নরসিংদী প্রতিনিধি
নরসিংদীতে লটকন চাষীদের মাথায় হাত

- আপডেট সময় : ০৩:২৮:৩৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ২২ জুন ২০২৫ ১০ বার পড়া হয়েছে
আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় চলতি মৌসুমে নরসিংদী জেলায় লটকনের কাঙ্খিত উৎপাদন হয়নি। ফলে এখানকার লটকন চাষীদের মধ্যে হতাশা দেখা দিয়েছে। লটকনের জন্য বিখ্যাত নরসিংদীর উৎপাদিত লটকন দেশের চাহিদা মিটিয়েও বিদেশে রপ্তানি হতো। কিন্তু চলতি মৌসুমে আবহাওয়া অনুকূলে না থাকার কারনে লটকন উৎপাদন অর্ধেকেরও নীচে নেমে গেছে।
অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার লটকনের দাম বেশী থাকলেও লটকন চাষীদের উৎপাদন খরচ ও উঠবেনা। তাই লটকন চাষীরা বর্তমানে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। এবার অনেক চাষীর মাথায় হাত উঠে গেছে। গত বছর ও এখানে লটকনের বাম্পার ফলন হয়েছে। দাম ভালো ছিল বিধায় লটকন চাষীদের মুখে হাসির ঝিলিক ফুটে উঠেছিল কিন্তু এ বছর তার উল্টোটা হয়েছে। লটকনের ফলন দেখে চাষীদের মন ভরছেনা। সময়ের বিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে এ ফলের পুষ্টিগুণ সবার জানা হয়ে গেছে। ফলে এখানকার উৎপাদিত লটকন দেশের চাহিদা মিটিয়ে মধ্যপ্রাচ্ছসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রপ্তানী করা হতো। নরসিংদী জেলার শিবপুর-বেলাব-মনোহরদী ও রায়পুরা উপজেলার লাল রংয়ের মাটিতে প্রচুর পরিমান ক্যালসিয়াম ও খনিজ উপাদান থাকায় এ সকল স্থানে লটকনের ফলন খুব ভালো হয়। জানা গেছে, মানুষের শরীরে ভিটামিন ‘সি’ এর চাহিদা মেটায় এই লটকন, ছোট এ ফলটি ভিটামিন ‘বি’ ক্যালসিয়াম, ফসফরাস ও লৌহসহ বিভিন্ন খনিজ উৎপাদনে ভরপুর। দেশের লটকন চাষের একমাত্র বৃহত্তর এলাকা নরসিংদী জেলা। কারণ এ অঞ্চলের উৎপাদিত লটকন অন্য যে কোন জেলা থেকে মিষ্টি ও রসালো হয়ে থাকে। এখানকার বেলে ও দো-আঁশ মাটিতে লটকনের ফলন ভালো হয়। সে জন্য নরসিংদী জেলার মানুষ লটকনের বাণিজ্যিক চাষের দিকেই বেশী ঝুঁকছেন। লটকন উৎপাদনে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছে বলে প্রতিবছরই বাড়ছে এর আবাদ। এছাড়া লটকন চাষ করে এখানকার শতশত কৃষকের ভাগ্য বদল হয়েছে।
নরসিংদী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে নরসিংদী জেলায় এক হাজার ৯শত হেক্টর জমিতে লটকনের চাষ করা হয়েছে। যা গত বছরের তুলনায় প্রায় ৩শত হেক্টর জমি বেশী। নরসিংদী জেলার ৬টি উপজেলার মধ্যে শিবপুর, বেলাব ও রায়পুরা উপজেলায় লটকন চাষ বেশী হচ্ছে। এছাড়া জেলার পলাশ ও মনোহরদী উপজেলার কিছু কিছু এলাকায় সামান্য পরিমান লটকনের আবাদ হয়ে থাকে। সূত্রটি আরো জানায় যে, চলতি মৌসুমে প্রতি হেক্টর জমিতে ১৭ মেট্রিক টন লটকন উৎপাদন হয়ে থাকে। ১ হাজার ৯শত হেক্টর জমিতে ৩০ হাজার মেট্রিক টন লটকন উৎপাদনের লক্ষ্য মাত্রা নির্ধারণ করা হয়।
কিন্তু এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে না থাকার কারনে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্ধেকেরও নীচে চলে যাবে।
লটকন উৎপাদিত এলাকায় ঢুকলেই চোখে পরতো ছায়া ঘেরা লটকন বাগান। বাগানের অধিকাংশ গাছের গোড়া থেকে উপর অংশের শাখা প্রশাখায় লটকন জড়িয়ে আছে। দেখলে মনে হতো যেন পুরো গাছে লটকনের ফুল ফুটেছে। লটকন বাগানে ঘুরতে ঘুরতে গাছে পাকা লটকন দেখে জিৎবায় জল এসে যেতো। কিন্তু এ বছর তা আর দেখা যায়নি। কারণ অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর লটকন উৎপাদন হয়নি বলেই চলে।
রায়পুরা উপজেলার মরজাল বাজারের লটকন ব্যবসায়ী আব্দুল গফুর জানান, নরসিংদীর বিভিন্ন এলাকার হাট বাজার থেকে লটকন কিনে ঢাকা-চট্রগ্রাম-কুমিল্লা ও মানিকগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি করা হয়ে থাকে। বিগত বছরগুলোতে এখানকার উৎপাদিত লটকন দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রপ্তানি করা হতো। কিন্তু এ বছর লটকনের উৎপাদন না হওয়ায় তা সম্ভব হচ্ছে না। গত বছর এ মৌসুমে প্রতিমন লটকন ২ হাজার টাকা থেকে ৩ হাজার ২শত টাকা মন দরে বিক্রি হয়েছে।
এ বছর প্রতি মন লটকন ৩ হাজার ৬শত টাকা থেকে ৬ হাজার ৪শত টাকা মন দরে বিক্রি হচ্ছে। খুচরা বাজারে বর্তমানে প্রতি কেজি লটকন ৯০ টাকা থেকে ১শত ৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। লটকনের দাম এ বছর বেশী থাকলেও কৃষকদের মন খুশি না। কারণ এ বছর তাদের বাগানে লটকনের তেমন উৎপাদন হয়নি।
এমন পরিস্থিতিতে লটকন চাষীদের মাথায় হাত। কারণ লটকন বিক্রি করে তারা যে লাভের আশা করেছিল তা আর হয়ে উঠেনি। এ বছর তাদের উৎপাদন খরচ ও উঠবেনা। রায়পুরা উপজেলার মরজাল গ্রামের লটকন চাষী মো: সানাউল্লাহ জানান, কম খরচে লাভজনক ফসলের মধ্যে অন্যতম ফল লটকন। লটকন বাগান শুরু করতে প্রথমে খরচ ও সময় বেশী লাগলেও পরবর্তী সময়ে বিঘা প্রতি ১৫/১৬ হাজার টাকার বেশী খরচ হয়না। সে তুলনায় লাভ বেশী হয়। কখনও কখনও এত বেশী ফল আসে যে গাছের কান্ড ও ডাল পর্যন্ত দেখা যায়না। একটি পূর্ণবয়স্ক লটকন গাছে ৭ থেকে ৯মন পর্যন্ত ফলন পাওয়া যায়। কিন্তু এ বছর কোন কোন গাছে ১মন লটকনও ধরেছে। শিবপুর উপজেলায় নৌকাঘাটা গ্রামের মো: মজিবুর রহমান জানান, এ বছর তিনি ৫ বিঘা জমিতে লটকনের চাষ করেছেন। কিন্তু আবহাওয়া অনুকূলে না থাকায় তার বাগানে কাঙ্খিত ফলন হয়নি। বেলাব উপজেলার পাটুলী গ্রামের লটকন চাষী অমৃত চন্দ্র মাস্টার জানান, এ বছর তিনি ১০ বিঘা জমিতে লটকনের চাষ করেছেন। ফসল তেমনটি হয়নি। তবে গত বছর থেকে এ বছর লটকনের দাম বেশী থাকলেও ফলন ভাল না হওয়ায় বেশী সুবিধা করতে পারবেনা। নরসিংদী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরচিালক মো: আজিজুর রহমান জানান, এ বছর লটকন উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ৩০ হাজার মেট্রিকটন। কিন্তু আবহাওয়া অনুকূলে না থাকার কারনে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হওয়ায় সম্ভাবনা বেশী।
এ বছর লটকনের কাঙ্খিত উৎপাদন হয়নি
নরসিংদীতে লটকন চাষীদের মাথায় হাত
নরসিংদী প্রতিনিধি
আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় চলতি মৌসুমে নরসিংদী জেলায় লটকনের কাঙ্খিত উৎপাদন হয়নি। ফলে এখানকার লটকন চাষীদের মধ্যে হতাশা দেখা দিয়েছে। লটকনের জন্য বিখ্যাত নরসিংদীর উৎপাদিত লটকন দেশের চাহিদা মিটিয়েও বিদেশে রপ্তানি হতো। কিন্তু চলতি মৌসুমে আবহাওয়া অনুকূলে না থাকার কারনে লটকন উৎপাদন অর্ধেকেরও নীচে নেমে গেছে।
অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার লটকনের দাম বেশী থাকলেও লটকন চাষীদের উৎপাদন খরচ ও উঠবেনা। তাই লটকন চাষীরা বর্তমানে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। এবার অনেক চাষীর মাথায় হাত উঠে গেছে। গত বছর ও এখানে লটকনের বাম্পার ফলন হয়েছে। দাম ভালো ছিল বিধায় লটকন চাষীদের মুখে হাসির ঝিলিক ফুটে উঠেছিল কিন্তু এ বছর তার উল্টোটা হয়েছে। লটকনের ফলন দেখে চাষীদের মন ভরছেনা। সময়ের বিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে এ ফলের পুষ্টিগুণ সবার জানা হয়ে গেছে। ফলে এখানকার উৎপাদিত লটকন দেশের চাহিদা মিটিয়ে মধ্যপ্রাচ্ছসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রপ্তানী করা হতো। নরসিংদী জেলার শিবপুর-বেলাব-মনোহরদী ও রায়পুরা উপজেলার লাল রংয়ের মাটিতে প্রচুর পরিমান ক্যালসিয়াম ও খনিজ উপাদান থাকায় এ সকল স্থানে লটকনের ফলন খুব ভালো হয়। জানা গেছে, মানুষের শরীরে ভিটামিন ‘সি’ এর চাহিদা মেটায় এই লটকন, ছোট এ ফলটি ভিটামিন ‘বি’ ক্যালসিয়াম, ফসফরাস ও লৌহসহ বিভিন্ন খনিজ উৎপাদনে ভরপুর। দেশের লটকন চাষের একমাত্র বৃহত্তর এলাকা নরসিংদী জেলা। কারণ এ অঞ্চলের উৎপাদিত লটকন অন্য যে কোন জেলা থেকে মিষ্টি ও রসালো হয়ে থাকে। এখানকার বেলে ও দো-আঁশ মাটিতে লটকনের ফলন ভালো হয়। সে জন্য নরসিংদী জেলার মানুষ লটকনের বাণিজ্যিক চাষের দিকেই বেশী ঝুঁকছেন। লটকন উৎপাদনে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছে বলে প্রতিবছরই বাড়ছে এর আবাদ। এছাড়া লটকন চাষ করে এখানকার শতশত কৃষকের ভাগ্য বদল হয়েছে।
নরসিংদী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে নরসিংদী জেলায় এক হাজার ৯শত হেক্টর জমিতে লটকনের চাষ করা হয়েছে। যা গত বছরের তুলনায় প্রায় ৩শত হেক্টর জমি বেশী। নরসিংদী জেলার ৬টি উপজেলার মধ্যে শিবপুর, বেলাব ও রায়পুরা উপজেলায় লটকন চাষ বেশী হচ্ছে। এছাড়া জেলার পলাশ ও মনোহরদী উপজেলার কিছু কিছু এলাকায় সামান্য পরিমান লটকনের আবাদ হয়ে থাকে। সূত্রটি আরো জানায় যে, চলতি মৌসুমে প্রতি হেক্টর জমিতে ১৭ মেট্রিক টন লটকন উৎপাদন হয়ে থাকে। ১ হাজার ৯শত হেক্টর জমিতে ৩০ হাজার মেট্রিক টন লটকন উৎপাদনের লক্ষ্য মাত্রা নির্ধারণ করা হয়।
কিন্তু এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে না থাকার কারনে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্ধেকেরও নীচে চলে যাবে।
লটকন উৎপাদিত এলাকায় ঢুকলেই চোখে পরতো ছায়া ঘেরা লটকন বাগান। বাগানের অধিকাংশ গাছের গোড়া থেকে উপর অংশের শাখা প্রশাখায় লটকন জড়িয়ে আছে। দেখলে মনে হতো যেন পুরো গাছে লটকনের ফুল ফুটেছে। লটকন বাগানে ঘুরতে ঘুরতে গাছে পাকা লটকন দেখে জিৎবায় জল এসে যেতো। কিন্তু এ বছর তা আর দেখা যায়নি। কারণ অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর লটকন উৎপাদন হয়নি বলেই চলে।
রায়পুরা উপজেলার মরজাল বাজারের লটকন ব্যবসায়ী আব্দুল গফুর জানান, নরসিংদীর বিভিন্ন এলাকার হাট বাজার থেকে লটকন কিনে ঢাকা-চট্রগ্রাম-কুমিল্লা ও মানিকগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি করা হয়ে থাকে। বিগত বছরগুলোতে এখানকার উৎপাদিত লটকন দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রপ্তানি করা হতো। কিন্তু এ বছর লটকনের উৎপাদন না হওয়ায় তা সম্ভব হচ্ছে না। গত বছর এ মৌসুমে প্রতিমন লটকন ২ হাজার টাকা থেকে ৩ হাজার ২শত টাকা মন দরে বিক্রি হয়েছে।
এ বছর প্রতি মন লটকন ৩ হাজার ৬শত টাকা থেকে ৬ হাজার ৪শত টাকা মন দরে বিক্রি হচ্ছে। খুচরা বাজারে বর্তমানে প্রতি কেজি লটকন ৯০ টাকা থেকে ১শত ৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। লটকনের দাম এ বছর বেশী থাকলেও কৃষকদের মন খুশি না। কারণ এ বছর তাদের বাগানে লটকনের তেমন উৎপাদন হয়নি।
এমন পরিস্থিতিতে লটকন চাষীদের মাথায় হাত। কারণ লটকন বিক্রি করে তারা যে লাভের আশা করেছিল তা আর হয়ে উঠেনি। এ বছর তাদের উৎপাদন খরচ ও উঠবেনা। রায়পুরা উপজেলার মরজাল গ্রামের লটকন চাষী মো: সানাউল্লাহ জানান, কম খরচে লাভজনক ফসলের মধ্যে অন্যতম ফল লটকন। লটকন বাগান শুরু করতে প্রথমে খরচ ও সময় বেশী লাগলেও পরবর্তী সময়ে বিঘা প্রতি ১৫/১৬ হাজার টাকার বেশী খরচ হয়না। সে তুলনায় লাভ বেশী হয়। কখনও কখনও এত বেশী ফল আসে যে গাছের কান্ড ও ডাল পর্যন্ত দেখা যায়না। একটি পূর্ণবয়স্ক লটকন গাছে ৭ থেকে ৯মন পর্যন্ত ফলন পাওয়া যায়। কিন্তু এ বছর কোন কোন গাছে ১মন লটকনও ধরেছে। শিবপুর উপজেলায় নৌকাঘাটা গ্রামের মো: মজিবুর রহমান জানান, এ বছর তিনি ৫ বিঘা জমিতে লটকনের চাষ করেছেন। কিন্তু আবহাওয়া অনুকূলে না থাকায় তার বাগানে কাঙ্খিত ফলন হয়নি। বেলাব উপজেলার পাটুলী গ্রামের লটকন চাষী অমৃত চন্দ্র মাস্টার জানান, এ বছর তিনি ১০ বিঘা জমিতে লটকনের চাষ করেছেন। ফসল তেমনটি হয়নি। তবে গত বছর থেকে এ বছর লটকনের দাম বেশী থাকলেও ফলন ভাল না হওয়ায় বেশী সুবিধা করতে পারবেনা। নরসিংদী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরচিালক মো: আজিজুর রহমান জানান, এ বছর লটকন উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ৩০ হাজার মেট্রিকটন। কিন্তু আবহাওয়া অনুকূলে না থাকার কারনে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হওয়ায় সম্ভাবনা বেশী।