ দিলেও কোনো প্রতিকার হয়নি।

ভারতীয় জেলেরা বাংলাদেশ সীমানার দক্ষিণ পশ্চিমে বঙ্গোপসাগরের সুন্দরবন ও কুয়াকাটার কাছাকাছি এসে ইলিশ মাছ ধরছে বলে জানিয়েছেন এফবি মা ট্রলারের জেলে জিহাদ। তিনি জানান, বর্তমানে ভারতের ব্যাপক ইলিশের চাহিদা। আমাদের দেশে এখন নিষেধাজ্ঞা চললেও তাদের তো আর এখন কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই। এই সুযোগে পাথরঘাটা থেকে প্রায় ৭০ কিলোমিটারের দক্ষিণে এসেও তারা ইলিশ ধরে নিয়ে যাচ্ছে।

একাধিক জেলে জানান, গভীর সমুদ্রে কোনো টহল নেই। তাদের দাবি, সমুদ্রে টহল জোরদার করলে যেমন ভারতীয় জেলেরা আমাদের জলসীমায় আসতে পারে না, তেমনি আমাদের জেলেরাও বুকে সাহস নিয়ে মাছ শিকার করতে পারবে।

বরগুনা জেলা মৎস্যজীবী ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী বলেন, আমাদের জেলেরা ইলিশ রক্ষার এই ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শতভাগ মেনে চলে। তবে বাংলাদেশের সাগরে ভারতীয় জেলেদের তাণ্ডব নতুন নয়। প্রতি বছর ইলিশ মৌসুমে তারা আগ্রাসী হয়ে ওঠে। আমাদের জেলেদের মারধর, জাল, মাছ ও অন্যান্য রসদ কেড়ে নেয়।

তিনি আরও বলেন, সাগরে যেসব পয়েন্টে ইলিশের বিচরণ বেশি, সেগুলো ভারতীয়রা এরই মধ্যে দখল করেছে। আমাদের দাবি, নিষেধাজ্ঞার সময়গুলো যেন ভারত বাংলাদেশে এক সঙ্গে দেওয়া হয়।

বরগুনা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. মহসিন বলেন, গভীর সাগরে বাংলাদেশের জলসীমায় ভারতীয় জেলেদের অনুপ্রবেশ ও ইলিশ আহরণের অভিযোগ আমি বিভিন্ন মাধ্যমে জেনেছি। দাপ্তরিক অভিযোগ এখনও পাইনি।

এ প্রসঙ্গে নৌবাহিনীর এক কর্মকর্তা জানান, কয়েক বছর সাগরে জলদস্যুর উপদ্রব না থাকলেও, ভারতীয় জেলেদের আতঙ্কে আছেন বাংলাদেশিরা। শক্তিশালী ও উন্নত প্রযুক্তির সুবিধা নিয়ে তারা বাংলাদেশের ছোট ছোট ট্রলারে ধাক্কা দেয়, যেখানে জাল পাতা, তার ওপর দিয়ে ইচ্ছাকৃতভাবে ট্রলার চালিয়ে কেটে দেয়। অভিযানে গেলে দ্রুত খবর ছড়িয়ে পড়ে এবং তারা ভারতের জলসীমায় পালিয়ে যায়। তাদের সঙ্গে পেরে ওঠা কঠিন হয়ে পড়েছে।

দক্ষিণ স্টেশন কোষ্টগার্ড ভোলা জোনের কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কমান্ডার মোহাম্মদ হারুন-অর-রশিদ বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, দেশের জলসীমায় ভারতীয় জেলেদের অনুপ্রবেশ ঘটনা রয়েছে। তবে সামনের দিনগুলোতে আমরা আরও কঠোর হয়ে টহল জোরদার করব। ভারতীয় জেলেদের অনুপ্রবেশের অভিযোগ আমরা আর নিতে চাই না।

এজন্য গভীর সমুদ্রে জাহাজের পাশাপাশি স্পেশাল টহলের জন্য ইতিমধ্যে অতিরিক্ত শক্তিশালী ট্রলার ও স্পীড বোট প্রস্তুত করা হয়েছে এবং অভিযান চলমান রয়েছে।