হাসিনা সরকারের নৃশংস হত্যাকান্ডের তদন্তে ঢাকায় জাতিসংঘ প্রতিনিধি দল
- আপডেট সময় : ১২:২৮:০২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২২ অগাস্ট ২০২৪ ৪৬ বার পড়া হয়েছে
জুলাইয়ে বাংলাদেশে হাসিনা সরকারের নৃশংস হত্যাকান্ডের তদন্তে ঢাকায় পৌছেছেন জাতিসংঘ প্রতিনিধি দল।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান দমনে শেখ হাসিনা সরকারের নৃশংসতা বিশেষ করে নির্বিচারে গুলি, হত্যা এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলো তদন্ত করতে জাতিসংঘের তিন সদস্যের টিম ঢাকা পৌঁছেন।
প্রতিনিধি দলের প্রধান রোরি মুঙ্গোভেন বুধবার মধ্যরাতে ঢাকায় পৌঁছায় দলটি। অগ্রবর্তী কারিগরি দলটি বাংলাদেশে প্রায় এক সপ্তাহের সফর করার কথা রয়েছে।
পরবর্তী আরও একটি দল ঢাকায় আসার কথা।
প্রতিনিধি দলটি বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) সকালে যাবেন পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ে। সেখানে বৈঠক করার কথা রয়েছে রাষ্ট্রদূত রিয়াজ হামিদুল্লাহর সঙ্গে। তিনি বর্তমানে মন্ত্রণালয়ে সহকারী পররাষ্ট্র সচিব হিসেবে কাজ করছেন।
প্রাথমিক তথ্যানুসন্ধানের বিষয়ে আলোচনার জন্য জাতিসংঘের হাইকমিশনার দপ্তরের এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের প্রধান রোরি মুঙ্গোভেনের নেতৃত্বে তিন সদস্যের দল ঢাকায় এসে অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা করে কাজের ধারা, প্রক্রিয়া, শর্তসহ সব বিষয় চূড়ান্ত করবে।
জেনেভা থেকে জানা গেছে, জাতিসংঘ যখন বাংলাদেশের কোটা সংস্কার আন্দোলন নিয়ে তদন্ত করতে যাচ্ছে, তখন কিছু আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা বিষয়টি জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদের আলোচনায় তোলার জন্য চাপ দিচ্ছে। কূটনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে জাতিসংঘের তদন্তকে সম্মান জানিয়ে এই সময় মানবাধিকার পরিষদে আলোচনা তোলা সমীচীন নয়।
জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের দফতর গত সপ্তাহে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক আন্দোলন নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এতে বলা হয়েছে, কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অপ্রয়োজনীয় এবং মাত্রাতিরিক্ত বলপ্রয়োগ করেছে।
জাতিসংঘের দলটি ঢাকায় বিভিন্ন অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা করবে। তারা কাজের ধারা, প্রক্রিয়া এবং শর্ত চূড়ান্ত করবে। তবে এটি নিশ্চিত নয় যে, এই দলই মূল তথ্যানুসন্ধানী দল।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন এর আগে জানিয়েছিলেন, আন্দোলনে হতাহতের ঘটনা তদন্তের স্বার্থে জাতিসংঘকে সহায়তা করতে প্রস্তুত অন্তর্বর্তী সরকার। সরকারের চাওয়া একটা নিরপেক্ষ তদন্ত হবে।
এ সরকারের অবস্থান খুবই পরিষ্কার ও স্বচ্ছ। যারা এ অপরাধগুলো করেছে এবং যারা হুকুম দিয়েছে তাদের অবশ্যই বিচারের সম্মুখীন করতে হবে এবং এ কাজে জাতিসংঘ সহায়তা করুক, এটা নিয়ে আমাদের নীতিগত সিদ্ধান্ত আছে।
ঢাকায় জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়ক গোয়েন লুইস জানিয়েছেন, জাতিসংঘের কারিগরি বিশেষজ্ঞ দল এসে প্রাথমিক তদন্তের কাজ করবে। তাদের ম্যান্ডেট (রাজনীতি) কী হবে, কীভাবে তারা সরকারের সঙ্গে কাজ করবেন, এ বিষয়ে আরও আলোচনা হবে।
প্রতিনিধিদল প্রাথমিক তদন্তের কাজের পাশাপাশি তাদের টার্মস অব রেফারেন্স (কাজের পরিধি), কাজের সময় সীমাসহ নানা বিষয়ে আলোচনা করে তা চূড়ান্ত করবে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ৬৩০ জনেরও বেশি ছাত্র-জনতা নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ। এসব লোক নিহত হওয়ার ঘটনায় নিরপেক্ষ তদন্ত করবে জাতিসংঘ।
এর আগে ২০ আগস্ট সম্প্রতি বাংলাদেশে ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালে ব্যাপক সহিংসতা, প্রাণহানি এবং হতাহতের ঘটনায় জড়িতদের বিচার চায় জাতিসংঘ। একইসঙ্গে সহিংসতা, প্রাণহানি এবং মানবিক ও রাজনৈতিক অধিকার লঙ্ঘনের সঙ্গে জড়িতদের জবাবদিহির মুখোমুখি করা দরকার বলেও মন্তব্য করেছে সংস্থাটি।
স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (২০ আগস্ট) জাতিসংঘের নিয়মিত ব্রিফিংয়ে বাংলাদেশ বিষয়ে দেওয়া বিবৃতিতে এবং সাংবাদিকের করা প্রশ্নের জবাবে মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক এসব মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের নতুন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে অভিনন্দন জানিয়ে চিঠি লিখেছেন মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। চিঠিতে বাংলাদেশে শান্তি ফিরিয়ে আনা এবং জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনের প্রচেষ্টাকে স্বাগত জানিয়েছেন তিনি।