ফের সীমান্ত হত্যা : বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশি কিশোর নিহত
- আপডেট সময় : ০৪:৩৬:৩৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ৫৮ বার পড়া হয়েছে
ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার ধনতালা ইউনিয়নের কান্তিভিটা সীমান্ত এলাকায় ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলিতে ফের জয়ন্ত কুমার সিংহ (১৫) নামের এক বাংলাদেশি কিশোর নিহত হয়েছে। কিশোরের বাবাসহ দুই বাংলাদেশি আহত হয়েছেন।
রোববার (৮ সেপ্টেম্বর) দিবাগ রাত তিনটার দিকে ধনতালা বিজিবি সীমান্তের মেইন পিলার ৩৯৩ এর পাশ দিয়ে ভারতে অনুপ্রবেশকালে ভারতীয় ডিংগাপাড়া বিএসএফ গুলি চালালে জয়ন্ত নামের এক কিশোর ভারতের অভ্যন্তরে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়। সে বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার ফকির ভিটা গ্রামের মহাদেব কুমার সিংহের ছেলে। মহাদেব কুমার সিংহসহ বেশ কয়েকজন ভারতে যাবার সময় এঘটনা ঘটে।
আহতরা বাংলাদেশে পালিয়ে এসে রংপুরে গোপনে একটি ক্লিনিকে চিকিৎসাধীন রয়েছেন বলে জানা গেছে। ফকির ভিটা বেলপুকুর গ্রামের মহাদেব কুমার সিংহ ও নিটালডোবা গ্রামের দরবার আলীর ছেলে বাংঠু মোহাম্মাদ।
স্থানীয় লোকজনের বরাত দিয়ে বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার ধনতলা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান সমর কুমার চট্টোপাধ্যায় সংবাদমাধ্যমকে জানান, রোববার দিবাগত রাত তিনটার দিকে ধনতলা সীমান্ত এলাকার ৩৯৩ নম্বর মেইন পিলার এলাকা দিয়ে একদল লোক স্থানীয় দালালের সহযোগিতায় ভারতে যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন।
ভারতের কাঁটাতারের বেড়া পার হওয়ার সময় বিএসএফের ডিঙ্গাপাড়া ক্যাম্পের সদস্যরা তাদের লক্ষ্য করে গুলি ছোঁড়লে জয়ন্ত ঘটনাস্থলে মারা যায়। বিএসএফের সদস্যরা তার লাশ নিয়ে যান। গুলিতে জয়ন্তের বাবা মহাদেব কুমার সিংহ ও দরবার আলীও আহত হন। তারা দুজন বাংলাদেশ সীমান্তে চলে আসেন। পরে স্বজনেরা তাদের হাসপাতালে নিয়ে যান।
সমর কুমার চট্টোপাধ্যায় আরও বলেন, সীমান্তের কাঁটাতার পেরিয়ে যাওয়ার সময় ভারতের অভ্যন্তরে ১৬ জন বাংলাদেশি বিএসএফ সদস্যের হাতে আটক হয়েছেন বলেও জানতে পেরেছি।
বালিয়াডাঙ্গী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফিরোজ কবীর সংবাদমাধ্যমকে জানান, বালিয়াডাঙ্গীর ধনতলা সীমান্ত এলাকা দিয়ে বাংলাদেশের একদল লোক ভারতের ওপারে যাওয়ার সময় বিএসএফ সদস্যরা গুলি চালান। এতে এক কিশোর নিহত ও দুজন ব্যক্তি আহত হয়েছেন।
এ বিষয়ে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) ঠাকুরগাঁও ৫০ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল তানজির আহমদ বলেন, সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে হতাহতের খবর শুনেছি। এটি যাচাই করতে আমাদের টিম কাজ করছে। এ রকম ঘটনা ঘটলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ঠাকুরগাঁও ৫০ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. তানজির আহমদ বলেন, এমন একটি ঘটনা ঘটেছে শুনেছি। আমরা অনুসন্ধান চালাচ্ছি।
এর আগে রোববার (১ সেপ্টেম্বর) রাতে মৌলভীবাজারের কুলাউড়া সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী স্বর্ণা দাস (১৬) নিহত হয়। প্রায় ৪৫ ঘণ্টা পর মঙ্গলবার (৩ সেপ্টেম্বর) রাতে চাতলাপুর চেকপোস্ট দিয়ে তার মরদেহ হস্তান্তর করে বিএসএফ।
নিহত স্বর্ণা মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার পশ্চিম জুড়ী ইউনিয়নের কালনীগড় গ্রামের পরেন্দ্র দাসের মেয়ে।
পরেন্দ্র দাস জানান, ভারতের ত্রিপুরায় তার বড় ছেলে থাকেন। তাকে দেখার জন্য ১০ হাজার টাকার বিনিময়ে স্থানীয় দুই দালাল ধরে স্বর্ণা ও তার মা রোববার রাতে লালারচক সীমান্ত দিয়ে ভারতে যাওয়ার চেষ্টা করেন। কাঁটাতারের বেড়ার কাছে পৌঁছালে বিএসএফ তাদের লক্ষ্য করে গুলি করে। এতে স্বর্ণা ঘটনাস্থলেই মারা যায়।
স্বর্ণার মাসহ বেশ কয়েকজন আহত হন। সোমবার বিকেল ৪টা পর্যন্ত মরদেহ ঘটনাস্থলেই পড়ে ছিল। পরে রাতে বিজিবির একটি দল বাড়িতে এসে জানায় স্বর্ণার মরদেহ বিএসএফ নিয়ে গেছে।
এছাড়া ১১ আগস্ট রাতে চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার ওয়াহেদপুর সীমান্তের ওপারে ভারতীয় অংশে বিএসএফের গুলিতে মো. আব্দুল্লাহ (৩৫) নামে এক বাংলাদেশি যুবক নিহত হন।