সংবিধান সংশোধনের বিষয়ে ছাত্র-জনতার মতামত নেওয়া হবে
- আপডেট সময় : ১২:১৭:৪৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ৪৬ বার পড়া হয়েছে
ছাত্র-জনতার আন্দোলনে হাসিনা সরকারের পতনের পর দুর্নীতি প্রতিরোধ এবং সংস্কারের ধারায় এক ধারায় এগুচ্ছে বাংলাদেশ। অর্থনৈতিক সমৃদ্ধ এবং মানবিকমূল্যবোধের আগামী বাংলাদেশ নিয়ে চলছে নানা আলোচনা। তবে, বর্তমান নোবেল জয়ী ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর সাধারণ মানুষের অস্থা ও জোরালো সমর্থন রয়েছে।
অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে মানুষের প্রত্যাশা অনেক। আগামীর বাংলাদেশকে গণতান্ত্রিক ধারায় এগিয়ে নিতে কী কী সংস্কার প্রয়োজন তা নিয়ে কথা বলছেন বিশিষ্টজনরাও। রাষ্ট্র সংস্কারের পাশাপাশি সংবিধান সংশোধনের আলোচনাও জোরালো হচ্ছে। কারো মতে সংবিধান পুনর্লিখনের কথা। কেউ বলছেন প্রয়োজনীয় সংস্কারের কথা। এসব বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকারকেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বিশ্লেষকরা। সরকার বলছে সংবিধান সংশোধন নিয়ে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি, আলোচনা এগুচ্ছে-সময় কথা বলবে।
সংবিধান সংশোধন নিয়ে আলোচনা চলছে এমন তথ্য জানালেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফ। সংবিধান সংশোধনের বিষয়ে ছাত্র-জনতার মতামত নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
সংবিধান সংশোধন, আগামী নির্বাচন এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা ফিরিয়ে আনা যায় কি না, নিয়েও আলোচনা চলার বার্ত দিলেন এই উপদেষ্টা। সমন্বয়কদের মতামতের ওপর ভিত্তি করেই সংবিধান সংশোধন, নির্বাচন ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
তিনি বলেন, দাবিটি আসতে হবে ছাত্র-জনতার কাছ থেকে। তারা কী চায়, তারা কি নতুন কিছু চায়, নাকি পুরনো সংবিধানকে সংস্কার চায়? এটা তাদের কাছ থেকে আসতে হবে। সমন্বয়কারীরা এ বিষয়ে দিকনির্দেশনা দেবেন।
সংবিধান সংশোধনের বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না মতে, বর্তমান সংবিধান ১৯৭১ এর পরিপ্রেক্ষিতে লেখা হয়েছিল। যে আইন ছিল শাসক শ্রেণির শোষণের আইন, সেই কিভাবে এখনো কীভাবে বিদ্যমান থাকে? আদিবাসীদের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। প্রশাসনকে যদি কিনে ফেলা যায়, তাহলে গণতন্ত্র কীভাবে প্রতিষ্ঠিত হবে? কাজেই গণতান্ত্রিক পুনর্গঠনের জন্য সংস্কার প্রয়োজন।
সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, রাষ্ট্র সংস্কারের জন্য সংবিধানে আমূল পরিবর্তন আনতে হবে। প্রথমত পুরো সংবিধান বাদ দিয়ে আমরা নতুন করে সংবিধান রচনা করা আর দ্বিতীয়ত, সংবিধানের কতগুলো বিষয়ে সুদূরপ্রসারী গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনা যেতে পারে।
বদিউল আলম বলেন, ১৯৯৬ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ছিল রাজনৈতিক সমঝোতার প্রতিফলন। আওয়ামী লীগ দাবি করেছে, গণআন্দোলন গড়ে তুলেছে। বিএনপি প্রথম দিকে এটা মেনে না নিলেও শেষ পর্যন্ত একটা এক তরফা নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় এসে সংবিধানে তা (তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা) অন্তর্ভুক্ত করে তারা পদত্যাগ করেছে। এটি রাজনৈতিক সমঝোতা ছিল সেটি বাতিল হয়েছে। এ নিয়ে দুই দলেরই দায় আছে। যদিও আওয়ামী লীগ সম্পূর্ণ অসাংবিধানিকভাবে এটা সংশোধন করে পঞ্চদশ সংশোধনী পাস করেছে। এগুলো গভীরভাবে বিশ্লেষণ করে সংবিধানে পরিবর্তন আনা দরকার।
৭০ অনুচ্ছেদসহ আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে পরিবর্তন আনতে হবে। তিনি বলেন, সংবিধানে কতগুলো ভয়াবহ বিষয় রয়েছে। এর মধ্যে একটি হলো ৭(ক) অনুচ্ছেদ। পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে যা সংযুক্ত করা হয়েছে। এই বিধান যদি বাতিল না হয়, তবে প্রধান উপদেষ্টা থেকে শুরু করে যারা আমরা সংবিধান পরিবর্তনের কথা বলছি তাদের সবাইকে ফাঁসির কাষ্ঠে ঝুলতে হবে। সবাইকে কিন্তু রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগে অভিযুক্ত করা হবে।
সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ব্যারিস্টার সারা হোসেন সংবাদমাধ্যমকে বলেন, বৈষম্য এখনো চলমান। সংবিধান সম্পূর্ণরূপে বাদ দিয়ে নতুন করে লেখা বেশ কঠিন। নতুন বাংলাদেশে নতুন সংবিধানে মৃত্যুদন্ডকে বাদ দেওয়া প্রয়োজন। মত প্রকাশের স্বাধীনতার সঙ্গে মৌলিক অধিকারের ওপর জোর দেওয়া প্রয়োজন। সংবিধানের ব্যাখ্যা আসা প্রয়োজন প্রধান বিচারপতির তরফে। সংবিধানের সংশোধনের জন্য প্রয়োজন ভিন্ন মত, ধর্মের সবার অংশগ্রহণ দরকার।