ঝিনাইগাতীর পাহাড়ী নৈসর্গ গজনী অবকাশ
- আপডেট সময় : ০৪:০৫:৫০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৪ ২৯৭ বার পড়া হয়েছে
সীমান্তবর্তী শেরপুরের আকর্ষণীয় স্থান ঝিনাইগাতীর পাহাড়ী নৈসর্গ গজনী অবকাশ ‘গজনী’ সারি সারি শাল, গজারী, সেগুনবন ও লতাগুলোর বিন্যাস খুব সহজেই প্রকৃতি প্রেমীদের হৃদয়ে দোলা দিয়ে যাবে নিশ্চিত। পাহাড়ি ঝর্না ও ঝোড়ার স্বচ্ছ জল হৃদয়ে তুলবে আনন্দের হিন্দোল। পাহাড়, বনানী, ঝর্না এতসব প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মাঝেও কৃত্রিম সৌন্দর্যের অনেক সংযোজন রয়েছে এখানে। যার এক কথায় পরিচিতি ‘অবকাশ’ পিকনিক স্পট ও পর্যটন কেন্দ্র। যেখানে প্রতিবছর দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হাজার হাজার প্রকৃতি প্রেমী ও ভ্রমণ পিপাসু মানুষ ছুটে আসেন। কাজের ফাঁকে কিংবা অবসরে পরিবারের লোকজন কিংবা বন্ধুবান্ধব নিয়ে চলে আসেন প্রকৃতির সান্নিধ্যে। হ্যাঁ, প্রকৃতির অপরূপ রূপে শোভিত এ জায়গাটির নাম ‘গজনী অবকাশ’।
ভারতের মেঘালয় রাজ্যে পাদদেশ শেরপুর জেলার ঝিনাইগাতী উপজেলার গারো পাহাড় প্রকৃতির এক অপার সৌন্দর্যের লীলাভূমি। এখানে এসে সবাই আনন্দধারায় হারিয়ে যান, পুরো দিনের জন্য স্মৃতিপটে আঁকা হয়ে যায় পাহাড়ি গাছ-গাছালি ও পাখ-পাখালির সঙ্গে। কোথায় ‘শেরপুর জেলার বিশাল অংশজুড়ে গারো পাহাড়ের বিস্তৃতি। ভারতের মেঘালয় রাজ্যের পাদদেশে ঝিনাইগাতীর গারো পাহাড়ে গজনীর অবস্থান। লাল মাটির উঁচু পাহাড়।
পাহাড়ি টিলার মাঝে সমতলভূমি। দু’পাহাড়ের মাঝে পাহাড়ি ঝর্না ছন্দ তুলে এগিয়ে চলছে। ঝর্নার পানি এসে ফুলে ফেঁপে উঠছে। সেখানে বাঁধ দিয়ে তৈরি করা হয়েছে কৃত্রিম লেক। লেকের মাঝে কৃত্রিম পাহাড় এবং পাহাড়ের ওপর ‘লেক ভিউ পেন্টাগন’। সেখানে যাতায়াতের জন্য রয়েছে দোদুল্যমান ব্রীজ। পাহাড় চূড়ায় রয়েছে ৮ কক্ষ বিশিষ্ট বৈদ্যুতিক সুবিধাসহ আধুনিক দোতলা ‘রেস্ট হাউজ’। যে রেস্ট হাউজ থেকে পাহাড়ের পাদদেশে নামার জন্য আঁকাবাঁকা ৩ শতাধিক ধাপবিশিষ্ট ‘পদ্মসিঁড়ি’ রয়েছে। পাদদেশে শান বাঁধানো বেদিসহ বিশাল বটচত্বর। সেখানে সুপরিসর গাড়ি পার্কিংয়ের সুবিধাসহ পিকনিক দলগুলোর আড্ডায় মেতে ওঠা ও খেলাধূলারও প্রচুর জায়গা রয়েছে। বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের জন্য বেশ ক’টি নলকূপ, ওয়াশরুম সহ পর্যটন সেবা কেন্দ্র রয়েছে এবং নামাজের জন্য মসজিদ, পর্যাপ্ত স্যানিটেশন সুবিধা ও রান্নাবান্নার ব্যবস্থাও রয়েছে। কী কী দেখবেন :ভ্রমণপিপাসুদের জন্য গজনী অবকাশে রয়েছে চুকু লুপি চিলড্রেন পার্ক, ক্রিসেন্ট লেক, লেকের ওপর রংধনু ব্রীজ, কৃত্রিম জলপ্রপাত, পানসিতরী নৌকা, মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিসৌধ, শিশুপার্ক, মাটির নিচে এক পাহাড় থেকে অন্য পাহাড়ে যাতায়াতের জন্য ড্রাগন মুখের পাতালপুর, লাভ লেইন, মৎস্য কুমারী, হাতি-বাঘ, ভালুক, সাপ, জিরাফ, ওয়াটার পার্ক, ক্যাবল কার, ঝুলন্ত ব্রিজ, জিপ লাইনিং এর পাশাপাশি ভাসমান ব্রিজ, প্যারাট্রবা এবং জেলা ব্র্যান্ডিং কর্নার, কবি নজরুল ইসলাম ও কবি রবীন্দ্র নাথ ঠাকুরের স্মৃৃতি ফলকসহ কবিতাবক এবং ডাইনোসর সহ হরিণের প্রতিকৃতি ও রয়েছে সুড়ঙ্গ পথ।লেকের পানিতে ভাসমান রেস্তোরা,প্যাডেল বোট যেখানে একসঙ্গে ৪ জন মিলে নৌবিহার করা যায়।অবকাশ কেন্দ্রের অন্যতম আকর্ষণ ‘সাইট ভিউ টাওয়ার’। ৮০ বর্গফুট উঁচু এ টাওয়ারে উঠলে দেখা যাবে পাহাড়ি টিলার অপরূপ বৈচিত্র্যময় দৃশ্য। বনবিভাগ প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের সখ্য গড়ে তুলতে গজনীর অবকাশ কেন্দ্রে একটি ক্যাকটাস পল্লী এবং মিনি চিড়িয়াখানাও গড়ে তুলেছে। প্রাকৃতিক সম্পদ আর সৌন্দর্যে ভরপুর গারো পাহাড়ের গজনীতে পর্যটক বা ভ্রমণ পিপাসুদের বাড়তি পাওনা হলো গারো, কোচ, হাজং, বানাইসহ বিভিন্ন আদিবাসী জনগোষ্ঠীর চাষাবাদ, জীবন-প্রবাহ, কৃষি, শিল্প এবং ভাষা ও সংস্কৃতি।
এজন্যই প্রতিদিন পর্যটক ও ভ্রমণপিপাসুদের ঢল নামে গজনীতে। ছাত্র-ছাত্রীরা দল বেঁধে আসে শিক্ষা সফরে। একটি আকর্ষণীয় ও সর্বজনীন ট্যুরিস্ট স্পট বলতে যা বোঝায় অর্থাৎ পাহাড়, সবুজ অরণ্য, নৈসর্গিক দৃশ্য ও সুবিধাবলি এর সবই রয়েছে গজনীতে। সেজন্য আর দেরি নয়, চলে আসুন আজই।যেভাবে আপনি যাবেন :এখানে আসার জন্য সড়কপথে যাতায়াত খুব সহজ। গজনী অবকাশ কেন্দ্র পর্যন্ত রয়েছে মসৃণ পিচঢালা সড়ক। রাজধানী ঢাকা থেকে ময়মনসিংহ হয়ে যাতায়াত সবচেয়ে সহজ। উত্তরবঙ্গ থেকে টাঙ্গাইল-জামালপুর হয়েও আসতে পারেন সড়কপথে। ঢাকা থেকে মাত্র ৫ ঘণ্টায় শেরপুরে আসা যায়। শেরপুর শহর থেকে গজনীর দূরত্ব মাত্র ৩১ কিলোমিটার। ঢাকা থেকে সরাসরি মাইক্রো অথবা প্রাইভেটকারে গজনী যেতে পারেন। আর বাসে মহাখালী টার্মিনাল থেকে ড্রিমল্যান্ড স্পেশালে ৪৫০ টাকায় কিংবা বিআরটিসি বাসে গুলিস্তান-ফুলবাড়িয়া থেকে ৩৫০ টাকায় শেরপুরে। শেরপুর থেকে লোকাল বাসে অথবা সিএনজি যোগে ঝিনাইগাতী উপজেলা সদর। সেখান থেকে সিএনজি, অটোরিক্সা, লেগুনা কিংবা রিকশায় অথবা উপজেলা শহর থেকে মাইক্রোবাসে একদিনের জন্য ৩শ থেকে ৫শ টাকায় সোজা গজনী। শেরপুর শহরে রাত যাপনের জন্য ১শ টাকা থেকে ৫শ টাকায় গেস্ট হাউজ রুম ভাড়া পাওয়া যায়। শহরের রঘুনাথ বাজারে হোটেল সম্পদ, নয়ানী বাজারে ভবানী প্লাজা আধুনিক মানের থাকার হোটেল। এছাড়া থাকতে পারেন অনুমতি সাপেক্ষে সার্কিট হাউজ, সড়ক ও জনপথ, এলজিইডি, পল্লী বিদ্যুৎ অথবা কিংবা এটিআই’র রেস্ট হাউজে। ঝিনাইগাতীর ডাকবাংলোতেও থাকতে পারেন। তবে থাকা খাওয়ার জন্য শেরপুর শহরে চলে আসাই উত্তম। ভাল মানের খাবার পাবেন শহরের নিউ মার্কেটের আলীশান হোটেল এন্ড রেস্টুরেন্ট, হোটেল শাহজাহান, সম্পদ রেস্টুরেন্ট, হোটেল সাঈদ।
এসব হোটেলে অগ্রিম বুকিং ও অর্ডার সরবরাহ করা হয়।যদি যেতে চান দল বেঁধে :
আর হ্যাঁ যা মনে রাখতে হবে, গজনী অবকাশ কেন্দ্রের রেস্ট হাউজে রুম ব্যবহার করতে চাইলে (কেবল দিনের বেলার জন্য- রাত্রি যাপন নিষিদ্ধ) জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের নেজারত শাখা থেকে পূর্বানুমতি ও বুকিং নিতে হবে। প্রতি কক্ষের জন্য ভাড়া ৫শ টাকা, একই সঙ্গে অবকাশ কেন্দ্রে গাড়ি প্রবেশের জন্য বাস-কোচ সাড়ে ৩শ টাকা, মাইক্রোবাস কার ২শ টাকা, মোটর সাইকেল ৩০ টাকা দিয়ে গেট পাস নিতে হবে। আর অবকাশ কেন্দ্রে টাওয়ারের জন্য জনপ্রতি ১০ টাকা, শিশুপার্কে ১০ টাকা, প্যাডেল বোট ৩০ মিনিটে ৪ জনে ৬০ টাকা, পানসিতরী নৌকায় জনপ্রতি ১০ টাকা, পাতালপুরীতে ৫ টাকা প্রদর্শনী ফি রয়েছে, জিপ লাইনিং এ এক স্থান থেকে আরেক স্থানে যাওয়ার ফি ৩০ টাকা, ঝুলন্ত ব্রীজে জনপ্রতি ১০ টাকা, ক্যাবলকার জনপ্রতি ২০ টাকা ও চুকুলুপি চিলড্রেন পার্কে ট্রেন ভ্রমন ৩০ টাকা। এছাড়াও রয়েছে আনন্দ পার্কে সাম্পান নৌকা।কোথায় যোগাযোগ করবেন :একটি কথা ভুলবেন না,গজনী অবকাশ ভারতীয় সীমান্ত সংলগ্ন। সীমান্তের দিকে না যাওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ। অন্যথায় বিপদ নিজের ঘাড়ের ওপর।