ঘূর্ণিঝড় দুর্গত উপকূলের দ্রুত পূনর্বাসন ও সুপেয় পানি নিশ্চিতের দাবি
- আপডেট সময় : ০৬:০১:১০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৪ জুন ২০২৪ ২২০ বার পড়া হয়েছে
মিট দ্যা প্রেস অনুষ্ঠানে সংসদ সদস্য ও নাগরিক প্রতিনিধিবৃন্দ
২৬ মে বাংলাদেশের উপকূল অঞ্চলের ওপর দিয়ে বয়ে যায় প্রবল ঘূর্ণিঝড় রেমাল। প্রায় ন’দিন পেরিয়ে গেলো আজ উপকূলের অঞ্চলের বহু বাসিন্দা বিদ্যুৎহীন। রাস্তা-ঘাট এবং বাধ মেরামত ছাড়াও পানীয় জলের চরম সংকটকে সঙ্গী করে দিনযাপন করছেন উপকূলের হাজারো মনুষ।
পানীয় জলের স্থায়ী ব্যবস্থার দাবি ওঠে অনেক আগেই। সাতক্ষীরা, খুলনার কয়রাসহ পাশ্ববর্তী বিরাট অঞ্চলের মনুষকে এক কলস খাবার পানির জন্য ৫ কিলোমিটার পথ আসা যাওয়া করতে হচ্ছে। নোনাজলে কাজ বহু নারী জটিলব্যাধিতে আক্রান্ত। উপকূলের এসব বাসিন্দা নিয়তির ওপর ভরসা করেই দিনযাপন করছেন। অথচ নোনাজলে উপকূল অঞ্চলের ক্ষেতের ফসল কেড়ে নিয়েছে। খেটে খাওয়া মনুষগুলোর সামনে এখন বেচে থাকার বাতি নিভু নিভু।
ঘূর্ণিঝড় দুর্গত উপকূলের দ্রুত পূনর্বাসন কার্যক্রম শুরু ও সুপেয় পানি সরবরাহের কার্যকর পদক্ষেপের দাবি জানিয়েছেন তিনজেলার সংসদ সদস্য ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা। তারা বলছেন, ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতে ও প্রবল জলোচ্ছাসে দক্ষিণ-পশ্চিম (সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট) উপকূলে লাখো মানুষ বসতবাড়ি ও জীবিকা হারিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে। খাদ্য ও সুপেয় পানির সংকট চরম আকার ধারণ করেছে। এই অবস্থা থেকে উত্তরণে সরকার ও বেসরকারি সংস্থাগুলোকে সমন্বিত পদক্ষেপ নিতে এগিয়ে আসার আহ্বান জানানো হয়।
মঙ্গলবার (৪ জুন) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) উন্নয়ন সংস্থা ‘লিডার্স’ এবং নাগরিক সংগঠন ‘সুন্দরবন ও উপকূল সুরক্ষা আন্দোলন’ আয়োজিত মিট দ্যা প্রেস অনুষ্ঠানে যুক্ত হয়ে এসব কথা বলেন তারা। ঘূর্ণিঝড় রেমাল দুর্গত উপকূলের বর্তমান পরিস্থিতি ও জরুরি করণীয় শীর্ষক অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সুন্দরবন ও উপকূল সুরক্ষা আন্দোলনের সমন্বয়ক নিখিল চন্দ্র ভদ্র।
আলোচনায় অংশ নেন খুলনা-৬ আসনের সংসদ সদস্য মো. রশীদুজ্জামান, বাগেরহাট-৪ আসনের সংসদ সদস্য এইচ এম বদিউজ্জামান সোহাগ, সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য (সাতক্ষীরা) লায়লা পারভীন সেজুতি, ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশের সমন্বয়ক শরীফ জামিল, শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মীর মোহাম্মদ আলী, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা)’র ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আমিনুর রসুল বাবুল, বাংলাদেশ ক্লাইমেট চেঞ্জ জার্নালিস্ট ফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোতাহার হোসেন, ডিআরইউ’র কল্যাণ সম্পাদক তানভীর আহমেদ, সচেতন সংস্থার সাধারণ সম্পাদক সাকিলা পারভীন, ফেইথ ইন একশনের তীমন বাড়ই প্রমূখ। ধারণাপত্র উত্থাপন করেন লিডার্সের লিডার্সের অ্যাডভোকেসি অফিসার তমালিকা মল্লিক।
সংসদ সদস্য মো. রশীদুজ্জামান বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতে সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে খুলনার পাইকগাছা ও কয়রা উপজেলা। সেখানে বেড়িবাঁধ, ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট, মৎস্য ঘের, ফসল ও সামাজিক প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সুপেয় পানির উৎসগুলো নষ্ট হয়ে গেছে। বিশ্বঐতিহ্য সুন্দরবনে পশুপাখির মৃত্যুসহ ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ইতোমধ্যে সরকার ও বেসরকারি সংস্থাগুলোর পক্ষ থেকে ত্রাণ ও পূনর্বাসনে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হলেও তা যথেষ্ট নয়। দুর্যোগ পরবর্তী পূনর্বাসন কাজে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি সংস্থাগুলোকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।
উপকূলীয় এলাকায় উন্নয়ন কর্মকান্ড সমন্বয়ের জন্য উপকূল উন্নয়ন বোর্ড গঠনের দাবি জানিয়ে সংসদ সদস্য বদিউজ্জামান সোহাগ বলেন, ঘূণিঝড় রেমালে প্রকৃত ক্ষতি সরকারি হিসেবের চেয়েও কয়েকগুন বেশি। এই ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে ত্রাণের থেকে জরুরি লবণপানি নিয়ন্ত্রণ। লবণাক্ততা নিয়ন্ত্রণ করা গেলে কৃষিকাজ করেই উপকূলের মানুষ তার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবে।
সংসদ সদস্য লায়লা পারভীন সেজুতি বলেন, বর্তমান র্সকার দায়িত্ব গ্রহণের পর দুর্যোগ মোকাবেলার সক্ষমতা বেড়েছে। দুর্যোগে সব থেকে বেশি দুর্ভোগের শিকার নারী ও শিশুরা। পূনর্বাসনে তাদেরকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ ও সুন্দরবনসহ পরিবেশ সুরক্ষায় নজর দিতে হবে।
শরীফ জামিল বলেন, ঘূর্ণিঝড় রেমাল ধীরে ধীরে আঘাত করেছে এবং দীর্ঘ সময় ধরে তান্ডব চালিয়েছে। তাই মৃত্যু কম হলেও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বেশি। ক্ষতিগ্রস্থদের পুনবার্সনের জন্য সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে। নদ-নদী ও পরিবেশ সুরক্ষা নিশ্চিত করে বিজ্ঞানসম্মত উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। উন্নয়ন কাজে সাধারণ মানুষ সম্পৃক্ত করতে হবে।
অধ্যাপক মীর মোহাম্মদ আলী বলেন, ভৌগলিক অবস্থান, ঘন ঘন প্রাকৃতিক দূর্যোগ, ভঙ্গুর অবকাঠামো, দারিদ্রতা, দীর্ঘমেয়াদী লবণাক্ততা, সংকটাপন্ন কৃষি, প্রভৃতির কারণে দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলীয় এলাকা সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ। ওই এলাকাকে বিশেষ জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা ঘোষণা করে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা উদ্যোগ নেওয়া দরকার। সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে জাতীয় বাজেটে বিশেষ বরাদ্দ রাখতে হবে।
অনুষ্ঠানে উত্থাপিত সুপারিশে বলা হয়, ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত ও ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় জরুরি পূনর্বাস ও নিরাপদ পানীয় জল সরবরাহ এবং স্বাস্থ্যসম্মত স্যানিটেশন সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। শিশু খাদ্য, রান্নার সামগ্রী, জ্বালানি ও শুকনো খাদ্য সহায়তা, স্বাস্থ্যসেবা সহায়তা, জরুরি ওষুধ ও চিকিৎসাসেবা পুনঃস্থাপন এবং ক্ষতিগ্রস্ত স্বাস্থ সেবা কেন্দ্রগুলো মেরামত করতে হবে। জরুরি জীবিকা সহায়তা ও কৃষি উপকরণ সরবরাহ করতে হবে। বসতি ও ফসলি এলাকাকে লবণপানি মুক্ত করতে হবে।
উপকূলের জন্য জাতীয় বাজেটে বিশেষ বরাদ্ধের পাশাপাশি বাজেট বাস্তবায়নে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পের আদলে উপকূলীয় এলাকায় ‘একটি বাড়ি একটি সেল্টার হোম’ কার্যক্রম শুরু করতে হবে। উপকূলে সুপেয় পানির টেকসই সমাধান করতে হবে। ঝড়-ঝঞ্ঝা, নদীভাঙ্গন ও বাঁধের ভূমিক্ষয় ঠেকাতে উপকূলে সবুজ বেষ্টনী গড়ে তুলতে হবে।