ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা পরিচয়ে হাজার কোটি টাকার মালিক মোর্শেদুল
![](https://dailyganomukti.com/wp-content/uploads/2024/01/logo-by-iocn-min.png)
- আপডেট সময় : ০৬:৩১:৫৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪ ৬৩ বার পড়া হয়েছে
ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসর মোর্শেদুল আলম নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা পরিচয়ে মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযোদ্ধা পরিবার কল্যাণ সমিতি সাধারণ সম্পাদকের পদ বাগিয়ে নেন। মোর্শেদুলের হামলা-মামলা ও পুলিশের অত্যাচারে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব জিয়াউল কবির ও রায়হান মুন্সি নামের ২ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা মৃত্যুবরণ করেন। অথচ ১৯৭১ সালে মোর্শেদুলের বয়স ছিলো মাত্র পাঁচবছর। এই মানুষটিই ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসর। তিনি মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযোদ্ধা পরিবার কল্যাণ সমিতি নাম ভাঙ্গিয়ে সরকারের কাছ থেকে জমি নিয়ে সেই জমিতে ভবন করে অমুক্তিযোদ্ধাদের কাছে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে বিক্রি করে রাতারাতি হাজার কোটির টাকার মালিক বনে যান। যখন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধারা তার অন্যায় কাজের প্রতিবাদ করেছে, তখন প্রশাসনের সহায়তায় প্রতিবাদকারী মুক্তিযোদ্ধাদের মামলা দিয়ে জেলে নিক্ষেপ করেছে।
সাংবাদিকদের কাছে এমন অভিযোগ তুলে ধরেন, মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযোদ্ধা পরিবার কল্যাণ সমিতির আহ্বায়ক নঈম জাহাঙ্গির, সদস্য সচিব বেলায়েত হোসেনসহ বেশ কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা। তারা বলেন, প্রকৃতি মুক্তিযোদ্ধারা তার অনৈতিক কাজের প্রতিবাদ করতে গেলে হামলা-মামলা দিয়ে জেলে পাঠিয়ে নির্বিঘ্নে জালিয়াতি করেছেন মোর্শেদুল আলম। মুক্তিযোদ্ধার নাম ভাঙ্গিয়ে মোর্শেদুল আলম যে দুর্নীতি করেছেন, তার খতিয়ান তুলে ধরে দেওয়া হয় দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদ)।
দুদকে দেওয়া আবেদনে বলা হয়, ১৯৯৭ সালে মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযোদ্ধা পরিবার কল্যাণ সমিতি সমাজ সেবা অধিদপ্তর হইতে নিবন্ধন গ্রহন করে। সমিতির কথিত মহাসচিব মোর্শেদুল আলম জাতীয় গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের আবাসনের জন্য আবেদন করেন। ১৯৯৯ সালের ২৩ নভেম্বর ৩০০ জন মুক্তিযোদ্ধার নামে হলফনামা সহকারে জাতীয় গৃহায়ণ কার্যালয়ে জমা দিয়ে ধূর্ত ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা মোর্শেদুল আলম জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে ১৬.৩১ জমি নিজের নামে বরাদ্দ নেয়।
এ নিয়ে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিবাদের প্রেক্ষিতে মোর্শেদুলের নিজ নামের বরাদ্দ বাতিল করে মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযোদ্ধা পরিবার কল্যাণ সমিতির নামে জমি বরাদ্ধ দেওয়া হয়।
কিন্তু মোর্শেদ আলম আওয়ামী কায়দায় ভয়ভীতিসহ প্রাণনাশ এবং মামলার ভয়ে মুক্তিযোদ্ধারা প্রাণভয়ে থেমে যান। ফ্যাসিস্ট সরকারের মন্ত্রী, এমপি, সাবেক সচিব এবং পুলিশের সাবেক আইজি থেকে শুরু করে উর্ধতন কর্মকর্তাদের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে মোর্শেদুল আলম অনৈতিক কাজের অপ্রতিরোধ হয়ে ওঠে এবং মসনদ টিকিয়ে রাখতে এবং উর্ধতন পুলিশ কর্মকর্তাদের নির্দেশে জুলাই ছাত্র-জনতার আন্দোলন নস্যাত করতে মিরপুর এলাকায় অর্থের বিনিময়ে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে। এসময় আতিকুর রহমান নামে একজন নিহতর ঘটনায় চিফ ঢাকা মেট্রোপলিটান ম্যাজিষ্ট্রেট আদআলত-১১ মামলার আবেদন করা হয়। আদালত শুনানি নিয়ে তা এফআরআই গ্রহণ করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কাফরুল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেন। এছাড়া ছাত্র-জনতার আন্দোলনে অংশ নেওয়া অনেকে চোখও হারিয়েছেন।
মোর্শেদুলের মিথ্যা মামলায় ২০০২ ও ২০১৬ সাল পর্যন্ত ৬ বার কারা গিয়েছেন বেলায়েত হোসেন। সর্বশেষ শাহ আলী থানার দারোগা রবিন গ্রেপ্তারের পর ক্রস ফায়ারের ভয় দেখিয়ে মুক্তিযোদ্ধা বেলায়েত হোসেনের পরিবার কাছ থেকে ৬ লাখ টাকা ঘুষ গ্রহণ করেন। সেসময় একমাস কারাবাসের পর মুক্তি পান বেলায়েত হোসেন।
মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযোদ্ধা পরিবার কল্যাণ সমিতির সদস্য সচিব বেলায়েত হোসেন
মোর্শেদুল আলম মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযোদ্ধা পরিবার কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। মুক্তিযোদ্ধা না হয়েও নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে ভুয়া পরিচয়ে বিগত সরকারের আমলে বিপুল সম্পত্তির মালিক হয়েছেন। অবশেষে ২৩ ডিসেম্বর সে পুলিশের হাতে আটক হন। তার বিরুদ্ধে কাফরুল থানায় মামলা রয়েছে। মোর্শেদুলের পিতার নাম মৌলভি মতিউর রহমান এবং মাতার নাম করিমুন্নেছা। মোর্শেদুলের জন্ম ২৪ মার্চ ১৯৬৬ সালে। ১৯৭১ সালের ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত তার বয়স ছিল ৫ বছর ৮ মাস ৭ দিন (সরকারের পরিপত্র অনুযায়ী একজন মুক্তিযোদ্ধার বয়স কমপক্ষে ১২ বছর ৬ মাস হতে হবে)।
সম্পদের পাহাড়
ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা মোর্শেদুল আলমকে আটক করা হয়েছে। তাকে আটকের পর বেরিয়ে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। জানা গেছে, ক্ষমতা ও প্রভাব খাটিয়ে নানা অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে গড়ে তুলেছেন টাকার পাহাড়। মুক্তিযুদ্ধের সময় মোর্শেদুলের বয়স ছিল মাত্র পাঁচ বছর। সরকার প্রকাশিত গেজেটে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে নাম নেই তার। তার বিরুদ্ধে এ সংক্রান্ত বিষয়ে একটি লিগ্যাল নোটিশও রয়েছে। মোর্শেদুলের পিতার নাম মৌলভি মতিউর রহমান এবং মাতার নাম করিমুন্নেছা। মোর্শেদুলের জন্ম ২৪ মার্চ ১৯৬৬ সালে। তিনি মিরপুর-১৫ এলাকার মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযোদ্ধা পরিবার কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন। মুক্তিযোদ্ধা না হয়েও নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে ভুয়া পরিচয়ে বিগত সরকারের আমলে বিপুল সম্পত্তির মালিক হয়েছেন।
ভুয়া পরিচয়ের তথ্য
১৯৭১ সালের ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত তার বয়স ছিল ৫ বছর ৮ মাস ৭ দিন (সরকারের পরিপত্র অনুযায়ী একজন মুক্তিযোদ্ধার বয়স কমপক্ষে ১২ বছর ০৬ মাস হতে হবে)। তার বিরুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযোদ্ধা পরিবার কল্যাণ সমিতির জমি অমুক্তিযোদ্ধাদের কাছে বিক্রি করে কোটি কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে দুর্নীতে দমন কমিশনে। জানা গেছে, তিনি কমপক্ষে ১০০ জন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাকে সমিতির সদস্যপদ থেকে বঞ্চিত করে প্রতিটি সদস্যপদ ৫ (পাঁচ) লাখ টাকার বিনিময়ে বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে বিক্রি করে বিপুল অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন এবং গাড়ি-বাড়ির মালিক হয়েছেন। তার আত্মীয়স্বজনদের সমিতির সদস্যপদ নামে-বেনামে বরাদ্ধ দেন এবং পরে তাদের নামে বরাদ্ধ পাওয়া ফ্ল্যাটগুলো বর্তমান দামে বিক্রি করে প্রচুর অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন।
এসব অর্থ দিয়েই তিনি কানাডাতে কিনেছেন বিলাস বহুল বাড়ি, যেখানে তার সন্তানরা থাকেন। রাজধানীতেও রয়েছে বেশ কয়েকটি ফ্ল্যাট। এর মধ্যে ধানমন্ডিতে ১টি, সেগুনবাগিচায় ১টি ও রামপুরার বনশ্রীতে রয়েছে ২টি ফ্ল্যাট। মিরপুরের বিজয় রাকিন সিটিতে নামে-বেনামে অন্তত ২০টি ফ্ল্যাট রয়েছে তার। রাকিন টাওয়ার থেকে কিনেছেন ৮ হাজার ৫০০ বর্গফুটের কমার্শিয়াল স্পেস।
গুলশান-২ এ অবস্থিত ‘দ্য রয়েল প্যারাডাইস’র কিছু অংশ ‘দ্য ফাইভ ট্রেডিং লিমিটেড’র নামে ভাড়া নিয়েছিলেন। ভাড়া নেওয়ার পর থেকে ওই অ্যাপার্টমেন্টে অসামাজিক ও অনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনা করতেন তিনি।