ঢাকা ০৯:৩৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ১২ মার্চ ২০২৫

ভিআইপি বন্দিদের দিনকাল…

বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট সময় : ০২:৪৭:৪৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৫ ১০৯ বার পড়া হয়েছে
দৈনিক গনমুক্তি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর কেরানীগঞ্জ ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে ৬৭ ভিআইপি বন্দির ঠাঁই হয়েছে। এর মধ্যে সাবেক মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, এমপি, সরকারি আমলা, প্রভাবশালী রাজনীতিক, পুলিশসহ তৎকালীন শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তারা রয়েছেন। এর মধ্যে ৩২ জনকে কারাবিধি অনুযায়ী ডিভিশন বা প্রথম শ্রেনীর মর্যাদা দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, যারা এখন জেলখানায়, তারা এতদিন বিলাসী জীবনযাপন করেছেন। এখন তাদের সেই বিলাসী জীবনে ভাটা পড়েছে। কারাগারে প্রকোষ্ঠে একটি রুমের ভেতর চলছে তাদের জীবনযাপন। তাদেরকে জেল কোড মেনেই সুযোগ সুবিধা দিচ্ছে কারা কর্তৃপক্ষ। তারা ডিভিশন পাওয়ায় কারা অভ্যন্তরে পাচ্ছেন বিশেষ খাবার, ব্যক্তিগত কাজের লোক ও পত্রিকা। পত্রিকা পড়ে তাদের দিনাতিপাত করতে হচ্ছে। অনেকেই আবার ভবিষ্যতের কথা ভেবে চিন্তায় মগ্ন থাকছেন। এর মধ্যে কয়েকজন আবার নিয়মিত নামাজও আদায় করছেন। তারা বিলাসী জীবনযাপনে অভ্যস্ত হওয়ায় কারাগারের এই সুবিধা তেমন কোনও কাজে আসছে না। কেননা থাকতে হচ্ছে চার দেয়ালের মাঝে। এ ছাড়া, জেল কোড অনুযায়ী তারা প্রতিদিন খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠছেন। বাইরে কিছু সময় হাঁটাহাঁটি করার পর আবার রুমে গিয়ে শুয়ে, বসে কিংবা অন্যদের সঙ্গে আলাপ করে সময় পার করছেন। কারা সূত্রে জানা গেছে, শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর আওয়ামী লীগ নেতা, মন্ত্রী, এমপি ও প্রভাবশালী ব্যক্তিদের নামে হচ্ছে শত শত মামলা। এসব মামলায় যারা গ্রেপ্তার হয়েছেন, তাদের মধ্যে বেশিরভাগ আছেন কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগারে। এক সময় যাদের কথায় সরকার চলতো, তাদের জেলজীবন কেমন কাটছে, তা নিয়ে কৌতূহলী মানুষের মনে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

কারাসূত্র মতে,বর্তমানে কেরানীগঞ্জ ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে ৬২ জন এ রকম বন্দির আশ্রয় হয়েছে। এর মধ্যে ৩২ জনকে ডিভিশন দেওয়া হয়েছে। যাদের মধ্যে আছেন সালমান এফ রহমান, আনিসুল হক, দীপু মনি, জুনাইদ আহমেদ পলক, রমেশ চন্দ্র সেন, এম এ মান্নান, সাবেক আইজিপি শহীদুল হক, চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন, সাবেক সেনা কর্মকর্তা জিয়াউল হাসান, ডিএমপি কমিশনার আসাদুজ্জামান মিয়া, এডিসি আব্দুল্লাহহিল কাফি, সাবেক র‌্যাব কর্মকর্তা এম সোহাইল, সাবেক বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিকসহ আরও অনেকেই কারাগারের প্রকোষ্ঠে জীবনযাপন করছেন। কারাগারে তারা ডিভিশন পেলেও, আগের মতো আয়েশি জীবনযাপন করতে না পেরে থাকছেন গভীর চিন্তায়। কারাগাওে আটক সিংহভাগ বন্দি ডিপ্রেশনে ভুগছেন।

জানা গেছে, ডিভিশন পাওয়া আসামিরা থাকেন আলাদা একটি রুমে। যেখানে আছে একটি বিছানা, কাঁথা, বালিশ, টেবিল, চেয়ার, ও ফ্যান। এ ছাড়া মিলছে ব্যক্তিগত টয়লেট, পাশাপাশি প্রতিদিন দেওয়া হচ্ছে দুটি পত্রিকা। আর খাবারের তালিকায় সকালে রুটি, সবজি, ডিম, দুপুরে ভাত, মাছ অথবা মাংস ও ডাল সবজি। রাতে ভাত, মাছ ও সবজি। তবে অন্যান্য বন্দিদের মতোই তাদের খাবার দেওয়া হয়। শুধু মাছ-মাংস দেওয়া হয় দু’বেলা।
অন্যদিকে, এসব বন্দিরা মাসে একবার দেখা করতে পারবেন পরিবারের সঙ্গে। সপ্তাহে একদিন ১০ টাকার বিনিময়ে মোবাইল ফোনে কথা বলতে পারেন ১০ মিনিট। এ ছাড়া, তাদের দেখভালের জন্য প্রতিটি রুমের দায়িত্ব আছেন একজন কারাকর্মী। অন্য বন্দিদের থেকে ভিআইপিদের মেডিক্যাল সুবিধা আলাদাভাবেও দেওয়া হচ্ছে।

কারাগারের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা আলাপচারিতায় বলেন, জেলখানায় যত ধরনের সুবিধা দেওয়া হোক না কেন, এখানে নিয়মের বাইরে যাওয়ার কোনও সুযোগ নেই। তারা ভিআইপি বন্দি বলে বেশি সুবিধা পাচ্ছেন তা কিন্তু নয়, কেননা তারা রুমের বাইরে একটি নিদিষ্ট সময় ছাড়া বের হতে পারেন না। আবার একটি নিদিষ্ট সময় পর তাদের রুমেও চলে যেতে হয়। এ কারণে দীর্ঘদিন বিলাসী জীবনে অভ্যস্ত এসব বন্দিরা মানসিকভাবে বেশিরভাগ সময় থাকছেন বিকারগ্রস্ত। কখনো রুমে বসে গল্প কিংবা পত্রিকা পড়ে তাদের বেশিরভাগ সময় পার করতে হচ্ছে। তবে তারা যেন কারাগারের ভেতর অসুস্থ হয়ে না পড়েন, সেজন্য সতর্ক থাকছে কর্তৃপক্ষ।
এ বিষয়ে আইজি প্রিজন্স ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ মোহাম্মদ মোতাহের হোসেনে বলেন, ‘যারা ডিভিশন পেয়েছেন, তাদের কারাবিধির নিয়ম মেনেই দেওয়া হয়েছে। মোট ৩২ জনকে ডিভিশন দেওয়া হয়েছে। বাকি যারা আছেন, তারাও ডিভিশন পাবেন কি না, সে বিষয়ে চলছে যাচাই-বাছাই। এটাও নিশ্চিত করছি, জেল কোডের বাইরে গিয়ে কাউকে বিশেষ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে না। জেলখানায় যার যতটুকু আইন অনুযায়ী প্রাপ্য, তাকে সেভাবেই রাখা হয়েছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

ভিআইপি বন্দিদের দিনকাল…

আপডেট সময় : ০২:৪৭:৪৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর কেরানীগঞ্জ ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে ৬৭ ভিআইপি বন্দির ঠাঁই হয়েছে। এর মধ্যে সাবেক মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, এমপি, সরকারি আমলা, প্রভাবশালী রাজনীতিক, পুলিশসহ তৎকালীন শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তারা রয়েছেন। এর মধ্যে ৩২ জনকে কারাবিধি অনুযায়ী ডিভিশন বা প্রথম শ্রেনীর মর্যাদা দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, যারা এখন জেলখানায়, তারা এতদিন বিলাসী জীবনযাপন করেছেন। এখন তাদের সেই বিলাসী জীবনে ভাটা পড়েছে। কারাগারে প্রকোষ্ঠে একটি রুমের ভেতর চলছে তাদের জীবনযাপন। তাদেরকে জেল কোড মেনেই সুযোগ সুবিধা দিচ্ছে কারা কর্তৃপক্ষ। তারা ডিভিশন পাওয়ায় কারা অভ্যন্তরে পাচ্ছেন বিশেষ খাবার, ব্যক্তিগত কাজের লোক ও পত্রিকা। পত্রিকা পড়ে তাদের দিনাতিপাত করতে হচ্ছে। অনেকেই আবার ভবিষ্যতের কথা ভেবে চিন্তায় মগ্ন থাকছেন। এর মধ্যে কয়েকজন আবার নিয়মিত নামাজও আদায় করছেন। তারা বিলাসী জীবনযাপনে অভ্যস্ত হওয়ায় কারাগারের এই সুবিধা তেমন কোনও কাজে আসছে না। কেননা থাকতে হচ্ছে চার দেয়ালের মাঝে। এ ছাড়া, জেল কোড অনুযায়ী তারা প্রতিদিন খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠছেন। বাইরে কিছু সময় হাঁটাহাঁটি করার পর আবার রুমে গিয়ে শুয়ে, বসে কিংবা অন্যদের সঙ্গে আলাপ করে সময় পার করছেন। কারা সূত্রে জানা গেছে, শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর আওয়ামী লীগ নেতা, মন্ত্রী, এমপি ও প্রভাবশালী ব্যক্তিদের নামে হচ্ছে শত শত মামলা। এসব মামলায় যারা গ্রেপ্তার হয়েছেন, তাদের মধ্যে বেশিরভাগ আছেন কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগারে। এক সময় যাদের কথায় সরকার চলতো, তাদের জেলজীবন কেমন কাটছে, তা নিয়ে কৌতূহলী মানুষের মনে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

কারাসূত্র মতে,বর্তমানে কেরানীগঞ্জ ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে ৬২ জন এ রকম বন্দির আশ্রয় হয়েছে। এর মধ্যে ৩২ জনকে ডিভিশন দেওয়া হয়েছে। যাদের মধ্যে আছেন সালমান এফ রহমান, আনিসুল হক, দীপু মনি, জুনাইদ আহমেদ পলক, রমেশ চন্দ্র সেন, এম এ মান্নান, সাবেক আইজিপি শহীদুল হক, চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন, সাবেক সেনা কর্মকর্তা জিয়াউল হাসান, ডিএমপি কমিশনার আসাদুজ্জামান মিয়া, এডিসি আব্দুল্লাহহিল কাফি, সাবেক র‌্যাব কর্মকর্তা এম সোহাইল, সাবেক বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিকসহ আরও অনেকেই কারাগারের প্রকোষ্ঠে জীবনযাপন করছেন। কারাগারে তারা ডিভিশন পেলেও, আগের মতো আয়েশি জীবনযাপন করতে না পেরে থাকছেন গভীর চিন্তায়। কারাগাওে আটক সিংহভাগ বন্দি ডিপ্রেশনে ভুগছেন।

জানা গেছে, ডিভিশন পাওয়া আসামিরা থাকেন আলাদা একটি রুমে। যেখানে আছে একটি বিছানা, কাঁথা, বালিশ, টেবিল, চেয়ার, ও ফ্যান। এ ছাড়া মিলছে ব্যক্তিগত টয়লেট, পাশাপাশি প্রতিদিন দেওয়া হচ্ছে দুটি পত্রিকা। আর খাবারের তালিকায় সকালে রুটি, সবজি, ডিম, দুপুরে ভাত, মাছ অথবা মাংস ও ডাল সবজি। রাতে ভাত, মাছ ও সবজি। তবে অন্যান্য বন্দিদের মতোই তাদের খাবার দেওয়া হয়। শুধু মাছ-মাংস দেওয়া হয় দু’বেলা।
অন্যদিকে, এসব বন্দিরা মাসে একবার দেখা করতে পারবেন পরিবারের সঙ্গে। সপ্তাহে একদিন ১০ টাকার বিনিময়ে মোবাইল ফোনে কথা বলতে পারেন ১০ মিনিট। এ ছাড়া, তাদের দেখভালের জন্য প্রতিটি রুমের দায়িত্ব আছেন একজন কারাকর্মী। অন্য বন্দিদের থেকে ভিআইপিদের মেডিক্যাল সুবিধা আলাদাভাবেও দেওয়া হচ্ছে।

কারাগারের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা আলাপচারিতায় বলেন, জেলখানায় যত ধরনের সুবিধা দেওয়া হোক না কেন, এখানে নিয়মের বাইরে যাওয়ার কোনও সুযোগ নেই। তারা ভিআইপি বন্দি বলে বেশি সুবিধা পাচ্ছেন তা কিন্তু নয়, কেননা তারা রুমের বাইরে একটি নিদিষ্ট সময় ছাড়া বের হতে পারেন না। আবার একটি নিদিষ্ট সময় পর তাদের রুমেও চলে যেতে হয়। এ কারণে দীর্ঘদিন বিলাসী জীবনে অভ্যস্ত এসব বন্দিরা মানসিকভাবে বেশিরভাগ সময় থাকছেন বিকারগ্রস্ত। কখনো রুমে বসে গল্প কিংবা পত্রিকা পড়ে তাদের বেশিরভাগ সময় পার করতে হচ্ছে। তবে তারা যেন কারাগারের ভেতর অসুস্থ হয়ে না পড়েন, সেজন্য সতর্ক থাকছে কর্তৃপক্ষ।
এ বিষয়ে আইজি প্রিজন্স ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ মোহাম্মদ মোতাহের হোসেনে বলেন, ‘যারা ডিভিশন পেয়েছেন, তাদের কারাবিধির নিয়ম মেনেই দেওয়া হয়েছে। মোট ৩২ জনকে ডিভিশন দেওয়া হয়েছে। বাকি যারা আছেন, তারাও ডিভিশন পাবেন কি না, সে বিষয়ে চলছে যাচাই-বাছাই। এটাও নিশ্চিত করছি, জেল কোডের বাইরে গিয়ে কাউকে বিশেষ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে না। জেলখানায় যার যতটুকু আইন অনুযায়ী প্রাপ্য, তাকে সেভাবেই রাখা হয়েছে।