বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশন (পিএসসি) এর চাহিদার প্রেক্ষিতে আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল স্বাক্ষরিত আইন মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে পদোন্নতিতে আইনগত বাধা নেই মতামতের আলোকে সহকারী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার এর ৮৬টি পদে এবং প্রশাসনিক কর্মকর্তা এর ১৭টি পদে ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪ খ্রি. বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশন (পিএসসি) পদোন্নতির জন্য সুপারিশ করে। গত ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪ প্রশাসনিক কর্মকর্তা পদে পদায়ন দেয়া হলেও অদ্যাবধি কোন ধরনের কারন ছাড়া সহকারী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার পদে পদায়ন দেয় নাই শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ। ইতিমধ্যে পদোন্নতি বঞ্চিত হয়ে সুপারিশপ্রাপ্ত একজন মারাও গেছেন, দুইজন অবসরে এবং অনেকেই অবসরে যাচ্ছেন।

জানা যায়, ২০২১ সালে এই পদোন্নতি কার্যক্রমের শুরু থেকে মাউশি অধিদপ্তরের সাঁটলিপিকার কাম কম্পিউটার অপারেটর অহিদুর রহমান এবং নোয়াখালীর সেনবাগ সরকারি কলেজের প্রধান সহকারী সৈয়দ লিয়াকত আলী, উক্ত দুই পদে আবেদন করার যোগ্যতা না থাকার পরও তারা রাজনৈতিক প্রভাব, উচ্চপদস্থ বিভিন্ন ব্যাক্তিকে সম্পৃক্ত করে এবং হাইকোর্টে রিট মামলা ও প্রশাসনিক ট্রাইবুনালে মামলা করে পদোন্নতি কার্যক্রমের প্রতিটি ধাপে ধাপে বাধাগ্রস্থ করে আসছে। সহকারী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার পদে পদোন্নতির আবেদনের জন্য ন্যুনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা বিএডসহ ২য় শ্রেনীর স্নাতক/স্নাতকোত্তর ডিগ্রি যা অহিদুর রহমানের নেই, তার শিক্ষাগত যোগ্যতা এইচএসসি এবং সৈয়দ লিয়াকত আলীর ফিডার পদের যোগ্যতা এখনো পূর্ণ হয়নি।

মাউশি অধিদপ্তর চুড়ান্ত জ্যেষ্ঠতা তালিকা ঘোষনার সাথে ৩০ কর্মদিবসের মধ্যে আপত্তি নিষ্পত্তির আবেদন না করে পিএসসিসহ বিভিন্ন দফতরে উল্লেখিত দুটি পদের পদোন্নতির বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে পিএসসি মাউশি বিভাগ এর মাধ্যমে মাউশি অধিদপ্তর হতে “কোন নিয়মের ব্যত্যয় ঘটেনি” এবং “অভিযোগ ভিত্তিহীন” মর্মে প্রতিবেদন গ্রহন করে। এরপরও অহিদুর রহমান ও লিয়াকত আলী আদালতে মামলা দায়ের করেন। মামলার বিষয়ে পিএসসি এর চাহিদার প্রেক্ষিতে আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল স্বাক্ষরিত আইন মন্ত্রণালয়ের আইনগত প্রতিবেদন পদোন্নতিতে আইনগত বাধা নেই মতামত বলে মতামত দেন। এরপরই সহকারী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার এর ৮৬টি পদে এবং প্রশাসনিক কর্মকর্তা এর ১৭টি পদে গত বছরের ০৪ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশন (পিএসসি) পদোন্নতির জন্য সুপারিশ করে। এর পর ২৩ সেপ্টেম্বর প্রশাসনিক কর্মকর্তা পদে পদায়ন দেয়া হলেও এখন পর্যন্ত কারন ছাড়াই সহকারী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার পদে পদায়ন দেয়নি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ। প্রশাসনিক কর্মকর্তা পদে পদায়ন করা হলেও সহকারী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার পদে পদায়ন না দিয়ে পূনরায় আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত চাওয়া হলে আইন মন্ত্রণালয় পূর্বের মতামত বহাল রেখে মতামত প্রদান করে। আইন মন্ত্রণালয়ের উদ্ধৃতি উল্লেখ করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আইন শাখার স্মারক নং-৩৭.০০.০০০০.০৯৩.৫৫.০০২.২০২২.২৮ তারিখঃ ২৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৫ খ্রি. মোতাবেক “পদোন্নতি প্রদানের ক্ষেত্রে আইনগত বাধা নেই” মর্মে আইন মন্ত্রণালয়ের মতামতের সাথে একমত পোষণ করে পত্র দেয়। তারপরও মাউশি বিভাগ সহকারী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার পদে পদায়ন না দিয়ে ১৭ মার্চ ২০২৫ খ্রীঃ তারিখে অতিরিক্ত সচিব বেগম বদরুন নাহার এর সভাপতিত্বে সভা করে একটি রেজুলেশন প্রকাশ করে। রেজুলেশনের প্রথম অণুচ্ছেদে পদোন্নতি প্রস্তাবের বিরুদ্ধে অহিদুর রহমান ও সৈয়দ লিয়াকত আলীর লিখিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে মাউশি বিভাগের নির্দেশে মাউশি অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কোন নিয়মের ব্যত্যয় ঘটেনি এবং অভিযোগ ভিত্তিহীন মর্মে মতামতের কথা উল্লেখ করেন । ৩নং অণুচ্ছেদে তারা দুইজনেই মামলা করেন। মামলার বিষয়ে পিএসসির চাহিদার আলোকে আইন মন্ত্রণালয় হতে দুটি পদের জন্য পদোন্নতি প্রদানের ক্ষেত্রে আইনগত বাধা নেই মর্মে মতামত প্রাপ্তির পর পিএসসি কর্তৃক প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও সহকারী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার পদে পদোন্নতির জন্য সুপারিশ করা হয়েছে মর্মে উল্লেখ করা হয। দুটি এটি মামলার বিষয়ে পদসংরক্ষণ করে পদোন্নতি প্রদানের জন্য মহামান্য আদালতের নির্দেশনার বিষয় উল্লেখ করা হয।

৫নং অণুচ্ছেদে মহাপরিচালকের মতামত, আদালত এবং আইন মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত বিবেচনায় না এনে পুনরায় এখতিয়ার বর্হিভূত অভিযোগকারী লিয়াকত আলীর অভিযোগ গ্রহন করা হয় এবং ১১ নং অনুচ্ছেদে জ্যেষ্ঠতা তালিকা পূনরায় যাচাই বাছাই করে প্রেরণ করার জন্য মাউশি অধিদপ্তরকে নির্দেশ প্রদান করা হয়। মাউশি অধিদপ্তর সাত কর্মদিবসের মধ্যে তথ্য সংগ্রহ করলেও অদ্যবধি মাউশি বিভাগে তথ্য প্রেরন করেননি। পদোন্নতির জন্য সুপারিশ প্রাপ্তদের অভিযোগ, মাউশি অধিদপ্তর থেকে মাউশি বিভাগে তথ্যগুলো যেতে কতদিন লাগবে? আর দুইজন কর্মচারীর যাদের কাম্য যোগ্যতা না থাকা স্বত্বেও একের পর এক এখতিয়ার বর্হিভূত মিথ্যা সুনির্দিষ্ট নয় এমন অভিযোগ গ্রহণ করে কত বছর যাবত পদোন্নতির কালক্ষেপণ করা হবে।

সুপারিশ প্রাপ্তদের মধ্যে পদোন্নতি বঞ্চিত হয়ে যারা অবসরে গিয়েছেন এবং যাচ্ছেন, যারা মারা গিয়েছেন, তাদের প্রতি কর্তৃপক্ষের কোন দায় আছে কিনা? পিএসসি এর একই সুপারিশের প্রশাসনিক কর্মকর্তা পদে পদায়ন দেয়া হলেও সহকারী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার পদে কেন দেয়া হচ্ছে না। মহাপরিচালক মহোদয়ের এর সুপারিশ, আইন মন্ত্রণালয়ের সুপারিশ, একটি পদ সংরক্ষণ করে অন্যগুলো পদোন্নতি দেয়ার আদালতের নির্দেশনা উপেক্ষো করে একই ব্যক্তির লিখিত অভিযোগ বার বার কিভাবে গ্রহণ করে যাচাই বাছাইয়ের জন্য অধিদপ্তরে প্রেরণ করা হলো। তাছাড়া যে দুইজন এখতিয়ার বর্হিভূত অভিযোগ করেছেন, সরকারি কাজে বাধা সৃষ্টি করেছেন, যে সমস্ত কর্মকর্তা এ ধরনের অনৈতিক কাজের সাথে জড়িত রয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে সরকারী কর্মচারী শৃংখলা ও আপীল বিধিমালা এবং অসচারনের দায়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহন করার দাবি জানান পিএসসি সুপারিশপ্রাপ্ত পদোন্নতি বঞ্চিত ভূক্তভোগিরা। সুনিদিষ্ট নয় এবং এখতিয়ার বর্হিভূত অভিযোগগুলোর বিষয়ে পিএসসি এর চাহিদার আলোকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় মাউশি অধিদপ্তর হতে “অভিযোগ ভিত্তিহীন,” প্রতিবেদন, অতপর আদালতে চলমান মামলা সমুহের বিষয়ে পিএসসি এর চাহিদার প্রেক্ষিতে আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল স্বাক্ষরিত আইন মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে “পদোন্নতিতে আইনগত বাধা নেই” পুনরায় শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের চাহিদার আলোকে আইন মন্ত্রনালয়ের পুনরায় প্রতিবেদন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আইন শাখার মতামত, মামলার বিষয়ে মহামান্য আদালতের নির্দেশনা কোন বৈধ প্রকৃয়া বা মতামতই অনুসরন না করে একই অভিযোগকারীদের অভিযোগ প্রতিটি ধাপে, ধাপে গ্রহণ করে পিএসসি সুপারিশ প্রাপ্তদের তালিকা পুনরায় হালনাগাদ করার জন্য অধিদপ্তরে প্রেরণ এবং অধিদপ্তর সাত কর্মদিবেসের মধ্যে তথ্য সংগ্রহের পর অদ্যাবধি মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ না করা বিষয়গেুলো ইথিকস বা নৈতিকতার মানদন্ডে বিবেচনা করা প্রয়োজন। পিএসসি এর একই সুপারিশের প্রশাসনিক কর্মকর্তা পদে পদোন্নতি দেয়া হলেও অটঝঊঙ পদে না দেয়ায় দ্বিচারিতা ও নৈতিকতার প্রশ্ন উঠেছে পিএসসি সুপারিশ প্রাপ্ত বঞ্চিত ভূক্তভোগী কর্মচারীগণ পিএসসি সুপারিশের তারিখ হতে সহকারী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার পদে পদোন্নতির পদায়ন আদেশ জারি করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সমীপে আকুতি জানাচ্ছেন।