রাজধানীর বাউনিয়াবাদে চাচা-ভাতিজার দাপট: হত্যা, চাঁদাবাজি ও ভয়ে স্তব্ধ মানুষ

- আপডেট সময় : ০৮:২৫:৫৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৬ জুন ২০২৫ ২৪৬ বার পড়া হয়েছে
রাজধানীর উত্তর প্রান্তের বাউনিয়াবাড় এলাকা এখন সন্ত্রাসের জনপদে পরিনত হয়েছে। বাউনিয়াবাদ এলাকায় সম্প্রতি হত্যা, খুন খারাবি, চাঁদাবাজি, ডাকাতি ছিনতাই ধর্ষনের মতো ঘটনা প্রতিনিয়ত ঘটছে। আর এ সকল ঘটনার মুলহোতা হচ্ছে স্থানীয় আশরাফ আলী গাজী ও তার ভাতিজা আসলাম আরী গাজী। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বাউনিয়াবাদ এলাকায় এখন চাচা-ভাতিজা গ্রুপের অথ্যাচারে অতিষ্ট এলাকাবাসী। চাচা-ভাতিজা গ্রুপে প্রায় ১৫ থেকে ২০ জন সদস্য রয়েছে। এদের বিরুদ্ধে একাধিক হত্যা, ডাকাতি চাঁদাবাজি ছিনতাই মামলা রয়েছে। রহস্যজনক কারণে আইন শৃংখলা বাহিনী তাদের গ্রেফতার করছে না। এলাকাবাসির অভিযোগ, রাজধানীর পল্লবীর বাউনিয়াবাদে সন্ত্রাসী চাচা ভাতিজা আসলাম-আশরাফের বাহিনী এলাকায় রামরাজত্ব কায়েম করেছে। হত্যা চাঁদাবাজী ডাকাতি এবং ভুমি দস্যুতা ছিনতাই করছে এরা। এদেও ভয়ে কেউ মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছে না।“রাজধানীর বাউনিয়াবাদে চাচা-ভাতিজার দাপট: হত্যা, চাঁদাবাজি ও ভয়ে স্তব্ধ মানুষ”
অনুসন্ধানে জানা যায়, রাজধানীর পল্লবী এলাকায় বাউনিয়াবাদে সন্ত্রাসী আসলামের চাচা আশরাফ আলী গাজী হত্যা ও চাঁদাবাজীর রামরাজত্ব কায়েম করেছে। বাউনিয়াবাদ এলাকায় এই চাচা-ভাতিজার হত্যাকান্ডের ঘটনা ও চাঁদাবাজীতে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে এলাকাবাসী। শুধু তাই নয়, এদের বিরুদ্ধে স্থানীয় ফারজানা বেগম অপহরনের পর নির্যাতনে হত্যা, মো, আরবদুর রহিম হত্যায় সরাসরি জড়িত রয়েছে। তাদেও বিরুদ্ধে এই দুটি হত্যাকা-ের ঘটনায় মামলা রয়েছে। তারপরও পুলিশ তাদেও গ্রেফতার করছে না। এসব ঘটনার তথ্য জেনেও আইন প্রয়োগ কারী সংস্থা রয়েছে নিরব। এতে করে হত্যা মামলার বাদী ও স্থানীয় এলাকাবাসী নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে।
জানা যায়, পল্লবীসহ মিরপুর এলাকায় দীর্ঘ দিনযাবত সন্ত্রাসী কর্মকান্ড চালিয়ে আসছে আসলাম গাজী। এছাড়াও ফারজানা বেগম নামের এক গৃহবধু এনজিওকর্মীকে হত্যার নারকীয় ঘটনায় জড়িত রয়েছে সে। আশরাফের নির্দেশেই ভাতিজা আসলাম গাজী সম্প্রতি সাভার থেকে ওই গর্ভবতী ও এক সন্তানের জননী ফরজানাকে প্রথমে অপহরণ ও পরে পল্লবীর বাউনিয়াবাদ এলাকার একটি বাসায় আটকে রেখে দুই দিন পাশবিক নির্যাতন চালিয়ে তাকে হত্যা করে আসলামের সহযোগী সন্ত্রাসীরা। ওই গৃহবধূকে পরিকল্পিতভাবে অপহরণ ও আসলাম গাজীর নির্দেশে তার সন্ত্রাসী বাহিনীর সহযোগীরা নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করে। ঘটনার দুই দিন পর ফারজানার মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। বিষয়টি জানাজানি হতেই পুরো এলাকায় চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে। এদিকে, নিহত ফরজানার পরিবারের পক্ষ থেকে পল্লবী থানায় একটি হত্যা মামলা দায়েরের প্রস্তুতি নেয়া হলেও ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে মামলা না নিতে স্থানীয় প্রভাবশালী ও একটি মহল পুলিশের কাছে তদবির চালায়। এছাড়াও মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে পুলিশের কতিপয় দুর্নীতিগ্রস্ত সদস্য মামলাটি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করে।
এদিকে আসলাম গাজী ও তার চাচা আশরাফ গাজী এবং তাদেও সহযোগী আরও ১২ থেকে ১৩ জন সন্ত্রাসী স্থানীয় আবদুর রহিমকে প্রকাশ্যে পিটিয়ে হত্যা করে। স্থানীয় জমি নিয়ে বিরোধের জের ধরে চাচা ভাতিজার হাতে রহিম খুন হয়েছে। এ দুটি হত্যাকা-ের ঘটনায় পৃথক দুটি মামলায় আশরাফ ও আসলামকে আসামি করা হলেও পুলিশ তাদের গ্রেফতার করছে না। এ মামলার পর তারা আরো বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। তারা চাঁদাবাজি ও ভুমি দখলবাজি করছে।
স্থানীয় লোকজনের অভিযোগ, সন্ত্রাসী আসলাম গাজী বহু বছরযাবত স্থানীয় এলাকায় বিভিন্ন অপরাধের সাথে জড়িত। তার বিরুদ্ধে রয়েছে চাঁদাবাজি, জমি দখল, অস্ত্র ও মাদক ব্যবসা এবং হত্যাকান্ডের অভিযোগ। গৃহবধূ ফরজানা হত্যাকা-ের ঘটনা তার অপরাধচক্রের ভয়াবহতা প্রকাশ করেছে। এই নির্মম হত্যাকা-ের বিচার যেন দ্রুত সম্পন্ন হয়। আশরাফ গাজী ও ভাতিজা আসলাম গাজীর মত সন্ত্রাসীরা যেন কোনো প্রভাবশালীর ছত্রছায়ায় থেকে পার পেতে না পারে তার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় সাধারণ মানুষ।
এদিকে গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে ফারজানা হত্যা মামলার বাদী নিহতের ভাই মো. রকি অভিযোগে বলেন, তার বোন একটি বেসরকারি এনজিওতে চাকুরি করতো। ওই এনজিওতে গ্রাহকরা টাকা রাখলে বেশি টাকা পাওয়া যায় বলে স্থানীয় লোকজন তার বোনের এনজিওতে টাকা সঞ্চয় করতে থাকে। এনজিওটির লেনদেন ভাল থাকায় মানুষ সেখানেই টাকা গচ্ছিত রাখেন। সম্প্রতি ওই এনজিওতে সমস্যা দেখা দেয়ায় স্থানীয় আমানতকারীরা তাদের টাকার জন্য ফারজানাকে চাপ দিয়ে আসছিল। এরই জের ধরে ৩০ মে রাতে সন্ত্রাসী রনি, মামুন, মুক্তার, সম্রাট, আক্তার হোসেন, মোকসেদ আলী, ওমর, জনি, সোহেল বেপারী, আসলাম গাজী, জয়, শাকিল, লাল চাঁন ও রাকিবসহ আরও ১০/১২ জন তার মা রাবেয়া বেগমকে ১১ নম্বর সেকশনের কমিউনিটি সেন্টারে নিয়ে আটক রেখে নির্যাতন চালায়। পরবর্তীতে ৩১ মে তার বোন ফারজানাকে সাভার থেকে তুলে এনে আটক রেখে তার উপর পাশবিক নির্যাতন চালায়। নির্যাতন ও মারধরের এক পর্যায়ে ফারজানার মৃত্যু ঘটে। পরবর্তীতে গত ৪ জুন বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে ফারজানার মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। তখন দেখা যায় তার সারা শরীরে নির্যাতনের ছাপ। বিষয়টি এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে। পরবর্তীতে এ ঘটনায় তিনি পল্লবী থানায় মামলা করতে গেলে আসামী পক্ষের তদ্বিরের কারণে প্রথমে মামলা নিতে পুলিশ গড়িমসি করলেও পরবর্তীতে মামলা গ্রহণ করে (মামলা নং- ১৫, তারিখ: ০৫/০৬/২০২৫ ইং)। রকি আরও জানান, বর্তমানে হত্যাকান্ডের ঘটনায় মামলা করা হলেও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা আসামীদের গ্রেপ্তারে টালবাহানা করছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
স্থানীয় অভিযোগ রয়েছে, রাজধানীর বৃহত্তর মিরপুর ও পল্লবী এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী হিসেবে আসলাম গাজী পরিচিত। পল্লবীর চাঞ্চল্যকর রহিম হত্যার সাথে প্রত্যক্ষভাবে সে জড়িত থাকলেও চার্জশীটে তার নাম না থাকায় এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। দীর্ঘ দিনযাবত আসলাম মিরপুর এলাকায় জমি-বাড়ি দখল, চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ ও সন্ত্রাসী কর্মকা- চালিয়ে আসছে। এছাড়াও পুলিশের কিছু অসাধু কর্মকর্তার ছত্র-ছায়ায় সে মিরপুরে গড়ে তুলেছে অপরাধ সাম্রাজ্য।
আরও জানা যায়, ফ্যাসিষ্ট হাসিনা সরকারের আওয়ামীলীগের দোসর হচ্ছে চাচা আশরাফ আলী গাজী এবং তার ভাতিজা আসলাম আলী গাজী। গেল সরকারের আমলে এলাকায় চাচা ভাতিজা তাসের রাজত্ব কায়েম করেছিল। আওয়ামী সরকারের পতনের পরই এরা বোল পাল্টে এলাকাকে সন্ত্রাসের জনপদ বানিয়েছে। আসলাম বর্তমানে একাধিক বাণিজ্যিক ভবনের মালিক হলেও তার অধিকাংশ সম্পত্তি অবৈধভাবে দখল করা। কোনো ব্যক্তি যদি জমি বা ফ্ল্যাট বিক্রি করতে চায় তাহলে আসলামকে তারা চাঁদা দিতে বাধ্য হয়। তানা হলে তার বাহিনীর সদস্যরা যে কোনো মূহুর্তে ওই বাড়িতে হামলার ঘটনা ঘটাতে পারে। শুধু চাঁদাবাজিই নয়, মাদক ও অবৈধ অস্ত্র ব্যবসার সঙ্গেও সে জড়িত। তার সন্ত্রাসী বাহিনীর সদস্যরা নিয়মিত পল্লবী ও মিরপুর এলাকায় মাদক কারবার করে। তাদের প্রাণনাশের হুমকি ও হামলার আশঙ্কায় আসলামের বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলতে সাহস পায় না। এলাকাবাসী এ সকল চিহ্নিত সন্ত্রাসিদের দ্রুত গ্রেফতার ও সুষ্ঠ তদন্ত এবং বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল এবং জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন করেছে। পাশাপাশি এলাকায় স্বস্তি আনতে অবিলম্বে আসলামসহ তার সন্ত্রাসী বাহিনীর সদস্যদের গ্রেপ্তার এবং বিচারের আওতায় আনতে এলাকাবাসী জোড় দাবি জানিয়েছেন।