ইলিশ বাংলাদেশের, রমরমা ব্যবসা ভারতের
- আপডেট সময় : ০৯:২৯:১৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ৫৬ বার পড়া হয়েছে
পশ্চিমবঙ্গের বাজারে ১ কেজির ওপরের ইলিশ পাইকারি ১৮০০ রুপি। খুচরা বাজারে প্রতিকেজি ইলিশ ২০০০ রুপি থেকে ২২০০ রুপি, আর আর ৭০০ গ্রাম থেকে ১ কেজি সাইজের বাংলাদেশের ইলিশ প্রতিকেজি বিক্রি ১৪০০ থেকে ১৬০০ রুপি।
বাংলাদেশের ইলিশ কলকাতার বাজারে
আমিনুল হক ভূইয়া
ভারতীয় বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গের নাগরিকদের ভাষায়, তৃষ্ণার্ত চাতক পাখির মতো অপেক্ষারত ছিলেন তারা। সেই প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে বাংলাদেশের ইলিশ এলো পশ্চিমবঙ্গের বাজারে। সেই সঙ্গে দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান হলো। এবারে চুটিয়ে ব্যবসার পালা। প্রতিকেজি ইলিশ মাত্র ১২০০ টাকা (৭৯২ রুপি) কেজি দরে রপ্তানি করেছে। যখন বাংরাদেশের বাজারে কেজি ওজনের ইলিশের দাম ১৬০০ থেকে ১৮০০ টাকা। সেই ইলিশই ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বাজারে ২২০০ রুপি কেজি।
পূজার মৌসুমে শুক্রবার (২৭ সেপ্টেম্বর) কলকাতায় বাজারে ওঠলো ৫০ টন বাংলাদেশের ইলিশ। আগামী ১২ অক্টোবর পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে ধাপে ধাপে ২ হাজার ৪২০ মেট্রিক টন ইলিশ রপ্তানির কথা রয়েছে। প্রথমদিন পশ্চিমবঙ্গের বাজারে ইলিশের দাম চড়া থাকলেও চাহিদাও রয়েছে প্রচুর।
পশ্চিমবঙ্গের বাসাতের বাসিন্দা প্রফেসর ও গবেষক শেখ কামাল উদ্দিন উচ্ছ্বসিত কণ্ঠেই জানালেন, শনিবার বাজারে যাবেন। তাঁর অপর শিক্ষক বন্ধু দু’জনেই বারাসাত মাছের আড়তে বাংলাদেশের ইলিশের জন্য অর্ডার করে রেখেছেন। আগের সপ্তাহে এবারে ইলিশ রপ্তানি হবে না, এই খবরে মর্মাহত হয়েছিলেন এই শিক্ষক।
বাচিক শিল্পী চন্দ্রিকা বন্দোপাধ্যায় জানালেন, কেজি সাইজের ইলিশ ২০০০ রুপির নিচে নয়। তবে, বাংলাদেশের ইলিশ কলকাতা তথা পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন বাজারে পাওয়া যাবে, এটাই পূজার মৌসুমে বড় খবর।
শনিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকেই কলকাতা ও অন্যান্য বাজারে মিলবে বাংলাদেশের চকচকে রূপালী ইলিশ। অনেক ক্রেতা সময় গুণছেন। রাত পোহালেই যাবেন বাজারে। কিনবেন বাংলাদেশের ইলিশ। পাইকারি বাজারে ৭০০ গ্রাম থেকে ১ কেজি সাইজের বাংলাদেশের ইলিশ প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৪০০ থেকে ১ হাজার ৬০০ রুপি।
১ কেজির ওপরের ইলিশ পাইকারি বাজারে দর উঠেছে ১ হাজার ৮০০ রুপির মতো। খুচরা বাজারে প্রতিকেজি বিক্রি হবে ২ হাজার রুপি থেকে ২ হাজার ২০০ রুপির মতো।
এমনটিই জানালেন, চন্দ্রিকা বন্দোপাধ্যায়। শনিবার সকালে বাজাওে যাবেন। কিনবেন বাংলাদেশের ইলিশ।
এর আগে বৃহস্পতিবার (২৬ সেপ্টেম্বর) বেনাপোল হয়ে ভারতের পেট্রাপোল সীমান্ত দিয়ে ভারতে যায় ৫০ টন বাংলাদেশের ইলিশের চালান। সেখান থেকে শুক্রবার সকালে সেসব ইলিশ পৌঁছে যায় হাওড়ার পাইকারি মাছ বাজারে। ইলিশ আসায় কিছুটা দাম কমেছে ভারতীয় মাছের বেচাকেনায়। সবারই নজর এখন বাংলাদেশের ইলিশের দিকে। তবে প্রথম ধাপে বাজারে চাহিদা থাকায় দাম আপাতত সাধারণের নাগালের বাইরে।
তা সত্ত্বেও প্রথম দিনেই উপচে পড়েছিল খুচরা মাছ বিক্রেতাদের ভিড়। সবাই নিজেদের সাধ্যমতো সংগ্রহ করছে বাংলাদেশের ইলিশ। ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে বাংলাদেশের ইলিশ আসার খবর পেতেই হাওড়ার পাইকারি মাছ বাজারে আসেন দমদমের অমৃত বাজারের বিক্রেতা তপন দাস। তিনি ৫০০ কেজি ইলিশ আগেই কিনে ফেলেছেন। তিনি আরও কিছুটা কিনবেন বলে বাজার ঘুরছেন। তার অভিমত, পূজা অব্দি কে অপেক্ষা করবে। গতবার পরে এসে ঠকেছি। গত বছর প্রথম দিকে বাজার দেখে গিয়েছিলাম। পড়ে পূজার ঠিক আগে ইলিশ তুলতে এসে শুনলাম মাছ আসা বন্ধ হয়ে গেছে।
প্রসঙ্গত, গত বছর ৩ হাজার ৯৫০ মেট্রিক টনের অনুমতি থাকলেও ভারতে এসেছে ৫৮৭ মেট্রিক টন। ফলে পূজার মুখে বহু খুচরো মাছ বিক্রেতা ফিরে গেছে। তাই এবার আর সময় নষ্ট না করে তপনের মতো বহু মাছ ব্যবসায়ী নিজেদের সাধ্যমতো সংগ্রহ করছে বাংলাদেশের ইলিশ।
ভারতের ফিস ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সৈয়দ আনোয়ার মাকসুদ জানিয়েছেন, প্রথমদিন বাংলাদেশের ইলিশের দাম বেশি। ফের আগামী মঙ্গলবার গাড়ি ঢুকবে। তারপর ধাপে ধাপে ঢুকতে থাকবে ইলিশ বহনকারী গাড়িগুলো। তখন কিছুটা সাধারণের নাগালের মধ্যে থাকতে পারে।
আগামী ২ অক্টোবর মহালয়ার মধ্য দিয়ে কলকাতায় শুরু হচ্ছে পূজার মৌসুম। ১০ অক্টোবর বিজয়া দশমী। এরপর লক্ষ্মীপূজা, কালীপূজা ইত্যাদি। অপরদিকে আগামী ১২ অক্টোবর পর্যন্ত ভারতে ইলিশ যাওয়ার অনুমতি দিয়েছে বাংলাদেশ। ফলে সব মিলিয়ে পূজায় মৌসুমে বাংলাদেশের ইলিশের স্বাদ নিতে এখন প্রস্তুত হচ্ছেন বঙ্গবাসী