টার্স্কফোর্সের প্রতিবেদন
খুনের শিকার সাগর-রুনি শনাক্ত হয়নি ২ ঘাতক

- আপডেট সময় : ০২:৩৭:৪০ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৪ মে ২০২৫ ৭৩ বার পড়া হয়েছে
সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি খুনের শিকার হয়েছেন। তাদেও দুজনকে পৃথক ভাবে পর্যায়ক্রমে হত্যা করেছে ২ ঘাতক। যদিও দীর্ঘদিন বলা হচ্ছিল সাংবাদিক সাগর রুনী আত্মহত্যা করেছে। সম্প্রতি টার্স্কফোর্সের তদন্ত বলেছে, সাগর রুনী দম্পতি আত্মহত্যা করেনি, বরং তারা খুন হয়েছেন। চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকা-ে অংশ নেন ২ জন। তবে ডিএনএ অস্পষ্টটায় ঘাতকদ্বয়কে শনাক্ত করা যাচ্ছে না। বহুল আলোচিত এ হত্যাকা-ের ঘটনায় গঠিত টাস্কফোর্সের তদন্ত প্রতিবেদন প্রাইভেট টিভি চ্যানেলসহ গনমাধ্যমকর্মীদের হাতে এসেছে।
টার্স্কফোর্সের ওই প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, তদন্তে খুনের শিকার সাগর রুনীর মধ্যে দাম্পত্য কলহ, চুরি বা পেশাগত কারণে খুনের তথ্য পায়নি টাস্কফোর্স। কি কারনে দুজন খুনের শিকার হয়েছে তা স্পষ্ট ধারনা দিতে পারেনি টার্স্কফোর্স। ভিসেরা রিপোর্টেও নেশাজাতীয়, চেতনানাশক বা বিষজাতীয় কিছু পাওয়া যায়নি। তাদের রান্না ঘরে থাকা ছুরি ও বটি দিয়ে হত্যা করা হয় তাদের। রক্তাক্ত ও জখম নিয়েও অনেকক্ষণ জীবিত ছিলেন তারা। আগে থেকে বাসায় কেউ ছিল না, আর জোর করে কেউ প্রবেশ করেনি। প্রতিবেদনে এমন তথ্য রয়েছে। ২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারী রাজধানীর তেজগাঁয়ের পশ্চিম রাজাবাজারের বাসায় খুন হন সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনী। এরপ থেকে একাধিক সংস্থাকে তদন্ত পূর্বক প্রতিবেদন দাখিলের দায়িত্ব দেয়া হয়। কিন্তু গত ১৩ বছরে একাধিক তদন্তকারী অফিসার পরিবর্তন ও ১১৮ বার সময় নেয়া হলেও অভিযোগ পত্র দাখিলে ব্যর্থ আইন শৃংখলা বাহিনী।
এরপরই গত বছর ৫ আগষ্ট শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর ২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি রাতের চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকা-ের মামলার তদন্তভার পড়ে টাস্কফোর্সের ওপর। পরে নতুন করে ৭ সাংবাদিকসহ ১২ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে টাস্কফোর্স।
সম্প্রতি জমা দেয়া সংস্থাটির তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাত ৩টা থেকে ৫টার মধ্যে খুন হন সাগর-রুনি। এছাড়া ডিএনএ পরীক্ষার রিপোর্ট পর্যালোচনা করে তদন্ত কমিটি জানায়, প্রথমে সাগর ও পরে ছুরিকাঘাত করা হয় রুনিকে। হত্যার আগে সন্তান মেঘকে নিয়ে একই খাটে শুয়ে ছিলেন তারা।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, হত্যায় সাগর বাধা দিতে পারে- এমন ধারণায় তার হাত-পা বাঁধা হয়। রুনি নারী হিসেবে দুর্বল চিন্তা করে তার হাত-পা বাঁধার প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়নি। ‘ব্ল্যাড পেটার্ন’ পর্যবেক্ষণ করে ধারণা করা হয়, আগে মারা গেছেন রুনি। আর বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ করে সমীকরণ মিলিয়ে টাস্কফোর্স বলছে, সাগরের মৃত্যু হয়েছে পরে।
ঘটনাস্থলে চারজনের ডিএনএ পাওয়া যায়। এরমধ্যে তিন জন পুরুষ ও একজন নারী। যাদের মধ্যে দুইজন সাগর-রুনি, তবে অন্য দু’জনের ডিএনএ কোনোভাবেই শনাক্ত করতে পারেনি টাস্কফোর্স। তাই হত্যার মোটিভ ও খুনে কারা জড়িত সে বিষয়টিও এখন পর্যন্ত সুনির্দিষ্ট করা যায়নি।
গত ২২ এপ্রিল হাইকোর্টে দাখিল করা টাস্কফোর্সের রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, সেদিন (হত্যার রাতের পরদিন সকাল) গোয়েন্দা কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে পৌঁছায় সকাল সাড়ে ১০টা থেকে ১১টার মধ্যে। এর আগে গণমাধ্যম কর্মী ও স্থানীয়দের পায়ের ছাপে ধ্বংস হয়ে যায় আলামত। তবে রান্না ঘরের বারান্দা সাড়ে ১৪ ইঞ্চি ও সাড়ে ৮ ইঞ্চির ভাঙা অংশটি সম্পূর্ণ নতুন ছিল। তা দিয়ে সহজে মানুষ ঢুকতে ও বের হতে পারে। যদিও সেখানকার পূর্ণাঙ্গ ফুটপ্রিন্ট পাওয়া যায়নি।
এদিকে সিআইডির সঙ্গে ডিএনএ বিশ্লেষণ করে টাস্কফোর্স জানায়, একসঙ্গে দুই বা তিনজনের ডিএনএ থাকলে শনাক্ত করা সম্ভব। সংখ্যায় এর বেশি হলে শনাক্ত করা কঠিন। নমুনায় ৫ থেকে ৬ জনের ডিএনএ থাকায় তা শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি।
অন্যদিকে রুনির অফিসিয়াল নথি ঘেঁটেও তার সঙ্গে কারও শত্রুতার প্রমাণ পায়নি টাস্কফোর্স। আলোচিত বিবিয়ানা গ্যাসফিল্ড নিয়ে রিপোর্টের জেরে এ হত্যারও কোনো তথ্য মেলেনি। সাগরের মালিকানাধীন এনার্জি বাংলা ডটকমে কোনো সংবাদের জেরে, পেশাগত কারণেও এই হত্যাকা-ের যোগসূত্র মেলেনি।
এছাড়া পারিবারিক কলহের কারণে একজনকে হত্যার পর অন্যজনের আত্মহত্যার তথ্য-প্রমাণও পায়নি টাস্কফোর্স। ক্রাইমসিন পর্যালোচনা, আলামত পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে টাস্কফোর্স জানিয়েছে, দুজনকেই হত্যা করা হয়েছে, আত্মহত্যার প্রমাণ মেলেনি।
উল্লেখ্য, ২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি রাতে রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারের ভাড়া বাসায় খুন হন সাংবাদিক দম্পতি সাগর ও রুনি। ওই সময় বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল মাছরাঙা টিভিতে কর্মরত ছিলেন সাগর। আর রুনি এটিএন বাংলায় কর্মরত ছিলেন। আলোচিত এ হত্যাকা-ের পর রুনির ভাই নওশের আলম বাদী হয়ে শেরেবাংলা নগর থানায় মামলা করেন।